রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাপ
১৪ অক্টোবর ২০১৭রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে সম্প্রতি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে আনানের কমিশন৷ শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকারকে অবশ্যই রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে৷
‘‘প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের ঘরে ফিরে যেতে সহায়তা দরকার৷ তাঁদের মিয়ানামারে ফিরে কোনো ক্যাম্পে অবস্থান করা উচিত হবে না", বলেন কোফি আনান৷
নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন
গত কয়েক সপ্তাহে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন৷ জাতিসংঘ মনে করে, সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ‘সিস্টেমেটিক' হামলা থেকে বাঁচতে দেশত্যাগে বাধ্য হন এ সব মানুষ৷
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ অবশ্য বলছে, গত ২৫ আগস্ট ৩০টি পুলিশ চৌকিতে হামলার ঘটনার পর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে সেদেশের নিরাপত্তা বাহিনী৷ জাতিসংঘের দাবি করা ‘জাতিগত নির্মূলের' ঘটনা রাখাইনে ঘটছে না বলেও দাবি করেছে মিয়ানমার৷
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সম্মত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন কোফি আনান৷ এ জন্য মিয়ানমারে তাঁদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি জোর দিয়ে আনান সবাইকে সতর্ক করে বলেন যে, অন্যথায় বিশ্ব সম্প্রদায় এক দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার মধ্যে পড়বে৷
অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি
এদিকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী শুক্রবার জানিয়েছে যে, গত আগস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর পরিচালিত অভিযানে কোনো আইনবহির্ভূত ঘটনা ঘটেছে কিনা - তা খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু হয়েছে৷ তবে সেই অভিযান বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সংবিধান মেনেই পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী৷ ওদিকে দেশটির বেসামরিক নেতা অং সান সু চি বৃহস্পতিবার বলেছেন যে, রাখাইন রাজ্যে আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সহায়তা কার্যক্রম দেখভালের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷
নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় কোফি আনানের প্রস্তাবকে সমর্থন করেন ফ্রান্সের প্রতিনিধি৷ তবে জাতিসংঘ মিশনে থাকা চীন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিরা এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি৷
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গারা গত কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইনে বসবাস করলেও সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায় তাঁদের মিয়ানমারের নাগরিক মনে করে না৷ সেদেশের সরকারও মনে করে যে, রোহিঙ্গারা আসলে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে যাওয়া অভিবাসী৷ দেশটিতে ১৯৮২ সালে করা নাগরিকত্ব আইনের আওতায় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়৷ ফলে রোহিঙ্গারা এক রাষ্ট্রহীন সম্প্রদায়ে পরিণত হয়৷
এআই/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি, এপি)