প্রসঙ্গ আফগানিস্তান
৩ জানুয়ারি ২০১৩শেষ কবে আফগানিস্তানের মানুষ শান্তিতে ছিল তা হয়ত অনেকের মনে নেই৷ গত শতকের শেষ দিকে আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদারিত্ব, তার ফলশ্রুতিতে গৃহযুদ্ধ এবং তারপর তালেবানের উত্থান ও ক্ষমতা গ্রহণ৷ এভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটে গেছে আফগানিস্তানে, যার কোনোটাই স্বস্তি এনে দিতে পারেনি আফগানদের মনে৷
এরপর তালেবান উৎখাতে শুরু হয় মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বাহিনীর অভিযান৷ তাতে তালেবান হটানোর লক্ষ্য হয়ত পূরণ হয়, কিন্তু আফগানিস্তানে শান্তি ফিরে আসেনা৷ যুদ্ধে তালেবান পরাজিত হলেও পরবর্তীতে একের পর এক আলোচিত হামলা চালিয়ে তালেবান তাদের শক্তি বুঝিয়ে দেয়৷
তাই তো এখন যখন বিদেশি সেনারা চলে যাওয়ার কথা হচ্ছে তখন দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আফগানরা চিন্তিত হবেন, সেটাই স্বাভাবিক৷
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছে আফগান সরকার৷ এ লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে ‘হাই পিস কাউন্সিল'৷ তাদের কাজ তালেবানের সঙ্গে কথাবার্তা বলা৷
কিন্তু তালেবান বলেছে তারা প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সরকারের সঙ্গে কথা বলবেনা৷ কেননা কারজাই সরকার হলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ‘পুতুল প্রশাসন'৷
এরপরও আলোচনার পরিবেশ তৈরিতে চেষ্টা চলছে৷ এ লক্ষ্যে মুক্তি দেয়া হচ্ছে তালেবান বন্দিদের৷ এই প্রক্রিয়ায় গত নভেম্বরে পাকিস্তান সরকার ১৮ জন তালেবান বন্দিকে মুক্তি দেয়৷ এরপর ক'দিন আগে মুক্তি দেয়া হয় তালেবান আমলের বিচারমন্ত্রী নুরুদ্দিন তুরাবি ও হেলমন্দ প্রদেশের সে সময়কার গভর্নর সহ আটজনকে৷
হাই পিস কাউন্সিলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইসমাইল কাসিমায়ার মনে করছেন, এসব উচ্চপদস্থ তালেবান কর্মকর্তাদের মুক্তি দেয়ার কারণে তালেবানের সঙ্গে আলোচনার পথ খুলে যেতে পারে৷
কিন্তু আশাবাদী হতে পারছেন না বিশ্লেষকরা৷ তাঁরা বলছেন, যাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে তারা এখন ততটা গুরুত্বপূর্ণ কেউ নন৷ ফলে তাদেরকে ছেড়ে দিয়ে তালেবানকে আলোচনার টেবিলে আনাটা সম্ভব নাও হতে পারে৷
তালেবান আমলের এক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ওয়াহিদ মুজদা বলছেন, সাবেক বিচারমন্ত্রী তুরাবি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তালেবানের কাছে তাঁর গুরুত্ব ছিল৷ কিন্তু এখন আর তিনি তেমন কেউ নন৷ তাই তালেবানকে আলোচনায় আনার ক্ষেত্রে তিনি কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়৷
পাকিস্তান ভিত্তিক বিশ্লেষক রহিমুল্লাহ ইউসুফজাই বলছেন আরও আশঙ্কার কথা৷ তিনি বলছেন, যাদের মুক্তি দেয়া হলো তারা হয়ত তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নাও যেতে পারে৷ হয়ত তারা পাকিস্তানেই থেকে যেতে পারে৷
পাকিস্তানে বন্দি থাকা তালেবানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন তালেবানের সাবেক উপ-প্রধান আব্দুল গনি বরদার৷ তিনি এখনো মুক্তি পান নি৷
বিশ্লেষকদের ধারণা, বরদারকে যদি ছাড়া হয় তাহলে হয়ত তালেবানের মন গলানো যেতে পারে৷ আর তালেবানকে আলোচনায় আনা গেলে আরেক শক্তিশালী জঙ্গি গোষ্ঠী হাক্কানি নেটওয়ার্কেও শান্তি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা যেতে পারে৷
এভাবে সব পক্ষকে নিয়ে যদি আলোচনায় বসে একটা সমাধান বের করা যায় তাহলে অনেকদিন পর আফগানরা শান্তিতে থাকতে পারবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
কিন্তু সেটা কতটা সম্ভব, ভবিষ্যতই বলবে তা৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)