1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লুট ও ঘুস নিয়ে সিআইডি-ডিবি কর্মকর্তার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ডিবি পরিচয়ে এক প্রবাসীকে ধরে অর্থ লুটের মামলায় সিআইডির কর্মকর্তার ‘জড়িত থাকার প্রমাণ' পায় ডিবি৷ এ নিয়ে ইন্টারনেটে ‘ঘুস লেনদেনের' অডিও ছড়িয়ে পড়ায় তাকে ‘ফাঁসানো' হয়েছে দাবি সেই সিআইডি কর্মকর্তার৷

https://p.dw.com/p/406qS
প্রতীকী ছবিছবি: DW

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়, সম্প্রতি ইন্টারনেটে ফোনালাপের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রবাসীর অর্থ লুটের ঘটনায় পুলিশের দুই শাখার কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বেরিয়ে আসে৷ অডিওটিতে এক নারী ও এক পুরুষের কথোপকথনে কোটি টাকার বেশি লেনদেনের কথা উঠে এসেছে৷

এ বিষয়ে সিআইডির উপপরিদর্শক আকসাদুর জামানের দাবি, অডিওটি তার স্ত্রীর সঙ্গে মামলার তদন্ত দেখভালকারী ডিবি কর্মকর্তা কায়সার রিজভী কোরায়শির কথোপকথন৷ তবে এডিসি কোরায়শি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, লুটের মামলা থেকে বাঁচতে এই ‘সাজানো অডিওটেপ তৈরি করেছেন' সিআইডি কর্মকর্তা আকসাদুর৷ডিবির অভিযোগের ভিত্তিতে আকসাদুরকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করছে সিআইডি৷

সিআইডি কর্মকর্তা আকসাদুর এবং ডিবি কর্মকর্তা কোরায়শি দুজনের বাড়িই ঠাকুরগাঁও জেলায়৷

ঘটনার শুরু

গত বছরের ২০ অক্টোবর ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে এক প্রবাসীর অর্থ লুট থেকে ঘটনার শুরু৷ অর্থ লুটের শিকার দুবাই প্রবাসী কাপড় ব্যবসায়ী রোমান মিয়া৷রোমান মিয়ার করা মামলায় বলা হয়েছে, ২০ অক্টোবর সকাল পৌনে ৭টার দিকে তিনি টিকাটুলির কেএম দাস লেন থেকে ফুফাতো ভাই মনির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশায় শাহজালাল বিমানবন্দরে যাত্রা করেন৷ বিমানবন্দর সড়কের কাওলা ওভারব্রিজের নিচে একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস তাদের আটকায়৷ এবং গাড়ি থেকে দুজন নেমে নিজেদের ‘ডিবির লোক' পরিচয় দিয়ে লাগেজসহ রোমানকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়৷ 

গাড়ির ভেতরে তাকে হাতকড়া পড়িয়ে, চোখে কালো কাপড় বেঁধে মারধর করে তার কাছ থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার, দুই হাজার দিরহাম, দুই হাজার টাকাসহ লাগেজটি ছিনিয়ে নেয়৷ পরে হাতকড়া খুলে রশি বেঁধে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের পাশে রোমানকে ফেলে দিয়ে গাড়িটি চলে যায়৷

বিমানবন্দর থানায় করা সেই মামলার তদন্তভার পায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ৷ মামলায় ডিবি সিআইডির রাইটার মোশাররফ হোসেন, সেলিম মোল্লা, রিপন মোড়ল, আমির হোসেন তালুকদার, রিজু মিয়া সিকদার ও হাসান রাজাকে গ্রেপ্তার করেছে৷ 

গ্রেপ্তার ছয়জনের সবাই জামিন পেয়ে পাঁচজনই কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন৷ কেবল হাসান রাজা অন্য আরেকটি ডাকাতির মামলায় (পিআইবির তদন্তাধীন) এখনও কারাগারে৷

ডিবির তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা এডিসি কায়সার কোরায়শি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সিসি ক্যামেরা ও অন্যান্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করা হয় এবং পরে পুরো চক্রটির বিষয়ে জানা যায়৷ বেরিয়ে আসে সিআইডি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিও৷''

মাইক্রোবাসের চালক হারুনুর রশীদ সজীব এই মামলায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন৷ তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে ডিবি কর্মকর্তা বলছেন, সজীব সিআইডির ভাড়া করা মাইক্রোবাসটি

চালান৷ ১৯ অক্টোবর রাতে এসআই আকসাদুর জামান তাকে ফোন করে ভোরবেলায় ‘অপারেশন' আছে বলে  প্রস্তুত থাকতে বলেন৷ পরেরদিন ভোর ৫টায় তিনি গাড়ি নিয়ে বের হয়ে আকসাদুরকে নেওয়ার পর মালিবাগের সিআইডি দপ্তর থেকে মোশাররফ হোসেনকে তোলেন৷ এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে বাকিদের তুলে টিকাটুলিতে গিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর একটি সিএনজি অটোরিকশাকে অনুসরণ করেন৷

সিআইডি কর্মকর্তা আকসাদুরের নির্দেশেই কাওলায় ওই অটোরিকশাটিকে আটকানোর কথা বলেন সজীব৷ হাসান রাজাও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন৷ হাসান রাজাকে উদ্ধৃত করে ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, সেদিন তিনি আকসাদুরের সঙ্গে ছিলেন৷ এবং এজন্য তাকে ৭০ হাজার টাকা দেন আকসাদুর৷

তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ সদর দপ্তর ও সিআইডিতে একটি প্রতিবেদন পাঠায়৷ সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) আজাদ রহমান বলেন, তার ভিত্তিতে আকসাদুরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে৷

অডিওতে ঘুসের আলাপ

সম্প্রতি ঘুস লেনদেনের ২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের একটি মোবাইল কথোপকথন ছড়িয়ে পড়েছে ইন্টারনেটে৷ ফোনালাপে এক নারী ও পুরুষ কণ্ঠের কয়েক দফায় ১ কোটি ২৮ লাখ ও ১৪ লাখ টাকা লেনদেন হওয়ার কথা বলতে শোনা যায়৷

ফোনালাপে ডিবি কর্মকর্তাদের টাকা দেওয়ার পরও কাঙ্ক্ষিত আচরণ না পাওয়ার অনুযোগ করতে শোনা যায় ওই নারীকে৷ অডিওর কিছু অংশ...

নারী কণ্ঠ: ভাই, আমার লোক তো অসুস্থ হয়ে গেছে চিন্তায়৷ আপনারে এত টাকা-পয়সা দিলাম, ১৪ লাখ, কিছু ফেরত দিলে আমরা খরচপাতি করি৷

পুরুষ কণ্ঠ: ওই যে এক কোটি ২৮ লাখ টাকা দিছেন, ওইটা নেওয়া যায় কিনা, দ্যাখেন দেখি৷ আর এখানে চাইলে কিছু লাগলে কিছু দেবনে৷ একটু সময় দেন আমারে৷ কাল অফিস টাইমে কথা বলি?

নারী কণ্ঠ: আমার ফোনটা একটু ধরিয়েন৷ দেশি মানুষ, আপনিই ভরসা৷

পুরুষ কণ্ঠ: আপনার জামাই সব জানে, তার সাথে কথা বলে নিয়েন৷

নারী কণ্ঠ: না, আমি যে ব্যক্তিগতভাবে আপনারে ১৪ লাখ টাকা দিলাম, আপনি ওইটা থেকে কিছু ফেরত দিলে...

পুরুষ কণ্ঠ: আরে ভাই, আমাকে কোথায় টাকা দিলেন? এই টাকাগুলা তো সব ওখানে গেছে৷

নারী কণ্ঠ: আলাদা আমি দিয়ে আসলাম না যায়া?.....

অভিযোগ আকসাদুরের

বরখাস্ত এসআই আকসাদুরের দাবি, এটা তার স্ত্রী তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে ডিবির এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়শির কথোপকথনের অডিও৷

আকসাদুর এক দিন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার পূর্ব পরিচিত কয়েকজনকে ডিবির দল আটক করে টাকা দাবি করলে ওই ব্যক্তিদের স্বজনেরা তার দ্বারস্ত হলে আকসাদুর টাকা লেনদেনের বিষয়টিতে মধ্যস্থতা করেন৷ এ বিষয়ে আকসাদুর বলেন, ‘‘ওই লোকগুলো মিলে কয়েক লাখ টাকা করে দিয়ে তহবিল তৈরি করে৷ গত বছরের নভেম্বরে আমার খিলগাঁওয়ের বাসায় বসে দুই দফায় ডিবির দলকে এক কোটি ২৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়৷''

এই টাকা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জের ধরে ডিবির দলটি তাকেও আটক করার কথা জানিয়ে  আকসাদুর বলেন, তাকে ছাড়াতে তার স্ত্রী আরও ১৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন৷ এবং

টাকা নেওয়ার পরও কয়েকজনকে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি৷ তখন ওই ব্যক্তিদের স্বজনেরা এসে আকসাদুর ধরেন এবং তা নিয়েই শুরু হয় বিরোধ৷ ঘটনাটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন বলে দাবি আকসাদুরের৷ তিনি রোমান মিয়ার অর্থ লুটের অভিযোগ অস্বীকার করেন৷

অস্বীকার এডিসি কোরায়শির

ডিবি কর্মকর্তা কায়সার কোরায়শি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "মামলায় এসআই আকসাদুরের সংশ্লিষ্টতা আসার পর থেকেই তিনি নানাভাবে অনুরোধ করে চাপ দিতে থাকেন৷ এবং নানাভাবে হুমকি দেওয়ারও চেষ্টা করেন৷ তিনি পুলিশে কাজ করেন তাই মামলার অনেক বিষয়ই তার জানা৷ অনেক কিছু করেও মামলা থেকে নিজেকে বাঁচাতে না পেরে মামলা ও তদন্তকারীদের বিতর্কিত করার জন্য ওই অডিওটি তৈরি করেছেন আকসাদুর৷'' অডিওতে তার কণ্ঠ ‘ফেব্রিকেট' করা হয়েছে বলে দাবি কায়সার কোরায়শির৷  

"প্রযুক্তিগত আরও কিছু প্রমাণাদিও ডিবি পেয়েছে, যা প্রমাণ করে এসআই আকসাদুর ওই অপরাধে যুক্ত ছিলেন৷'' আকসাদুরকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান কোরায়শি৷

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যা বলছেন

এই ঘটনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করছি, মামলার তদন্ত চলছে৷আর ঘুষের অভিযোগের বিষয়টিও ডিএমপি কমিশনার ওয়াকিবহাল৷ এ বিষয়টিও আমরা তদন্ত করে দেখছি৷''

তবে এই ঘটনার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম৷

এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান