1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শীতের ঢাকায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উষ্ণতা

২৯ জানুয়ারি ২০২৪

জানুয়ারির শেষটায় ঢাকার মানুষ জবুথবু তীব্র শীতে। কোনো কোনো সন্ধ্যায় বৃষ্টিও নেমেছে। তবু জাতীয় জাদুঘর, শিল্পকলা একাডেমি, আঁলিয়স ফ্রসেঁজে ভরা ছিল অন্যরকম উষ্ণতায়।

https://p.dw.com/p/4bnLl
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২২তম আসর
নয়দিনব্যাপী দ্বাবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৭৪টি দেশের ২৫২টি ছবি প্রদর্শিত হয়ছবি: Partha Sanjay

দেশের সিনেমাপ্রেমী তরুণ-তরুণীসহ বিদেশি অতিথিরা দারুণ উপভোগ করেছেন এবারের আয়োজন। শুরু থেকে দ্যুতি ছড়ানো উৎসব শেষ দিকে রীতিমতো মুখর।

‘চিলড্রেন অব হ্যাভেন' খ্যাত ইরানি নির্মাতা মাজিদ মাজিদি'র ছবি দিয়ে শুরু করে সমাপণী দিন পর্যন্ত তারকারা ছড়িয়েছেন দ্যুতি। এসেছিলেন ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, গুণী নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর। ছিলেন গায়ক, নির্মাতা ও অভিনেতা অঞ্জন দত্ত। চলতি সময়ে টলিউড চলচ্চিত্রের অন্যতম ক্রেজ স্বস্তিকা মুখার্জিও এসেছিলেন বাংলাদেশের এই চলচ্চিত্র উৎসবে।

তবে সব ছাপিয়ে দেশি-ভিনদেশি সবার কাছে উৎসবের অন্যতম প্রাণ মনে হয়েছে নান্দনিক আড়াইশ'র বেশি ছবির হাতছানি।

এই উৎসবের শ্লোগানই যে, ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ'।

উৎসবের পেছনের কথা : মিউনিখ থেকে ঢাকা

১৯৯২ সাল থেকে যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের। প্রথম আয়োজনের শিরোনামে ‘আন্তর্জাতিক' শব্দটিই ছিল না। স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ওমনি ট্রান্স-এর কর্ণধার নিউ মেন্ডিসের কাছ থেকে পাওয়া তিন লাখ টাকায় হয়েছিল সে উৎসব। সেবার উৎসবের নাম ছিল ‘ওমনি ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল'।

চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের স্বপ্নটার জন্ম জার্মানির মিউনিখে। সে গল্পই বলছিলেন, উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। বলছিলেন, ‘‘১৯৮৯, ৯০, ৯১-এ সময়টায় আমার বেশিরভাগ চলচ্চিত্র (প্রদর্শনীর) আয়োজন করতাম জার্মান কালচারাল সেন্টারে। তখনকার পরিচালক মিসেস শ্লেসনার একদিন আমাকে বললেন, চলচ্চিত্র নিয়ে তোমার যে আগ্রহ দেখছি, আমার মনে হয় তুমি অন্যদের চেয়ে আলাদা। তুমি কি জার্মানিতে কোনো চলচ্চিত্র উৎসবে যেতে চাও? আমি বললাম, কেন নয়?''

আহমেদ মুজতবা জামালের তখন পাসপোর্টের মেয়াদও ছিল না। মাত্রই শেষ হয়েছে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব। জার্মান কালচারাল সেন্টারের পরিচালক জানতে চাইলেন, ‘‘ সমানে মিউনিখ উৎসব। তুমি যাবে?''

মুজতবা জামাল মিউনিখ গেলেন। একটা ইউরোপিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এত ব্যাপক আয়োজন। কল্পনার চেয়েও সুন্দর মনে হলো তার। অনেক মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় হলো! আদুর গোপালকৃষ্ণন, ডেরেক ম্যালকম...।

স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজে পেলেন মুজতবা জামাল। ঢাকায় যদি পারতেন এমন আয়োজন করতে!

‘নির্দিষ্ট ভেন্যু পেলে এই উৎসব এশিয়ার সেরা হবে’

প্রথম আয়োজন ১৯৯২ সালে। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর। পাঁচদিনের আয়োজন। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের ১৫ বছর পূর্তিও ঐ বছর। জার্মান কালচারাল সেন্টার, আঁলিয়স ফ্রঁসেজ, অ্যামেরিকান সেন্টার, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার, ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘিরে উৎসব আয়োজন। ছবিগুলোও নেয়া হয়েছিল দূতাবাস থেকে। উৎসব হয়েছিল তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে।

দ্বিতীয় আসর থেকে আন্তর্জাতিক

দেশের বাইরে থেকে ছবি আনা শুরু দ্বিতীয় আসর থেকে। ১৬ মিলিমিটার। ৩৫ মিলিমিটার। সিএণ্ডএফের মাধ্যমে ছবিগুলো আনতে হয়েছে। সেই উৎসবে অতিথি হয়ে এসেছিলেন ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক আদুর গোপালকৃষ্ণন। হয়েছিল তাঁর ছবির ‘রেট্রোস্পেকটিভ'।

পরের বছর দ্বিতীয় আয়োজনটি হয়েছিল ২৩ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর। নয়দিনের। এরপর থেকে উৎসব সময়সীমা নয়দিনেই বাঁধা থাকলো।

১৯৯২ থেকে '৯৫ পর্যন্ত নিয়মিতই হয়েছে উৎসব। এরপর ৯৬ পেরিয়ে ৯৭। রমজান থাকায় উৎসব হয় জানুয়ারিতে। এরমাঝেই শর্ট ফিল্ম ফোরাম থেকে আয়োজকদের অনুরোধ করা হলো, একবার শর্ট ফিল্ম ফোরাম পরের বছর যেন ঢাকা উৎসব আয়োজন হয়। কিন্তু সে বোঝাপড়া টিকলো না।এরমাঝেই ২০০০ থেকে উৎসবে যোগ হলো প্রতিযোগিতা।

উৎসবের বাজেট

২০১৬ সাল থেকে উৎসব আয়োজিত হচ্ছে ফি বছর। এবার ২২ তম আসরে বাজেট চার কোটি টাকারও বেশি ধরা হয়েছে। ভিনদেশি অতিথিদের থাকা ও খাওয়ার খরচ ফেস্টিভ্যাল কর্তৃপক্ষ বহন করে। বিশেষ অতিথি ও বিচারকদের বিমান ভাড়াও উৎসব কর্তৃপক্ষ দিয়ে থাকে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে আছে দোলাচল। এবছর সরকার ত্রিশ লাখ টাকা নগদ দিয়েছে। আর ত্রিশ লাখ টাকার ‘সুবিধা' দিয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে অর্থ মন্ত্রণালয় এই অর্থ সুবিধা দিয়েছে। উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, ‘ফেস্টিভ্যালের জন্য অর্থ দিতে সরকারের কোনো খাত নেই। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে অনেকটা উদার ছিলেন। তাঁর সময় ফেস্টিভ্যাল এক কোটি টাকার অর্থ-সুবিধাও পেয়েছে।‘

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব  কতটা আন্তর্জাতিক?

নবম দিনে সমাপণী আয়োজনের আগে উৎসব ভেন্যু জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে ফিলিপাইন্স থেকে আসা চলচ্চিত্র নির্মাতা লুইসিতো লাগদামিও'র সাথে কথা হচ্ছিল। তার কথায় প্রকাশ পাচ্ছিল মুগ্ধতা। বিশেষ করে সিনেমার নির্বাচনে তিনি আনন্দিত। ক্রোয়েশিয়ার নির্মাতা আনজা স্ট্রেলেকের কাছ থেকেও পাওয়া গেল একইরকম প্রতিক্রিয়া।

তবে সংবাদ সম্মেলনে চীনা নির্মাতারা স্ক্রিনিং ঘিরে অসুন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। এমনকি আয়োজনের ভেন্যুগুলোর বিন্যাস নিয়েও তারা অখুশী। উৎসবের ছবি ‘মুনলাইট ওয়ারিয়রে'র নির্মাতা হঙ ইঙ এমন অসন্তোষের কতা জানালেও প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া চলচ্চিত্রগুলোর নান্দনিকতার প্রশংসা করেছেন নির্মাতা লাফাল গিয়াল।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতা কৌশিক শঙ্কর দাশ অবশ্য মনে করেন উৎসবের আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এখনো কিছু খামতি রয়েছে, ‘‘উৎসবের আবহ আন্তর্জাতিক নয়। দর্শক আগ্রহের কথা বাদই দিলাম, প্রযুক্তিগতভাবেও উৎসবটা এগোয়নি। প্রতিবছর নানা দেশ থেকে চলচ্চিত্র আসে। ছবি আসে। কিন্তু তা কতটা আন্তর্জাতিক, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আরো একটি বিষয়, একটি উৎসব ৩২ বছর ধরে হচ্ছে, তাকে কেন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে?''

প্রায় একই মত সূর্য দীঘল বাড়ি-খ্যাত নির্মাতা মসিহউদ্দিন শাকেরের। তবে তিনি আয়োজনের ধারবাহিকতার প্রশংসা করেছেন।

উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল উৎসবের খামতির প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘আমরা যদি কলকাতার নন্দনের মতো একটা উৎসব ভেন্যু পাই, আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিতে পারি, ঢাকা ফেস্টিভ্যাল এশিয়ার সেরা হবে।''

এবারের সেরা

ঢাকা উৎসবের এবারের আসরে বাংলাদেশ প্যানোরামা বিভাগে পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি হিসেবে সেরা হয়েছে পান্থ প্রসাদ নির্মিত ‘সাবিত্রী'। এশিয়ান বিভাগে সেরা ছবি চীনের তরুণ নির্মাতা কুইয়াও সিক্সুই পরিচালিত ‘দ্য কর্ড অব লাইফ'। এতে আলঝেইমারে আক্রান্ত নারীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন অভিনেত্রী বাদেমা। এই বিভাগে অংশ নিয়েছিল কলকাতার নন্দিত সংগীতশিল্পী, অভিনেতা ও নির্মাতা অঞ্জন দত্তের ছবি ‘চালচিত্র এখন'। এই ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন অঞ্জন। এশিয়ান চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগের সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন শ্রীলঙ্কান সিনেমা ‘হুইসপারিং মাউন্টেইনস' নির্মাতা জগথ মনুয়ারা।

স্পেশাল জুরি মেনশন সিনেমার পুরস্কার পেয়েছে কাজাখস্তানের সিনেমা ‘হ্যাপিনেস'; এটি পরিচালনা করেছেন আসকর ইউবেবায়েব। স্পেশাল জুরি মেনশন অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন ঢাকার তরুণ অভিনেত্রী আফরিন খানম। নির্মাতা অ্যাঞ্জেলস রেলিস পরিচালিত ‘মাইটি আফরিন-ইন দ্য টাইম অব ফ্লাডস' সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। বাংলাদেশ, ফ্রান্স ও গ্রিসের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে সিনেমাটি।

বাংলাদেশ প্যানোরামার ‘ট্যালেন্ট' বিভাগে সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা হিসেবে ফিপ্রেসি পুরস্কার জিতেছে বৈশাখী সমাদ্দারের ‘লায়লা'। প্রথম রানারআপ হয়েছে শুভাশীষ সিনহার ‘ইনাফি' ও দ্বিতীয় রানারআপ হয়েছে জিয়াউল হক রাজুর ‘অন্তহীন পথে'।

অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে শিশুতোষ সিনেমা বিভাগে বাদল রহমান পুরস্কার পেয়েছে ভারতীয় নির্মাতা বিপুল শর্মার ‘প্রভাস'।

অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত শ্যাম বেনেগালের সিনেমা ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার'। স্পেশাল অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ভারতীয় পরিচালক অভিজিৎ শ্রীদাসের ‘বিজয়ার পরে'।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য