শুধু জার্মানিতে ভোট হলে এর্দোয়ানই জিততেন

রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান এই প্রথম তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সরাসরি জয়ের মুখ দেখলেন না৷ ২৮শে মে তাঁকে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিচদারুলুর বিরুদ্ধে আবার ভোটের লড়াইয়ে নামতে হবে৷ তবে নির্বাচনের সার্বিক ফলাফলের বিচারে ৫০ শতাংশের মাত্রা পেরোতে না পারলেও বিদেশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের বিপুল সমর্থন আদায় করতে পেরেঠেন এর্দোয়ান৷ বিশেষ করে জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের ভোটের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ তাঁর ঝুলিতেই গেছে বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আন্দালু দাবি করছে৷ অর্থাৎ সেই দাবি অনুযায়ী তিনি প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়েছেন৷ বিরোধী শিবিরের নেতা কিলিচদারুলু পেয়েছেন মাত্র ৩২ শতাংশ৷ তবে তুরস্কের নির্বাচন কমিশন এখনো সে বিষয়ে কোনো হিসেব তুলে ধরে নি৷ উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে এর্দোয়ান সরকার বিদেশে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের ভোটাধিকার চালু করেছেন৷

চূড়ান্ত পরিসংখ্যান শেষ পর্যন্ত যাই হোক না কেন, জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কি নাগরিকদের মধ্যে এর্দোয়ানের প্রতি বিপুল সমর্থন নিয়ে কার্যত কোনো সংশয় নেই৷ ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি জার্মানি থেকে ৬৪ শতাংশের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন৷ অন্য কোনো দেশে এত বেশি তুর্কি নাগরিক বাস করেন না৷

জার্মানির এসেন শহরে তুরস্ক গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিনিধি ইয়ুনুস উলুসো সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এর্দোয়ানের প্রতি জার্মানিতে এমন সমর্থনের একটা ঐতিহাসিক কারণ ব্যাখ্যা করেছেন৷ তিনি মনে করিয়ে দেয়েছেন, যে জার্মানিতে আগত অতিথি-শ্রমিকদের সিংহভাগই ধর্মীয় রক্ষণশীল আনাতোলিয়ার মানুষ৷ জার্মানিতে এক তুর্কি সংগঠনের সভাপতি, গ্যোকাই সোফুয়োলু বলেন, গত কয়েক বছরে এর্দোয়ান জার্মানিতে সমর্থকদের এক মজবুত কাঠামো গড়ে তুলেছেন৷ তিনি নিজেকে কার্যত জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের অভিভাবকের মতো ভূমিকায় তুলে ধরেছেন৷ সোফুয়োলুর মতে, এমনকি তরুণ প্রজন্মও বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রতিবাদ হিসেবে এর্দোয়ানের মতে ‘শক্তিশালী' নেতার প্রতি ঝুঁকছেন৷

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এর্দোয়ানের জয়ের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠায় জার্মানির রাজনীতি জগতে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ দলমতনির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতারা তুরস্কে নির্বাচনি প্রচারে বিরোধীদের ন্যায্য সুযোগের অভাবের সমালোচনা করেছেন৷ অনেকে নির্বাচনের দিনে অনিয়মেরও অভিযোগ করেছেন৷ তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান কৃষিমন্ত্রী চেম ওজদেমির বলেন, শেষ পর্যন্ত কিলিচদারুলু জিতে গেলেও তিনি চরম বিভাজিত এক রাষ্ট্র পরিচলনার দায়িত্ব পাবেন৷ মনে রাখতে হবে, সংসদ নির্বাচনে রক্ষণশীল শিবির অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে৷ তুরস্ক গণতন্ত্র ও আইনি শাসনের পথে ফিরে আসবে বলে ইরানি বংশোদ্ভূত জার্মানির সবুজ দলের প্রধান ওমিদ নুরিপুর আশা প্রকাশ করেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত যে প্রার্থীই তুরস্কের রাশ হাতে পান না কেন, জার্মানিকে সেই সরকাররে সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে বলে বেশিরভাগ রাজনীতিক মন্তব্য করেছেন৷

এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি)