শীতের সঙ্গে লড়াই
দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এত ভালো যে জার্মানিতে কোনো মানুষকে নিজে নিজে ওষুধ খেতে হয় না৷ তবে অন্য অনেক দেশের মানুষদের মতো জার্মানরাও নিজের চিকিৎসা নিজে ঠিকই করে৷ বিশেষ করে শীত এলে তো কথাই নেই!
ফোটানো বিয়ার
বিয়ারকে ফুটিয়ে পান করলে কি সর্দি-কাশি কমে যেতে পারে? কয়েক প্রজন্ম ধরে জার্মান মায়েরা কিন্তু এ কথা বিশ্বাস করে আসছেন৷ বিশ্বাসটা যে একেবারে অমূলক তা-ও অবশ্য নয়৷ জাপানের মদ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘সাপ্পোরো’ এ নিয়ে গবেষণাও করেছে৷ সে গবেষণা থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বিয়ারে সত্যিই অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান থাকে৷ অবশ্য অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদানকে খুব সক্রিয় করতে নাকি অন্তত ২০ লিটার গরম বিয়ার পান করতে হয়!
ভেজা কাপড় আর ঈষদুষ্ণ পানি...
কোনো জার্মানকে যদি পাশে ভেজা কাপড় রেখে শুয়ে থাকতে দেখেন তাহলে ধরে নিতে পারেনয, মানুষটি জ্বরে ভুগছে৷ তখন হয়ত খুব বেশি ভুগছেন না, হয়ত ভেজা কাপড়ের পট্টি দিয়ে জ্বর থেকে অনেকটা মুক্তিও পেয়েছেন৷ জ্বর হলে জার্মান ডাক্তাররা সাধারণত কপাল এবং পায়ের জোড়াগুলো ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর পরামর্শ দেন৷ ঈষদুষ্ণ পানি ব্যবহার করেও তাপমাত্রা কমানোর কথা বলা হয় এ দেশে৷
স্কার্ফেই আছে সব ইঙ্গিত
জার্মানিতে স্কার্ফ বা মাফলার ব্যবহারের চল খুব বেশি৷ যখন কেউ ঢিলেঢালাভাবে সেটা গলায় জড়িয়ে রাখেন, তাহলে বুঝতে হবে ওটা ফ্যাশন৷ কিন্তু গলায় ভালো করে সেটা জড়ানো থাকলে তা কিন্তু শীত কিংবা অসুখ থেকে বাঁচার ব্যবস্থা৷ স্কার্ফর আরেকটা উপকারীতাও আছে৷ যাঁদের গায়ে ছোপ ছোপ দাগ পড়েছে, তাঁদের কাছে ছোপ ঢাকার হাতিয়ার হিসেবেও স্কার্ফের খুব কদর৷
গরম পানিতে গোসল
ডেইজি ফুল থেকে তৈরি এক ধরণের সুগন্ধি ওষুধ আর গরম পানি পেলে জার্মানরা নিশ্চিন্ত৷ ঠান্ডা লাগার লক্ষণ দেখা দিলেই জার্মানির বেশির ভাগ মানুষ ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি ক্যামোমিল আর গরম পানিতে ভরা বাথটাবের জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন৷
জ্বর, এসো!
অনেক জার্মান বিশ্বাস করেন, বাষ্পস্নান করলে জ্বর জ্বর ভাব হবে এবং জ্বর হলে শরীরের উত্তাপ বাড়ে বলে ভাইরাস মরে যাবে৷ এ কারণে ‘সাউনা’-য় গিয়ে উদোম শরীরে গরম বাষ্প লাগিয়ে অনেকে আশা করেন যে, দেহের সব ভাইরাস মরে গেছে৷ কিন্তু জীবাণুবিজ্ঞানী অর্টউইন অ্যাডামস জানালেন, এটা সম্পূর্ণ অমূলক চিন্তা৷ তাঁর মতে, বাষ্পস্নানে শরীরের উত্তাপ বাড়ে না, বাড়লেও তাতে ভাইরাস মরতো না, ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে মুক্তি পাওয়া যেত না৷
দুধ-মধুর মহৌষধ
খুসখুসে কাশি হলে জার্মানরা গরম দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পান করেন৷ পান করে উপকারও পান৷ যুগ যুগ ধরে এই বিশ্বাস থেকে দুধ-মধুকে মহৌষধ মেনে আসছেন জার্মানরা৷ কাশি হলে দুধ পান করে লাভ নেই, তবে মধু কিন্তু সত্যিই উপকারী৷ যুক্তরাষ্ট্রে এ নিয়ে দু’টি গবেষণা হয়েছে৷ ২০০৭ এবং ২০১২ সালের সেই দুই গবেষণাতেই দেখা গেছে কাশিতে ভুগছে এমন শিশুদের রাতে একটু মধু খাওয়ালে সকাল নাগাদ কাশিটা বেশ কমে যায়৷
পাজি পেঁয়াজ
পেঁয়াজও নাকি ভাইরাস মেরে খতম করে দেয়! অনেক জার্মানের সেরকমই বিশ্বাস৷ তাই জার্মানিতে পেঁয়াজের জুস বেশ জনপ্রিয়৷ অনেকে আবার সর্দি-কাশি কমানোর আশায় আদার চায়ে পেঁয়াজের রস মিশিয়েও পান করে৷ কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, পেঁয়াজে আসলে সেরকম কোনো গুণ নেই৷ পেঁয়াজের রস বা জুস তো সে উপকার করেই না, বরং বমিভাব বাড়ায়৷