শস্যের ফলন বাড়াতে হাইটেক স্ক্যানার
২৭ অক্টোবর ২০১৪আগামী দশকগুলিতেও বেড়ে চলা জনসংখ্যার জন্য খাদ্যের সংস্থান করতে হলে কৃষি উৎপাদন আরও অনেক বাড়াতে হবে৷ কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে কৃষিজমি বাড়ানোও চলবে না৷ অতএব চাই এমন শস্য, যার উৎপাদন ক্ষমতা বেশি৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাইনার গল্ডবাখ বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ৯০০ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে হবে৷ তার জন্য বছরে গড়ে কমপক্ষে ১.৫ শতাংশ হারে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে৷''
উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শস্য ব্রিড বা প্রজনন করতে আজকাল হাইটেক প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়৷ কারণ এমন শস্য শনাক্ত করতে হয়, যেগুলি সুস্থ অথবা তাদের স্ট্রেস সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে৷ শুধু সেগুলিই বেছে নিয়ে আরও প্রজনন করতে হবে৷
বন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি-বায়োলজিস্ট হাইনার গল্ডবাখ এই লক্ষ্যে ইঞ্জিনিয়ার, তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও কৃষিবিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করেছেন৷ তাঁদের উদ্দেশ্য এমন এক সেন্সর তৈরি করা, যার সাহায্যে ‘প্লান্ট ব্রিডিং' আরো দক্ষ ও দ্রুত করে তোলা সম্ভব৷ অধ্যাপক গল্ডবাখ বলেন, ‘‘প্রজননের সময় সেন্সর বৈশিষ্ট্যগুলি দ্রুত ও সঠিকভাবে চিনতে পারে৷ মানুষও সেটা পারে বটে, কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পর সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে৷ তখন ভুলের অবকাশ বেড়ে যায়, শস্যগুলির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ত্রুটি ঘটে৷ কিন্তু সেন্সর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সেই কাজ সঠিকভাবে করে চলে৷ ফলে প্রজননের গতি বেড়ে যায়৷''
পাতার রোগ যত দ্রুত সম্ভব শনাক্ত করতে গবেষকরা এক হাইপার স্পেকট্রাল ক্যামেরা ব্যবহার করেন৷ সেটি স্ক্যানারের মতো পাতার উপর প্রতিফলিত আলো বিশ্লেষণ করে৷ ২১০টি আলাদা তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে তথ্য নিয়ে স্পেকট্রাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করা হয়৷ কৃষিবিজ্ঞানী ড. আনে-কাটরিন মালাইন বলেন, ‘‘এখন পর্দার ডানদিকে হাইপার-স্পেকট্রাল ফলাফল দেখা যাক৷ ‘ফল্স কালার ডিসপ্লে'-তে হলুদ রংয়ের মাধ্যমে সুস্থ টিস্যু দেখা যাচ্ছে৷ অন্যদিকে নীল-সবুজ রংয়ের অংশে পাতার রোগগ্রস্ত অংশ দেখা যাচ্ছে৷''
সফটওয়্যারের মাধ্যমে পাতার নানা রোগ পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করা যায়৷ ভবিষ্যতে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে শস্যখেতেও তা কাজে লাগানো যাবে৷ অধ্যাপক গল্ডবাখ বলেন, ‘‘এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করে আমরা প্রজননের অগ্রগতি আরও দ্রুত করে তুলতে পারি৷ অর্থাৎ এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো প্রজাতির প্রজনন যদি ১০ থেকে ১২ বছর লাগে, সেখানে আমরা সময়টা ২ বছর কমিয়ে দিতে পারি৷ ফলে আরও দক্ষতার সঙ্গে আমরা কাজ করতে পারবো৷''
বায়োলজিস্ট বির্গিট ফ্রিকে এক হাইপার স্পেকট্রাল সেন্সর দিয়ে উদ্ভিদের ভিতরের অবস্থাও দেখতে পারেন এবং সুগার বিটের মেটাবলিজম ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য পান৷ বায়োলজিস্ট বির্গিট ফ্রিকে বলেন, ‘‘পরিমাপের পদ্ধতি খুব সহজ৷ সূর্যের আলো পাতার উপর পড়ে, তারপর তার প্রতিফলন ঘটে৷ উদ্ভিদ অসুস্থ হলে তার মেটাবলিজম বদলে যায়, যার ফলে প্রতিফলনের চরিত্রও বদলে যায়৷ সেন্সর তখন এই পরিবর্তিত প্রতিফলন ধরতে পারে৷''
তখন শুধু সুস্থ উদ্ভিদ নিয়েই প্রজনন চালানো হয়৷ তাদের সহ্যশক্তি বাড়ানো হয়৷ বার্লি ও ধানের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব৷ উদ্ভিদের আকার বা একই জায়গায় কত উদ্ভিদ আছে, এক টেরেস্ট্রিয়াল লেজার-স্ক্যানার তা মেপে দেখে৷
সেটি খেতের এক ত্রিমাত্রিক ছবি ফুটিয়ে তোলে৷ কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নোরা টিলি বলেন, ‘‘বীজ রোপণ করার সময় থেকেই স্ক্যানিং শুরু হয়৷ তখনও কিন্তু চারা গজায়নি৷ এর মাধ্যমে গোটা এলাকার একটা হাই-ডেফিনিশন মডেল পাওয়া যায়৷ প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর স্ক্যান করা হয়৷ এভাবে বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে তুলনা করে উদ্ভিদের বৃদ্ধির হার স্পষ্ট বোঝা যায়৷''
সত্যি, বিষয়টি একেবারে নিখুঁতভাবে মাপা সম্ভব৷ এর জন্য বিজ্ঞানীদের খেতের চারপাশে মাত্র চারটি বিন্দুর প্রয়োজন, যেখান থেকে পরিমাপ চালানো হবে৷ উচ্চতা বিচার করে সেরা উদ্ভিদ বাছা যাবে, যার উৎপাদন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি৷
খেতে হাইটেক সেন্সর উদ্ভিদের প্রজনন প্রক্রিয়া সহজ ও দ্রুত করতে তুলতে পারে৷ কোটি কোটি মানুষের খাদ্যের সংস্থান করতে এমন উৎপাদনশীল উদ্ভিদের প্রয়োজন পড়বে৷