1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোহিঙ্গাদের সহায়তা তহবিল নিয়ে নতুন দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশ

২৭ মে ২০২২

ইউক্রেন ও আফগানিস্তানের চলমান পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের সহায়তা তহবিলে সংকটের আশঙ্কা করছেন ইউএনএইচসিআর-এর রোহিঙ্গা বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি৷ এ আশঙ্কা দূর করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ৷

https://p.dw.com/p/4Bxk0
ছবি: AFP/Getty Images

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবশ্য চলমান সহায়তা যাতে না কমে তার জন্য নানা ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রাখার কথা বলা হচ্ছে৷ কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু সহায়তার জন্য নয়, রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোই সমস্যার আসল সমাধান৷ বাংলাদেশের সেদিকে আরো বেশি জোর দেয়া দরকার৷

রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা

বাংলাদেশে এখন ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছেন ৷ তাদের বেশির ভাগই কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছেন৷ অল্প কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচরে অবস্থান করছেন৷

জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) বলছে, চলতি বছর ইউএনএইচসিআর রোহিঙ্গাদের জন্য মোট ৮৮১ মিলিয়ন মর্কিন ডলারের সহায়তা চেয়েছে৷ আর ইউএনএইচসিআর-এর সর্বশেষ তথ্য মতে, চলতি বছরে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের জন্য এখন পর্যন্ত সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ২৮৫.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ৷ গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সহায়তা পেয়েছে ৩৪.২১ মিলিয়ন ডলার, যা  প্রতিশ্রুতির ১২ ভাগ৷ আর এই গতিতে সহায়তা এলেও শেষ পর্যন্ত ২০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে৷ এ পর্যন্ত প্রতিশ্রুত অর্থেও ৮৫ মিলিয়ন ডলারের ঘাটতি থাকবে৷ কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি চাহিদার চেয়ে অনেক কম৷ এর মধ্যে ভারত থেকেও বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আসছেন৷ পোস্ট কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ৷ বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশেও এখন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে৷ সব মিলিয়ে সর্বশেষ ইউএনএইচসিআর হাইকমিশনার যা বলেছেন তাতে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে৷

ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য মতে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর এ পর্যন্ত সেখানকার শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৭ লাখ৷

ইউএনএইচসিআর-এর হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বাংলাদেশ সফরে এসে গত ২৫ মে রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল কমে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলে যেসব দেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন, সেসব দেশকে রোহিঙ্গাদের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷

রোহিঙ্গাদের কর্মক্ষম করে তুলতে হবে: অধ্যাপক সি আর আবরার

রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কমছে

এখন আফগানিস্তান ও ইউক্রেনের কথা বলা হলেও বাস্তবে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক সহায়তা কখনোই পাওয়া যায়নি৷

২০২১ সালে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান-এর যে হিসাব তাতে দেখা যায় ১০ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাদের জন্য মোট ডোনারদের সহায়তা প্রয়োজন ছিল ৯৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ দিয়েছে ৬৭৪ মিলিয়ন ডলার. যা প্রয়োজনের তুলনায় ২৮ ভাগ কম৷ ২৬৯ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাওয়া যায়নি৷ ২০১৭ সালে প্রয়োজন ছিল ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার, পাওয়া গেছে ৩১৭ মিলিয়ন ডলার৷ ২০১৮ সালে ৯৫১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬৫৫ মিলিয়ন ডলার৷ ২০১৯ সালে ৯২০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬৯৯ মিলিয়ন ডলার৷ ২০২০ সালে ১০৫৮ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে পাওয়া গেছে ৬২৯ মিলিয়ন ডলার৷

এখানে স্পষ্ট যে, ২০২০ সালের পর থেকে প্রতিশ্রুত সহায়তাও কমছে এবং প্রতিশ্রুত সহায়তার ৭০ ভাগের বেশি গড়ে কখনোই পাওয়া যাচ্ছে না৷

বাংলাদেশের করণীয়

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট ইউনিট (রামরু)-র সাবেক চেয়ারপার্সন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো উদ্যোগের গুণগত অগ্রগতি আমরা এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি৷ তারা নিজেদের স্বার্থই দেখছে৷ আর এখন নতুন বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কমে আসছে৷ এটার জন্য বাংলাদেশের ওপর চাপ পড়ছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর দায় নিতে হবে৷ তারা দায়িত্ব এড়াতে পারেন না৷’’

তিনি মনে করেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তৎপরতা জোরদার করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে এই সমস্যাটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে৷ আমি মনে করি, সহসাই এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না৷ তাই রোহিঙ্গাদের এখানে কর্মক্ষম করে তুলতে হবে৷ তাদের শিক্ষিত এবং দক্ষ করার জন্য নতুন নীতি নিতে হবে৷ শরণার্থী কমিউনিটিকে যুক্ত করে এখন কাজ করতে হবে৷ তাদের স্বীকৃতি দিতে হবে যে, তাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে তারাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷’’

আর সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা বিষয়টি যেন সবাই ভুলে যেতে বসেছেন৷ এমনকি বাংলাদেশও যেন ভুলে যাচ্ছে৷ সবাই যেন মনে করছে, রোহিঙ্গাদের থাকার একমাত্র জায়গা বাংলাদেশ৷ তা না হলে ভারত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠাচ্ছে৷ বাংলাদেশের কোনো উচ্চবাচ্য নেই৷’’

তার কথা, ‘‘ইউরোপ এখন ইক্রেনের শরণার্থীদের নিয়ে আছে৷ কিন্তু পাঁচ বছর ধরে যে রোহিঙ্গারা এখানে আছে, তা নিয়ে তাদের ভাবনা নেই৷ বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট বলে আমি মনে করি না৷ রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানোই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান৷ তার কোনোই অগ্রগতি নেই৷ আর বাংলাদেশ কত চাপ নেবে? বাংলাদেশকে এখন সর্বোচ্চ জোর দিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো উচিত৷ মিয়ানমারের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিকভাবে আরো বেশি যোগাযোগ বাড়াতে হবে৷’’

সবাই আমাদের আশ্বস্ত করছেন: ডা. এনামুর রহমান

সরকার যা করছে

বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন’ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে এখন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অবস্থান করছেন৷ তিনি সেখান থেকে টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘রোহিঙ্গাদের জন্য যে সহায়তা দেয়া হচ্ছে, তা যেন অব্যাহত থাকে তা নিয়ে আমরা এখন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছি৷ বালিতে জাতিসংঘের ডেপুটি সেক্রেটারি, সাধারণ পরিষদের সভাপতি, ইউএনডিআরআর-এর প্রতিনিধির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে৷ আমি সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য বলেছি৷ তারা বলেছেন, যে সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে৷’’

তিনি ইউএনএইচসিআর-এর রোহিঙ্গা বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান৷ ফিলিপ্পো গ্রান্ডি প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা যাতে না কমে সেজন্য তারা অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে বলছি, বোঝানোর চেষ্টা করছি যে বাংলাদেশ একটি ছোট্ট দেশ৷ আমরা এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশন করে মাত্র ডেভেলপিং কান্ট্রিতে যাচ্ছি, তাই রোহিঙ্গাদের সহায়তা কমে গেলে আমাদের জন্য অসুবিধা হবে৷ আমরা চাপে পড়বো৷ সবাই আমাদের আশ্বস্ত করছেন৷’’

এদিকে শুক্রবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভারতে ফেরত পাঠানোর কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ভারত থেকে কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না৷ রোহিঙ্গারা যখন যে রাষ্ট্রে থাকবে, সেখানেই থাকবে৷ আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি৷ অন্যান্য রাষ্ট্রও তা করবে৷ ইতোমধ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে বলে দেয়া হয়েছে, ভারত থেকে কোনো রোহিঙ্গা প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের যেন ফেরত পাঠানো হয়৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য