রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত থাকবে
১৭ নভেম্বর ২০২২গতকাল বুধবার সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে গৃহীত রেজল্যুশনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার পরিস্থিতিও উঠে আসে।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে এই প্রস্তাব উত্থাপন করে। ১০৯টি দেশ এ প্রস্তাবে সহ-পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, যা ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ।
ওই প্রস্তাবে মিয়ানমারে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেখানকার রোহিঙ্গা মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে।
রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করার পাশাপাশি রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সবগুলো মানবাধিকার ব্যবস্থাপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে রেজুলেশনে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "রোহিঙ্গাদের উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ন্যায় বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ, আইসিসি, আইআইএমএম ও অন্যান্য দায়বদ্ধতা নিরূপণকারী ব্যবস্থার সাথে যেভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে তা প্রসংশিত হয়েছে এতে।
‘রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং' নীতির আওতায় বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর প্রতিও আহ্বান জানানো হয়েছে এবারের রেজুলেশনে।
সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি গৃহীত হওয়ার সময় বাংলাদেশের শার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স মো. মনোয়ার বলেন, "প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি পাওয়ার দাবি রাখে। এই মানবিক সাড়াদান প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন প্রয়োজন।"
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিন ধরে অবস্থানের সমস্যার কথা তুলে ধরে মনোয়ার হোসেন বলেন, "আমরা মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম, ব্যস্তচ্যুত এ জনগোষ্ঠীর সবসময়ই মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয়- উভয় ফ্রন্টে বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে, যাতে মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।"
এছাড়া মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে আঞ্চলিক দেশ ও সংস্থাগুলো– যেমন আসিয়ান এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে সর্বসম্মতিক্রমে আসিয়ান গৃহীত পাঁচ দফা সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে।
এছাড়া চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরুপণ প্রক্রিয়ার ওপর সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি এবং আন্তজার্তিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশনের তদন্তকেও স্বাগত জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের এ রেজুলেশনটি রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি বিভিন্ন অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি প্রকাশের একটি অনন্য উদাহরণ। মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাওয়ায় দেশটিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত হচ্ছে যা ‘উদ্বেগজনক'।
বাংলাদেশে প্রায় ১১ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা আছে। মিয়ানমারের অনীহার কারণে তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এদিকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
একেএ/ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)