সংকটে জার্মান বেকারি
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪রাত দুইটার আগে থেকে ব্যাকারিতে মালকোলম ও তার সহকর্মীরা কাজ শুরু করে৷ রুটির ময়দা মেশানো, মণ্ড মাখা, রুটি বানানো, বেক করা – এ সব ছয়টার আগেই শেষ হয়ে যায়৷ পেঙ্কার্ট বেকারির চার শাখায় সরবরাহ করা হয় এসব রুটি৷ কাজ শেষ হয় ১০টার মধ্যে৷ মালকোলম জানায়, ‘‘এই মেশিনে এক রাতে আমি ৩,০০০ বান রুটি তৈরি করি৷ সব মিলিয়ে সপ্তাহে প্রায় ১৩ হাজার বান রুটি বানানো হয়৷''
জার্মানিতে ৪০০ বিভিন্ন ধরনের রুটি বেক করা হয়৷ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তা অনন্য৷ রুটি প্রস্তুতকারীদের সৃজনশীলতার কোনো অভাব নেই৷ মালকোলমও নানা রকমের রুটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আনন্দ পায়৷
আদতে মিডিয়াতে কাজ করার আকাঙ্খা ছিল ১৯ বছরের এই তরুণের৷ কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় তা সম্ভব হয়নি৷
বেকারিতে প্রশিক্ষণের কাজটির দিকে হঠাৎ করেই তার নজর যায়৷ মালকোলন-এর ভাষায়, ‘‘আমি রান্না করতে পছন্দ করি, খাবার নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি, তবে বেকারি কেন নয়? সময়ের সাথে সাথে বেক করা আমার প্রিয় কাজ হয়ে পড়েছে৷''
তবে অনুরাগ ছাড়া এই পেশায় কাজ করা সহজ নয়৷ বিশেষ করে রাতের কাজ অনেককে আতঙ্কিত করে৷ তাই গত ছয় বছরে বেকারির শিক্ষানবশির সংখ্যা ৩৬ হাজার থেকে কমে ২৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে৷
সপ্তাহে দু-একবার বৃত্তিমূলক স্কুলে যেতে হয় তাকে৷ সেখানে অঙ্ক ও জার্মান ভাষায় ক্লাস করতে হয়৷ এছাড়া ময়দার মণ্ড মাখার কৌশল ও স্বাস্থ্যসম্মত নিয়ম কানুন শিখতে হয় তাকে৷ তবে মালকোলম হাতে কলমে কাজ করতে পছন্দ করে৷
যে দিন ক্লাস থাকে, সেদিন কিছুটা বেশি সময় ঘুমাতে পারে সে৷ তবে এটা সুবিধাজনক বলে মনে করে না এই তরুণ৷ এতে ঘুমের রুটিন উল্টোপাল্টা হয়ে যায়৷ এছাড়া বন্ধুবান্ধবের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে তার৷ আগে ১০ জন বন্ধু থাকলেও এখন রয়েছে মাত্র দু'জন৷ ‘‘তারা যখন কাজে যায়, তখন আমি ঘুমিয়ে থাকি৷ তাদের কাজ শেষ হয়ে গেলে আমার ঘুম ভাঙে৷''
তবে শুধু রাতের কাজই নয়, অন্যান্য পেশার তুলনায় বেকারির শিক্ষানবিশের বেতন খুব কম৷ তাই বেশিরভাগ শিক্ষানবিশ মা-বাবার সঙ্গে বসবাস করেন৷ বড় বড় বেকারিতে ছুটির দিনে কাজ করলে উপরি পাওয়া যায়৷ কিন্তু ছোট বেকারিগুলিতে সেটা সম্ভব নয়৷ কিন্তু মালকোলম ছোট পারিবারিক বেকারিতে কাজ শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ তার ভাষায়, ‘‘আমার ধারণা বড় বেকারির চেয়ে এখানেই আমি হাতের কাজটা ভালোভাবে শিখতে পারবো৷''
বনের কাছে পেঙ্কার্ট বেকারিটি ৫০ বছর ধরে ব্যবসা চালাচ্ছে৷ সস্তা পণ্যের বেকারিতে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় মালিক বোডো পেঙ্কার্টকে প্রতিযোগীদের সঙ্গে রীতিমত লড়াই করে টিকে থাকতে হচ্ছে৷
আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও গুণগত মান দিয়ে তাঁর পণ্যকে তুলে ধরতে চান পেঙ্কার্ট৷ রুটি, বান রুটি থেকে শুরু করে কেক পর্যন্ত৷ বছরে খুব বেশি হলে দু'জন শিক্ষানবিশকে প্রশিক্ষণ দেন তিনি৷
মালকোলমকে পেয়ে খুব খুশি এই বেকার মাস্টার৷ সে শুধু সৎ ও পরিশ্রমীই নয়, প্রতিভাবানও৷ মালকোলমের সামনে বিশাল লক্ষ্য: প্রশিক্ষণ ও মাস্টার পরীক্ষা শেষ করে ফ্রান্সে পাড়ি দিতে চায় সে৷ সহায়তা পাওয়া যাবে মায়ের কাছ থেকে৷ তার কথায়, ‘‘আমার ইচ্ছা মাকে সঙ্গে নিয়ে ফ্রান্সে গিয়ে কাজ করা৷ সেখানে মা কনফেকশনারির ভার নেবেন এবং আমি বেকারির দায়িত্ব নেবো৷