শীতে বিপাকে মানুষ, ৬৪ জনের মৃত্যু
১৪ জানুয়ারি ২০২০এমন অবস্থায় আগামী সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহে সারাদেশে আবারও তাপমাত্রা কমে যেতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর৷
ডিসেম্বর থেকেই বেশ কয়েকবার তীব্র শীতের কবলে পড়েছে বাংলাদেশ৷ নিম্নবিত্ত মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে চরম কষ্টের মধ্যে পড়েছেন৷ একই সঙ্গে শীত ও শীতজনিত রোগে মৃত্যুও বাড়ছে৷ যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই শিশু৷
সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কম্বল বিতরণ করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম৷ অন্যদিকে বেসরকারি উদ্যোগেও গরম কাপড় এবং অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ তেমন নয় বলে স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে৷
দেশের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগেই এই শীতে নিম্নবিত্ত মানুষ সবচেয়ে কষ্টে আছেন৷ পঞ্চগড়ের স্থানীয় সাংবাদিক আনিস প্রধান জানান, গরম কাপড়ের অভাবের পাশাপাশি নিম্নবিত্ত মানুষ চরম আর্থিক কষ্টে আছে৷ যারা দিনমজুর তারা কাজ পাচ্ছেন না৷ অন্যদিকে জেলা প্রশাসন শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে জেলা বা উপজেলা শহরের আশপাশে৷ প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ তা পাচ্ছেন না৷ অথচ তাদেরই প্রয়োজন বেশি৷
পঞ্চগড় জেলায় মোট উপজেলা পাঁচটি৷ জনসংখ্যা প্রায় ১১ লাখ৷ আর পঞ্চগড় সদরেরই জনসংখ্যা দুই লাখের বেশি৷ জেলার এডিসি (সাধারণ) আব্দুল মান্নান জানান, তারা এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের মতো কম্বল বিতরণ করেছেন৷ এরমধ্যে বেসরকারিভাবে পাওয়া গেছে সাত থেকে আট হাজার৷ প্রধানত পঞ্চগড় সদরেই এসব কম্বল বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানা যায় তার কথায়৷ তিনি জানান এর বাইরে আরো কিছু শীতবস্ত্র ও শিশু খাদ্য বিতরণের কথাও জানান তিনি৷ এজন্য সরকারের বরাদ্দ ছিল এ পর্যন্ত এক লাখ টাকা৷
পঞ্চগড়ে কত শীতবস্ত্র প্রয়োজন এবং যা পাওয়া গেছে তা পর্যাপ্ত কিনা জানতে চাইলে আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘কত প্রয়োজন তা আমরা বলতে পারছি না৷ তবে যা পাওয়া যাচ্ছে তা বিতরণ করছি৷'' দিনমজুরদের কাজের অভাব নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এরকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই৷ তবে আমরা খোঁজ নেব৷ এরকম লোক পাওয়া গেলে কাজের ব্যবস্থা করা হবে৷''
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের হিসেবে এ পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় প্রায় ৩২ লাখ কম্বল দেয়া হয়েছে বিতরণের জন্য৷ বিভিন্ন জেলায় কম্বল কিনে শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ আর উত্তরের আট জেলায় ১৬ হাজার কার্টন শুকনো খাবার ও শিশু খাদ্য পাঠানো হয়েছে৷
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন৷ তিনি থাইল্যান্ড থেকে টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমাদের পর্যাপ্ত গরম কাপড় ও ত্রাণ সামগ্রী আছে৷ আমরা চাহিদামত বরাদ্দ দিচ্ছি৷ শুকনা খাবারের জন্য নগদ টাকাও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ শুধু সরকার নয়, আওয়ামী লীগও কাজ করছে৷ সরকার ও দল মিলিয়ে আমরা শীতার্ত মানুষকে সহায়তা করছি৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘উত্তরাঞ্চলে কাজের সংকট সম্পর্কে আমাদের কেউ জানায়নি৷ আমরা জেনে ব্যবস্থা নেব৷''
৬৪ জনের মৃত্যু
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত শীত ও শীতজনিত রোগে মোট ৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ আর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় চার লাখ মানুষ৷ তাদের অধিকাংশই শিশু৷
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী গত এক নভেম্বর পর্যন্ত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে ২০ জন, ডায়রিয়ায় চার জন এবং শীতজনিত অন্যান্য রোগে মারা গেছেন ৩০ জন৷ এইসব রোগের মধ্যে আছে জন্ডিস, আমাশয়, জ্বর প্রভৃতি৷ তবে এককভাবে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি প্রায় দেড় লাখ৷ আর গত ২৪ ঘন্টায় শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে যারা মারা গেছেন তাদের ৮০ ভাগই শিশু৷ এরপর আছেন বয়স্করা৷
আবার শৈত্যপ্রবাহ
ঢাকায় মঙ্গলবার শীত একটু কমে এলেও রংপুর ও রাজশাহীর ১১ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে৷ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে আগামী সপ্তাহের শেষে আবার তীব্র শীত এবং শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে সারাদেশে৷
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে রংপুর এবং রাজশাহী বিভাগের বেশ কিছু অঞ্চলের উপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে৷ বুধবার তাপমাত্রা বাড়তে পারে৷ তবে আগামী সপ্তাহে সারাদেশে তাপমাত্রা আবার কমে যাবার আশঙ্কা আছে৷
মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় সাত দশমিক দুই ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড৷ ঢাকায় মঙ্গলবার ১২ দশমিক সাত৷ সোমবার ছিল ১২ দশমিক এক ডিগ্রি৷