নগরা-জীবনের চ্যালেঞ্জ
১০ মে ২০১৩জার্মানির রাজধানী বার্লিনের ঠিক মাঝখানে একটি সাততলা উঁচু কাঠের বাড়ি সবার নজর কাড়ছে৷ টম কাডেন অনেক কাঠের বাড়ি বানিয়েছেন বটে, কিন্তু এটা বানাতে তাঁকে বেশ মাথা ঘামাতে হয়েছে৷ কাঠ, কংক্রিট, ইস্পাত মিলিয়ে তৈরি এই আজব বাড়ি৷
জোড়া দেওয়ার সময় যাতে গোলমাল না হয়, সেজন্য কাঠের তক্তাগুলো মিলিমিটার মেপে কাটা হয়৷ তক্তাগুলো বেঁকলে চলবে না, সেজন্য তক্তার কাঠ পরতে পরতে আঠা দিয়ে লাগানো হয়৷
কাঠের বাড়িতে মাপজোকই আসল৷ ইস্পাত আর কাঠের অংশগুলো এক মিলিমিটারের দশভাগের তিন ভাগের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে খাপ খাওয়া চাই৷ খাঁজে খাঁজে মেলা চাই৷ সে কাজটা সাইটে না করে, বাইরে করা হয়৷ তক্তাগুলো জুড়ে জুড়ে ছাদ আর দেওয়ালের পুরু পাতগুলো তৈরি হয়৷ কম্পিউটার দিয়ে চালানো যন্ত্র সেগুলোকে পেরেক দিয়ে জোড়া দেয়৷ তারপর বিশাল স্ক্রু ঢুকিয়ে আরো শক্ত করা হয়৷ প্রিফ্যাব ছাদ বা দেওয়ালগুলো এবার বাড়িতে লাগানো যেতে পারে৷
বাড়ি তৈরির এই পদ্ধতিটা নতুন হলেও, ইঁটপাথরের বাড়ির চেয়ে তা অনেক তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে: প্রতি সপ্তাহে এক তলা৷ বাড়ির ভেতরে মনোরম আবহাওয়া, হিটিং বেশি লাগে না, বাইরের আওয়াজ কম ঢোকে৷ কাঠের বাড়ির আসল সমস্যা হল আগুন লাগার বিপদ৷
স্থপতি টম কাডেন বললেন, ‘‘এই কাঠের বাড়ি বার্লিনে বাড়ি তৈরির নিয়মকানুনের আওতায় পড়ে না৷ কাজেই আমাদের দু'ধরনের অনুমতি নিতে হয়েছে: একবার কাঠের দেওয়ালগুলোর জন্য; আর একবার ছাদ আর মেঝেগুলোর জন্য – কেননা সেগুলো কাঠ, কংক্রিট আর ইস্পাত মিশিয়ে তৈরি৷''
এই মিশ্র নির্মাণ পদ্ধতির বাড়িতে কংক্রিটের পাত, ইস্পাতের ধাঁচা আর কাঠের দেওয়াল শত শত নাটবল্টু দিয়ে জোড়া দেওয়া হয়৷ অথচ গোটা কাঠামোটা এতোই পোক্ত যে, বড় বড় ঘরগুলোর জন্যেও কোনো আলাদা থামের দরকার পড়ে না৷
কংক্রিটের স্তরটা দশ সেন্টিমিটার পুরু হতে হবে৷ বাড়িটার স্থিতি আর অগ্নি নিরাপত্তা এই কংক্রিটের উপর নির্ভর, কাজেই সেই কংক্রিট অতি যত্নে ঢালা হয়৷
এগারো সপ্তাহের মধ্যেই বাড়ি তৈরির প্রথম পর্যায় শেষ৷ মডেলে লাল করে দেখানো সিঁড়িটা কংক্রিটের হবে, এবং অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে পালানোর পথ হিসেবে বাড়ির মূল ধাঁচাটা থেকে আলাদা রাখা হবে৷
বাড়ির ভেতরের খুঁটিনাটিও অত্যাধুনিক৷ ডিস্ট্রিক্ট হিটিং আর নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বাড়ি গরম রাখার খরচ বছরে মাত্র ৩০০ ইউরো রাখা হবে৷ সাধে কি এতো মানুষের এই কাঠের বাড়িতে আগ্রহ!
স্থপতি টম কাডেন বললেন, ‘‘কৌতূহলীর অভাব নেই৷ নিজের বাড়ি তৈরি করতে চান, এমন অনেকেই কাঠের বাড়ি চান, কিন্তু শহরের মধ্যেই৷ অনেকে আবার যৌথ মালিকানার ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরির কোঅপারেটিভ করে ইতিমধ্যেই জমি কিনে ফেলেছেন – এবং এখন কাঠের বাড়ি তৈরি করানোর কথা ভাবছেন৷''
গাছের মতো যা আকাশের দিকে বেড়ে চলে – কাঠের বাড়ির এই অভিনব প্রকল্পও হয়ত তাই৷
এসি/এসবি