1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রোবট তৈরিতে এগিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

৫ জুলাই ২০১০

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তো আমরা কত পড়েছি৷ সেসব বৈজ্ঞানিক কল্প কাহিনীগুলো কখনই যেন পূর্ণতা পায় না রোবট ছাড়া৷ কিন্তু আধুনিক জগতের মানুষ সেসব কল্পকাহিনীর রোবট তৈরি থেকে এখনও অনেক দুরে রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/OAU2
নাস্তা নিয়ে যাচ্ছে রোবটছবি: AP

বাড়ছে রোবটের ক্ষমতা

মানুষের চেষ্টা কিন্তু থেমে নেই৷ প্রতিনিয়তই মানুষ রোবট তৈরির দিকে একটু একটু করে এগুচ্ছে৷ আধুনিক জীবনের প্রয়োজনেই যান্ত্রিক সহায়তা দরকার৷ তাই বিশ্বের নানা দেশে তৈরি হচ্ছে একেক ধরণের যান্ত্রিক প্রাণ৷ যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সম্প্রতি বেশ এগিয়ে গেছেন রোবট তৈরির ক্ষেত্রে৷ তারা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছেন রোবটের মান কিভাবে আরও বাড়ানো যায়৷ সাধারণ ভাবে এখন পর্যন্ত যেসব রোবট তৈরি হয়েছে সেগুলো বড়জোর নির্দিষ্টভাবে পা চলাতে পারে, তবে সেটাকে ঠিক হাঁটা বলা চলে না৷ তবে ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির ডাইনাকিম রোবটিকস ল্যাবরেটরির গবেষকরা রোবটিক মেকানিজমকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করেছেন৷ ফলে তাদের তৈরি রোবট এখন হাঁটতে পারে, দৌড়াতে পারে এমনকি প্রয়োজনে নিজের থেকে একটু শক্তিও ব্যবহার করতে পারে৷ গবেষকরা আশা করছেন, রোবটের নিজ থেকে নড়াচড়া এবং শক্তি প্রয়োগের সক্ষমতা তৈরি হলে রোবটকে আস্তে আস্তে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে৷ এছাড়া একজন পঙ্গু মানুষকে হাঁটতে শেখানোর কাজেও যাতে রোবট সাহায্য করতে পারে সেটিও গবেষকদের উদ্দেশ্য৷ অর্থাৎ সামরিক ও বেসামরিক উভয় উদ্দেশ্যে রোবটকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রোবটকে গতিশীল করে তুলতে হবে৷

BdT Deutschland Bundeswehr Roboter
জার্মান সেনাবাহিনী এই ধরণের রোবট ব্যবহার করছেছবি: AP

গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির সহকারী অধ্যাপক জোনাথন হার্স্ট বলেন, রোবটের গতি তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে কাজ করে চলেছেন৷ আমরা যা করেছি তার ফলে রোবটের মেকানিক্যাল সিস্টেমের মৌলিকত্ব বোঝার ক্ষেত্রে আমরা একধাপ এগিয়ে গেলাম৷ উল্লেখ্য, বর্তমানে যেসব রোবট রয়েছে সেসব রোবট খুব বেশি নড়াচড়া করতে পারে না৷ মেশিনের সাহায্যে তারা হয়তো কোন বস্তু ধরতে পারে৷ অনেক রোবট রয়েছে যারা সমান জায়গায় চলতে ফিরতে করতে পারে কিংবা কোন কিছু ধরে রাখতে পারে৷ জোনাথন হার্স্ট বলেন, মানুষ কিংবা একটি প্রাণী যেভাবে নড়াচড়া করে তা অনুকরণ করা খুবই দুঃসাধ্য একটি বিষয়৷ এদিকে আরও গবেষণার জন্য সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের হিউম্যান ফ্রন্টিয়ার্স সায়েন্স প্রোগ্রামের কাছ থেকে ইতিমধ্যে সাড়ে সাত লাখ ডলার অনুদান পেয়েছে৷

নতুন রোবট ফড়িং

এদিকে মার্কিন বিজ্ঞানীদের আগে আরেক আশার খবর দিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের এক বিজ্ঞানী৷ সুইজারল্যান্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইপিএফএল-এ কর্মরত ড. মিরকো কোভাক ও তার সহযোগীরা সম্প্রতি তৈরি করেছেন নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি ঘাসফড়িং রোবট৷ এই ঘাসফড়িং রোবট ঘাসের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সক্ষম৷ তাঁর এই জাম্পিং রোবটের আকার ঘাস ফড়িং এর সমান না হলেও খুব একটা বড় নয়৷ মিরকো কোভাক ও তার সহযোগী গবেষকরা নতুন যে মেকানিজম আবিষ্কার করেছেন তার ফলে এই ঘাস ফড়িং রোবট গাছ কিংবা এই ধরণের কোন বস্তু লক্ষ্য করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে এবং তারওপর স্থির হয়ে বসতে পারে৷ এক্ষেত্রে ফড়িং রোবটটি তার পায়ে লাগানো ধারালো শুঁড় ব্যবহার করে৷ এবং তার পর নির্দেশ দিলে সে আবার সামনে এগিয়ে যেতে পারে৷ মূলত চলন্ত একটি রোবটের এই স্থির হয়ে বসা এবং লেগে থাকা বস্তু থেকে আলাদা হওয়া নিয়ে অনেকদিন ধরেই গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা৷ কারণ ফড়িং যেভাবে হঠাৎ করেই একজায়গায় থেমে বসে যেতে পারে, এবং পরক্ষণেই আবার ওড়া শুরু করতে পারে তা যন্ত্রের মধ্যে নিয়ে আসা কারিগরী দৃষ্টিকোণ থেকে অনেক কঠিন৷ সুইস বিজ্ঞানী মির্কো কোভাক সেই ক্ষেত্রে যে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন, তা বলা যায়৷

JAPAN ROBOT MINI COPTER
জাপানি সিকো কোম্পানির তৈরি মিনি কপ্টার, যা এক ধরণের উড়ন্ত রোবটওছবি: AP

নতুন আবিষ্কার নিয়ে কোভাকের মন্তব্য, আমরা প্রকৃতিকে একবারে পুরোপুরি অনুকরণ করছি না, তবে তার মূল নীতিটিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছি৷ কোভাকের পরিকল্পনা হলো, তার এই যান্ত্রিক ফড়িং এর আকার আরও ছোট করা৷ এতে থাকবে নানা ধরণের সেন্সর এবং ক্যামেরা৷ দুর্গত যে কোন এলাকায় এই ধরনের রোবট ফড়িং পাঠিয়ে সেখানকার অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে৷ বিজ্ঞানীদের এসব আশা যদি পুরণ হয়, এবং তাদের আবিষ্কার এইভাবে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে বোধহয় আর বেশি দিন বাকি নেই যখন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সেসব চিত্র আমাদের চোখের সামনে সত্য হয়ে হাজির হবে৷

প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক