লেবাননে বিমান হামলা চলছে, যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয় ইসরায়েল
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪বৃহস্পতিবার রাতেও ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান লেবাননে হামলা করেছে। বৈরুতে দুইজন মারা গেছেন ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ২৮ জন মারা গেছেন এবং সোমবার থেকে মৃত্যুর সংখ্যা ছয়শ ছাড়িয়েছে।
হেজবোল্লা জানিয়েছে, বিমান হামলায় তাদের বিমান বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ সুরুর মারা গেছেন।
লেবানন সীমান্তে ইসরায়েলের সেনাও কুচকাওয়াজ করছে। ফলে বি্মান হামলার পাশাপাশি সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলের সেনাও লেবাননের ভিতরে ঢুকে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী তখন সেনাকে সাহায্য করবে এবং ইরান থেকে যাতে হেজবোল্লার কাছে অস্ত্র না আসে তা নিশ্চিত করতে চাইবে বলে বিমান বাহিনীর কম্যান্ডার মেজর জেনারেল তোমের বার জানিয়েছেন।
তিনি ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ''আমরা স্থলবাহিনীকে সব ধরনের সাহায্য করব।''
নেতানিয়াহুর বক্তব্য
শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তার আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ''ইসরায়েলের সেনা পূর্ণ শক্তি দিয়ে হোজবোল্লার উপর আঘাত হানবে। আমাদের লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা থামবে না। আমাদের যে সব মানুষ এই সংঘাতের ফলে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাদের নিরাপদে থাকার মতো পরিস্থিতি যতদিন তৈরি না হয়, ততদিন আমরা থামব না।''
হেজবোল্লাকে যুক্তরাষ্ট্র-সহ কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সামাজিক মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, আরব দেশগুলি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির কথা বলেছিল। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলির প্রস্তাব ছিল, অবিলম্বে ২১ দিনের যুদ্ধবিরতি চালু হোক।
লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লা হাবিব জাতিসংঘের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগে তারা যেন অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির ব্যবস্থা করে। না হলে, এই সংকট ঘোরালো হয়ে উঠবে। তখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, লেবাননের সামনে এখন অস্তিত্ব সংকট দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, ''যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, তা ইসরায়েল খুব ভালো করে জানে। প্রতিটি শব্দ তারা পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায়, তারা যেন এই প্রস্তাবকে গুরুত্ব দেয়।''
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ বলেছেন, ইসরায়েল যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একেবারে খারিজ করে দিয়েছে, তা তিনি মনে করছেন না। এটা খারিজ করলে প্রধানমন্ত্রী ভুল করবেন। তখন আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধির দায় তাকে নিতে হবে।
তিনি জানিয়েছেন, ''ইসরায়েল যাতে যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়, তার জন্য আমরা সবধরনের চেষ্টা করব। ফ্রান্স নিরাপত্তার পরিষদের বৈঠক ডেকে এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্যও প্রস্তুত।''
জার্মানিও যুদ্ধবিরতি চায়
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেছেন, তিনি ইসরায়েল ও হেজবোল্লা নেতাদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে অনুরোধ জানাচ্ছেন।
তিনি বলেছেন, এই সংঘাত বাড়লে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তখন এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিস্থাপন কঠিন হয়ে পড়বে।
হোয়াইট হাউসের বক্তব্য
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন ও ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন ইসরায়েলের স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী রন ডেরমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
লন্ডনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, ''মধ্যপ্রাচ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এখনো কূটনৈতিক পথে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা আছে।''
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স)