রোবট ‘অনুভব’ করতে শিখছে
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করে তুলতে এদের ডিজাইন করা হয়েছে৷ মানুষের পেশিশক্তির কাজ তারাই করবে, দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করবে, সমাজে বয়স্ক মানুষদের সেবা করবে, যাদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷
‘সোশাল রোবটিক্স’ আমাদের ভবিষ্যতের জানালা৷ তবে আরও যান্ত্রিক করে তোলার বদলে রোবটকে আমাদের সহযোগী করার চেষ্টা চলছে৷
মিউনিখের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক নতুন ধরনের রোবট সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ সান্ড্রা হিয়র্শে যতটা সম্ভব মানুষের আদলে রোবট তৈরির চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অচেনা পরিবেশে মুভমেন্ট বা নড়াচড়া অত্যন্ত জটিল এক কাজ৷ আমরা যখন শহরের মধ্য দিয়ে অথবা একটা ঘরের মধ্যে হাঁটি, অথবা গাড়ি চালিয়ে কোনো লক্ষ্যে পৌঁছাই, তখন অনেকগুলি প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে চলে৷ কোনো রোবটকে তার জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা করলে বোঝা যায়, সেই সব কাজ আসলে কতটা জটিল৷’’
রোবট যদি কোনোদিন আমাদের বাড়ির চেনা পরিবেশের অংশ হয়ে ওঠে, তাদের সবার আগে উপলব্ধি করতে শিখতে হবে৷ মানুষ ও নানা বস্তু চারিপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও তাদের অবস্থান বদলাচ্ছে৷ ফলে রোবটের নিজস্ব স্পেসও সমানে বদলে চলেছে৷
এখনো পর্যন্ত শিল্পক্ষেত্রের রোবট ও আমাদের মতো মানুষদের পরস্পরের থেকে দূরে রাখা হয়েছিল৷ তারা আমাদের শরীরে আঘাত করতে পারে, এমন বিপদের আশঙ্কা কম নয়৷ কোনো কিছু কাছে এলে রোবটকে তা বুঝতে হবে৷ সেই লক্ষ্য পূরণ করতে ইঞ্জিনিয়ার ফিলিপ মিটেনডর্ফার এক কৃত্রিম ত্বক তৈরি করছেন৷
ছোট ৬ কোণা প্লেটলেট-এর একটি গ্রিড রোবটের হাত ঘিরে রয়েছে৷ সেগুলিতে ইনফ্রারেড সেন্সর লাগানো আছে৷ এক সেন্টিমিটারের চেয়ে কম দূরত্বে কিছু এলেই সেন্সর টের পায়৷
কৃত্রিম ত্বক মানুষের ত্বকের নকল করবে, সেভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে৷ তবে এত জটিল কাঠামো নকল করা সত্যি কঠিন কাজ৷ লক্ষ লক্ষ ইন্দ্রিয় কোষের দৌলতে মানুষ বাতাসের সামান্য ছোঁয়াও টের পায়৷ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ফিলিপ মিটেনডর্ফার এ বিষয়ে বললেন, ‘‘সম্প্রতি আমাদের শরীরে কিছু বিশেষ ধরনের রিসেপ্টর আবিষ্কৃত হয়েছে, যার সঙ্গে আমাদের স্বাচ্ছন্দ্য বোধ জড়িয়ে রয়েছে৷ হালকা করে হাত বোলানো বা আলিঙ্গনের মতো সামাজিক যোগাযোগ শনাক্ত করে সেগুলি৷ মানুষ কাছে এলে রোবটকেও এমন স্টিমুলাসের প্রতিক্রিয়া দেখাতে শিখতে হবে৷’’
কৃত্রিম কোষের দৌলতে যন্ত্র তার শরীর সম্পর্কে অনুভূতি পাচ্ছে৷ এমন রোবট তৈরি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, যা সহযোগিতা করতে পারে এবং মানুষের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে৷
মানুষও অন্যের চেহারা দেখে তার মতলব বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করে৷ একটি পরীক্ষার আওতায় রোবট ও মানুষ একসঙ্গে একটি টেবিল সরাচ্ছে৷ রোবটকে বুঝতে হবে, তার সহযোগী মানুষটি কোন দিকে এগোচ্ছে৷
একই সঙ্গে রোবট তার আশেপাশের স্পেস বা জায়গা পর্যবেক্ষণ করে বাধা শনাক্ত করে চলেছে৷ কোন দিকে যেতে হবে, সে সেটাও দেখাচ্ছে৷ প্রো. সান্ড্রা হিয়র্শে বলেন, ‘‘কোনো এক সময় রোবট বাসায় সারাদিন ভৃত্যের মতো আমাদের পাশাপাশি থাকবে, কারখানা বা কৃষিকাজেও সঙ্গে থেকে কাজ করবে – এটা একটা বড় স্বপ্ন৷ তবে কোনো রোবট বাসায় ভালো কাজ করছে, এই দৃশ্য দেখতে সম্ভবত আরও ২০ বছর অপেক্ষা করতে হবে৷’’
ধাপে ধাপে যন্ত্র নতুন ক্ষমতা আয়ত্ত করছে ও আশেপাশের পরিবেশ আরও নিখুঁতভাবে অনুধাবন করতে পারছে৷ তারা আমাদের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদানও করছে৷ কোনো এক সময় হিউম্যানয়েড রোবট আমাদের জীবনযাত্রার অঙ্গ হয়ে পড়বে৷