র্যাবের নির্মাণাধীন সদর দপ্তরে আত্মঘাতী হামলা
১৭ মার্চ ২০১৭বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি শিশুসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ২৭ ঘণ্টার মাথায় এই আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের গটনা ঘটে৷ বিস্ফোরণে নিহত যুবকের নাম না জানা গেলেও, তার বয়স ২৫ বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ তার পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি৷ বিস্ফোরণে তার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়৷ তবে মুখমণ্ডল স্পষ্ট আছে৷
র্যাবের মিডিয়া উইং-এর পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ হামলার পর বিকাল তিনটার দিকে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে নির্মাণাধীন র্যাব সদর দপ্তরের বাউন্ডারি ওয়ালের নীচ দিয়ে একজন প্রবেশ করে৷ অপরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় ব্যারাকে থাকা র্যাব সদস্যরা তাকে চ্যালেঞ্জ করেন৷ চ্যালেঞ্জ করার সঙ্গে সঙ্গে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং তারপরই একটা বিস্ফোরণ ঘটে৷ তার সঙ্গে যে বোমা ছিল, সেই বোমার বিস্ফোরণেই ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়৷''
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পূর্ব দিকে আশকোনা হাজি ক্যাম্প এলাকায় র্যাবের নির্মাণাধীন এই সদর দপ্তরটির অবস্থান৷ এর কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে র্যাবের বর্তমান সদর দপ্তর, র্যাব-১, বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দর থানার অবস্থান৷
প্রত্যক্ষদর্শী মামুনুর রহমান জানান, ‘‘সম্ভবত দুপুর পৌনে একটার পর র্যাব ক্যাম্প থেকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পাই৷ দৌড়ে গিয়ে দেখি সেখানে একটি মৃতদেহ পড়ে আছে৷ মৃতদেহের ছিন্নভিন্ন অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷''
মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নিহত যুবক কোন জঙ্গি গ্রুপের সদস্য, তা এখনো জানা যায়নি৷ তবে বিস্ফোরক ও বিস্ফোরণের ধরন দেখে বলা যায় সে জঙ্গি৷''
এই হামলার পর ওই এলাকায় বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল কাজ শুরু করে৷ নিহত যুবকের কোমরে বিস্ফোরকের ভেস্ট ছিল বলে জানায় তারা৷ সেখান থেকে একটি কালো ব্যাগ উদ্ধার করা হয়৷ তবে তাতে কী আছে, তা এখনও জানা যায়নি৷ মরদেহের কাছ থেকে একটি বোমা উদ্ধারের দাবিও করেন তাঁরা৷
আত্মঘাতী বিস্ফোরণে পর বাংলাদেশের বিমান ও স্থলবন্দর, থানা এবং কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷
বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো দপ্তরে জঙ্গি হামলার ঘটনা এটাই প্রথম৷ এর আগে আদালত চত্বর এবং পুলিশের ওপর হামলা চালানো হলেও কোনো স্থাপনায় হামলা হয়নি৷ এ বিষয়ে জঙ্গি বিষয়ক গবেষক এবং মানবাধিকার কর্মী নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হোলি আর্টিজানে হামলা পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক অভিযানের মুখে জঙ্গিরা হয়ত আত্মঘাতী হামলার পথ বেছে নিয়েছে৷ এর আগে জঙ্গিরা অভিযানের মুখে আত্মঘাতী হলেও এবার সরাসরি আত্মঘাতি হামলা চালালো, যা আতঙ্কের বিষয়৷''
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জঙ্গিদের আস্তানায় এক অভিযানে নারীসহ চারজন জঙ্গি এবং এক শিশু নিহত হয়৷ পুলিশের দাবি, তাদের মধ্যে নারীসহ দুই জঙ্গি আত্মঘাতী হয়েছে৷ নূর খান বলেন, ‘‘ঢাকার আত্মঘাতী হামলা চট্টগ্রামে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের প্রতিশোধও হতে পারে৷''
হোলি আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিদের আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে৷ কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ, রূপনগর, আজিমপুর, আশকোনা, গাজীপুরের অভিযানে জঙ্গিরা হয় প্রতিরোধ করেছে অথবা আত্মঘাতী হয়েছে৷ আজিমপুর ও আশকোনায় নারী জঙ্গিরাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার চেষ্টা করে৷
নূর খানের মতে, ‘‘জঙ্গিরা অস্থির হয়ে পড়েছে৷ তারা এখন একক বা কম সদস্য নিয়ে হামলা চালাচ্ছে বা প্রতিরোধে সচেষ্ট হচ্ছে, যেটা আত্মঘাতী ইউনিটের পক্ষেই সম্ভব হয়৷ এদের জনবল কমে যাওয়ায় কম জনবল দিয়ে কার্যকর হামলার জন্যও তারা আত্মঘাতী হতে পারে৷''
বাংলাদেশে কি আত্মঘাতী হামলার একটা ‘ট্রেন্ড’ শুরু হলো? লিখুন আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷