শরণার্থীদের কাজ পেতে সহায়তা
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮জার্মানির এক অর্গ্যানিক সুপারমার্কেটে কাজ করেন মাসুদ সুতানজাদে৷ ২৪ বছর বয়সি এই আফগানির কাজ হচ্ছে, দোকানের বিভিন্ন তাকে শাকসবজি সাজিয়ে রাখা৷ অধিকাংশ শাকসবজির জার্মান নাম জানেন না তিনি৷ তবে খদ্দেরদের সঙ্গে জার্মান ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেন৷ উদ্দেশ্য, কাজের ফাঁকে জার্মান ভাষাটাও রপ্ত করে নেয়া৷
তিনি বলেন, ‘‘আমার লক্ষ্য একটাই– আমি একটি সাধারণ জীবন চাই৷ আর এজন্য যে বিষয়টি আমার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, নিরাপদ পরিবেশ৷''
আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাবাহিনীর ইলেক্ট্রিয়ান হিসেবে কাজ করতেন সুতানজাদে, যা তাঁকে তালেবানের লক্ষ্যে পরিণত করে৷ ফলে ২০১৫ সালে সেদেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি এবং ইরান, তুরস্ক এবং বলকান পেরিয়ে জার্মানিতে পৌঁছান৷ এখানে পৌঁছানোর পরপরই ভাষা শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হন উদ্যমী এই যুবক৷ তবে জার্মানির চাকুরির বাজার যে কতটা কঠিন, সেটা তিনি বছরখানেক পরে বিভিন্ন স্থানে চাকুরির আবেদন করতে শুরু করার পর বুঝতে পারেন৷
সুতানজাদে বলেন, ‘‘কখনো কখনো আমার চাকুরির আবেদন প্রত্যাখানের চিঠি পাই৷ তবে অধিকাংশ সময় কোনো জবাবই পাই না৷'' এখন অবশ্য একটি চাকুরি পেয়েছেন তিনি৷ ‘‘সোশ্যাল-বি আমাকে একটা সুযোগ দিয়েছে,'' বলেন এই আফগান৷
জার্মানির চাকুরি বাজারে শরণার্থীদের দুরবস্থা দেখে কিছু একটা করার তাগিদ থেকে সোশ্যাল-বি স্টার্টআপটি তৈরি করেন ম্যাক্সিমিলান ফেল্সনার এবং জারা ব্রুন৷ অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে শরণার্থীদের যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া এবং তাঁদের ছোট-বড় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পাঠানো৷
ফেল্সনার বলেন, ‘‘আমরা শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আমাদের জন্য কাজ করার সুযোগ দেই এবং পরবর্তীতে আমাদের বিভিন্ন পার্টনার প্রতিষ্ঠানে তাদের পাঠিয়ে দেই৷'' এভাবে সোশ্যাল-বি কার্যত শরণার্থীদের নিয়োগ দিতে একেকটি প্রতিষ্ঠানকে যে জটিল আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, সেই প্রক্রিয়া থেকে রেহাই দেয়৷ একইসঙ্গে শরণার্থীরাও একটি স্বস্তিকর কাজের সন্ধান পায়৷
ইতোমধ্যে আলডি, ভ্যুর্থ, সেপেলিন এবং সিস মাইক্রোটেকের মতো বড় প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল-বি'র সহায়তায় শরণার্থীদের কাজ দিতে শুরু করেছে৷ আর অলাভজনক হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মী সরবরাহ করে স্টার্টআপটির যে মুনাফা হয়, সেটা পুনরায় স্টার্টআপটিতেই বিনিয়োগ করা হয়৷ তাছাড়া, বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা থেকে সহায়তাও পায় এটি৷
আপাতত মিউনিখে পঞ্চাশজনের কিছু বেশি শরণার্থীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে স্টার্টআপটি৷ এ বছরের শেষ নাগাদ সংখ্যাটিকে শতাধিক করার পাশাপাশি জার্মানির অন্যান্য শহরেও নিজেদের কর্মপরিধি বিস্তৃত করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি৷ সবকিছু ঠিক থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অনেক শরণার্থীর নিরাপদ কর্মস্থলে পরিনত হবে সোশ্যাল-বি, এমন আশা করাই যায়৷
প্রতিবেদন: রিচার্ড ফ্যুকস/এআই