1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনে টলিউডের ব্যাপক ক্ষতি

৩ এপ্রিল ২০২০

লকডাউনের জেরে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পশ্চিমবঙ্গের বিনোদন শিল্প৷ টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র পাড়ায় শ্যুটিং বন্ধ৷ এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কলাকুশলী ও অল্পখ্যাত অভিনেতারা৷

https://p.dw.com/p/3aQCc
ছবি: DW/P. Samanta

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ভারতে চলছে লকডাউন৷ জরুরি পরিষেবা ছাড়া সবকিছুই বন্ধ হয়ে রয়েছে৷ অনেক শিল্পের উৎপাদন বন্ধ৷ একই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র শিল্পে৷ টলিউড নামে পরিচিত টালিগঞ্জের শিল্পীদের পাড়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে সব ধরনের প্রযোজনার শ্যুটিং৷ এর মধ্যে যেমন রয়েছে সিনেমা, তেমনই রয়েছে দূরদর্শনের জনপ্রিয় একাধিক ধারাবাহিক৷ ইদানীং দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা ওয়েব সিরিজেরও একই অবস্থা৷

টালিগঞ্জে কর্মরত অভিনয় শিল্পীদের সাধারণ মানুষ সরাসরি পর্দায় দেখে৷ কিন্তু, নেপথ্যে থেকে যান আরো বড় সংখ্যক কর্মী৷ টেকনিশিয়ান বা স্পট বয় থেকে শুরু করে মঞ্চের কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের প্রযোজনাকে বাস্তবায়িত করে তোলেন৷ এঁরা পর্দার পিছনে থাকেন,  আর্থিকভাবেও কিছুটা দুর্বল৷ তাই টলিউডের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন এই কলাকুশলীরাই৷ টালিগঞ্জ কমবেশি হাজার সাতেক কলাকুশলী আছেন৷ এঁরা প্রত্যেকেই দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করেন৷ অর্থাৎ, যেদিন কাজ করেন, সেদিনের পারিশ্রমিক পান৷ শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই টেকনিশিয়ানরা কাজ পাচ্ছেন না। ফলে এখন তাঁদের উপার্জন নেই৷ এতে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে৷

অরিন্দম শীল

ইতিমধ্যে এই কলাকুশলীদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য গড়ে উঠেছে তহবিল৷ এই তহবিলে বিভিন্ন আর্টিস্ট গিল্ড থেকে শুরু করে অভিনেতা-অভিনেত্রী ও পরিচালকরা ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সাহায্য করছেন৷ অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, দেব, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত কিংবা পরিচালক গৌতম ঘোষ, অরিন্দম শীল, এমন কত বিশিষ্ট মানুষ এগিয়ে এসেছেন৷ অনেক অভিনেতা আহ্বান জানিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়৷ এর আগেই বলিউডে আর্থিক তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে৷ মুম্বইয়ের চলচ্চিত্র শিল্পে সঙ্কটের চরিত্রটা একই। সেখানেও টেকনিশিয়ান ও চলচ্চিত্র নির্মাণে নিযুক্ত অন্যান্য কর্মীরা দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করেন৷ পরিচালক অরিন্দম শীলের বক্তব্য, ‘‘কলাকুশলীদের দিন আনি দিন খাই অবস্থা৷ তাঁদের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে৷ এই মানুষদের পাশে দাঁড়াতেই তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে৷’’

টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের কথা বারবার উঠে এলেও কিছুটা আড়ালে থেকে যাচ্ছেন অভিনেতাদের একাংশ৷ পরিচিত ও বিখ্যাত অভিনেতাদের সঙ্গে একটি চলচ্চিত্র বা ধারাবাহিকের পার্শ্বচরিত্রে অনেক অল্প পরিচিত, কিন্তু শক্তিশালী শিল্পী অভিনয় করেন৷ এঁরাও কাজের ভিত্তিতে পারিশ্রমিক পান৷ টালিগঞ্জে একজন অভিনেতার দৈনিক সাম্মানিক শুরু হয় ৫০০-৭০০ টাকা থেকে৷ টেনকনিশিয়ানদের ন্যূনতম প্রাপ্য এর কাছাকাছিই৷ শিল্পীর প্রতিষ্ঠা অনুযায়ী সাম্মানিকের হার বাড়তে থাকে। এই অভিনেতাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে আর্টিস্ট ফোরাম৷ সংগঠনের তরফ থেকে ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অর্থ সাহায্য করা হয়েছে, মঞ্চ কর্মীদের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা সংগঠন সৌভ্রাতৃত্ব-কে তারা অর্থ দিয়েছে৷ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী অরিন্দম গাঙ্গুলি বলেন, ‘‘আমরাও দৈনিক কাজের ভিত্তিতে পারিশ্রমিক পাই৷ কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলে আমরা চালিয়ে যেতে পারব৷ কিন্তু, কলাকুশলী বা অন্য অনেক অভিনেতার সমস্যা হবে৷ তাই আমরা ফোরামের পক্ষ থেকে সেই অভিনেতাদের কাছ থেকে আবেদন চেয়েছি৷ যত আবেদনই আসুক, মাথাপিছু দু‘হাজার টাকা করে দেওয়া হবে৷’’

টালিগঞ্জের কাজকর্ম বন্ধ থাকায় পশ্চিমবঙ্গের বিনোদন শিল্প বিপুল কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সামনে পড়তে চলেছে৷ ছবির মুক্তির দিন পিছিয়ে গিয়েছে৷ লোকশন ভাড়া নিয়েও শ্যুটিং করা যাচ্ছে না৷ ছোটপর্দায় একই অন্ধকার৷ ইতিমধ্যে টিভিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছে মেগা ধারাবাহিকের নতুন পর্বের সম্প্রচার৷ শ্যুটিং না হওয়ায় ধারাবাহিকের পুরনো পর্ব পুনঃপ্রচার করা হচ্ছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন প্রসার ভারতীর পরিচালনাধীন দূরদর্শন ফিরিয়ে এনেছে রামায়ণ, মহাভারত, সার্কাস, ব্যোমকেশ বক্সী-র মতো অতীতের জনপ্রিয় ধারাবাহিকগুলি৷ তাতে অনেক দর্শকই ঘরবন্দি অবস্থায় নিজেদের কৈশোর-যৌবনের দিনগুলিতে পিছিয়ে যেতে পারছেন৷ কিন্তু, এই বন্ধ্যা দশা টলিউডকে কতটা পিছিয়ে দিল, তার আঁচ করতে পারছেন না এই শিল্পের বিশেষজ্ঞরাও৷

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷