শাঁখা-সিঁদুর না পরায় বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি
১ জুলাই ২০২০সমস্যাটা ছিল অসমের এক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। ২০১২ সালে ডিগবয়ের ছেলের বিয়ে হয় এবং স্ত্রী শ্বশুরবাড়িতে আসেন। ছেলেটি তাঁর মা, বোন, ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। এক মাসের মধ্যেই বউ দাবি করেন, তাঁকে আলাদা রাখতে হবে। তিনি শ্বশুরবাড়ির লোকের সঙ্গে থাকতে পারছেন না। এই নিয়ে বিরোধ শুরু হয়। প্রবল ঝগড়াও। পরে স্বামী তাঁকে আলাদা বাড়িতে রাখেন।
তারপরেও ঝগড়া শেষ হয়নি। স্ত্রী শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে নিষ্ঠুরতার অভিযোগ দায়ের করেন। স্বামীও পাল্টা অভিযোগ করেন। তারপর স্বামী ফ্যামিলি কোর্টে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করেন। সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। স্বামী যান হাইকোর্টে। বিচারপতি অজয় লাম্বা ও বিচারপতি সৌমিত্র সইকিয়া বলেছেন, ''হিন্দু বিয়ের রীতি অনুযায়ী একজন নারী হিন্দু প্রথা ও অনুষ্ঠান মেনে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তিনি যদি শাঁখা ও সিঁদুর পরতে অস্বীকার করেন, তাহলে তিনি নিজেকে অবাবিহত দেখাতে চান। অথবা তিনি বিয়েটাই অস্বীকার করতে চান। এই মামলায় উত্তরদাতা(স্ত্রী) সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তা মেনেও নিয়েছেন। ফ্যামিলি কোর্ট এই সাক্ষ্যটাকে ঠিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখেনি।''
শুধু তাই নয়, স্ত্রী যে শ্বশুরবাড়িতে না থেকে আলাদা বাড়ি ভাড়া করতে স্বামীকে বাধ্য করেছিলেন, সেটাও বিচারপতিদের মতে, নিষ্ঠুরতা। তাঁরা বলেছেন, ''ছেলেকে জোর করে তাঁর মায়ের কাছ থেকে দূরে নিয়ে বসবাস করানোটা নিষ্ঠুরতা। মেনটেনেন্স অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার অফ পেরেন্টস অ্যান্ড সিনিয়ার সিটিজেনস অ্যাক্ট ২০০৭ অনুসারে বাচ্চাকে তাঁদের মা-বাবাকে দেখা বাধ্যতামূলক।''
রায়ে এটাও বলা হয়েছে, অপ্রমাণিত অভিযোগের বিরুদ্ধে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করাটাও নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে পড়ে। আর স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে বিয়ে টিকিয়ে রাখারও অর্থ হয় না। তাই তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি দিচ্ছেন।
তবে শাঁখা-সিঁদুর না পরা মানে হিন্দু মতে বিয়ে অস্বীকার করার রায় নিয়ে সামাজিক মধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পুরুষতান্ত্রিকতারপ্রশ্ন উঠছে। নারীবাদীরা সোচ্চার হয়েছেন।
জিএইচ/এসজি(লাইভল, অহমিয়া প্রতিদিন)