সংবাদভাষ্য
১০ জুন ২০১৫সৌদ আরবের আদালতের ব্লগার রাইফ বাদাউয়ির বিরুদ্ধে শাস্তি বলবৎ রাখার সিদ্ধান্তটি প্রত্যাশিত৷ তার মানে, আগামী শুক্রবার বাদাউয়িকে আবার দোররা মারা হতে পারে৷ আদালত রায়ের মাধ্যমে যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে, তা আসলে বিচারক এবং সে দেশের ক্ষমতাসীন অভিজাতদের মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ৷সৌদি আরবের উচ্চবিত্ত সমাজ ওয়াহাবি ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং সে কারণে তারা অসহিষ্ণু, এবং পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গির৷ সেখানে ক্ষমতাসীনরা তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে থাকে, যদিও ইসলামে সহনশীলতা এবং ক্ষমা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷
বোঝাই যাচ্ছে, সৌদি আরব সময়ের সাথে সাথে এগিয়ে যেতে অক্ষম৷ নিজের দেশে তারা শরিয়া আইনের নিষ্ঠুর প্রয়োগ করছে৷ এর মাধ্যমে এ বছরও ইতিমধ্যে বেশ কিছু মানুষকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়েছে৷ তারা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সহ্য করে না, মানবাধিকার প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন করে এবং সমাজে নারীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে৷ পুলিশও সেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামি দ্বারা প্রভাবিত৷ সৌদি আরবে মেয়েদের গাড়ি চালানোর অধিকারও দেয়া হয় না!
দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের জন্য বাদাউয়ি এ কারণেই বিপজ্জনক৷ তিনি রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা রাখা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়েছেন৷ বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে এসব দাবি আদায় হয়, কিন্তু সৌদি আরবের এ সবেরও অর্থ ধর্ম অবমাননা৷
বাদাউয়ি এ পর্যন্ত পাশ্চাত্যে কিছুটা সমর্থন পেলেও আরব বিশ্বে তেমন একটা পাননি৷ এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার৷ যে শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে, তা পুরোপুরি কার্যকর করা হলে বাদাউয়ির মৃত্যুও হতে পারে৷ তা যদি হয়, তাহলে পশ্চিমের তথাকথিত এক মিত্র দেশে এক ‘জুডিশিয়াল মার্ডার' বা বিচারিক হত্যাকাণ্ডই হবে সেটা৷ একই সঙ্গে সৌদি আরব আবার নিজেকে সিরিয়া এবং ইরাকে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস বিরোধী যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি হিসেবেও তুলে ধরছে৷ তবে পশ্চিমা দেশগুলোর মনে হয় এমন মিত্রের দরকার নেই৷
সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্ট্রম বাদাউয়ির বিরুদ্ধের রায়কে বলেছেন ‘মধ্যযুগীয়'৷ তিনি একদম ঠিক বলেছেন৷ তবে এই (মধ্যযুগীয়) শব্দটা সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন অভিজাতদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রেও একইভাবে প্রযোজ্য৷ এ প্রসঙ্গে আর যে শব্দটি মনে আসে তা হলো ‘ভণ্ডামি'৷ বাদাউয়ি যখন মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের জন্য লড়ছে, তখন সৌদি আরবের ধনীরা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় দেশগুলোতে গিয়ে পশ্চিমি স্বাধীনতা উপভোগ করছে৷ এবং পশ্চিমা দেশগুলো তাঁদের সানন্দে আতিথেয়তা দিচ্ছে, কেন না, তারা মনে করে, সৌদিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা লাভজনক৷ সৌদি তেলের ওপর তো পশ্চিমা দেশগুলোও নির্ভরশীল৷ তাছাড়া সৌদি শেখরা যে পশ্চিমের তৈরি অস্ত্র আর বিলাসবহুল গাড়ি এবং অন্যান্য পণ্যের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢালছে, তারও তো একটা গুরুত্ব আছে!
তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সৌদি আরব সম্পর্কে নতুন করে ভেবে ‘পলিসি' ঠিক করার সময় এসেছে৷