রোহিঙ্গা নিয়ে উভয় সংকটে বাংলাদেশ
৭ ডিসেম্বর ২০১৭জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো যাবে না৷ যখন তাঁরা নিরাপদ বোধ করবেন, কেউ যখন তাঁদের জোর করে কোথাও যেতে বাধ্য করবে না, কেবল তখনই তাঁরা নিজের দেশে ফিরে যাবেন৷ জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নিউইয়র্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছেন৷
এর আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রাদ আল হোসাইন জেনেভায় বিশেষ মানবাধিকার অধিবেশনে বলেছেন, কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করে পূর্ণ প্রস্ততি ছাড়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানো ঠিক হবে না৷ কাউকেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফেরত পাঠানো যাবে না৷ যদি সেখানে তাঁদের নিরাপত্তা, সম্মান, অধিকার নিশ্চিত না হয় এবং মুক্ত বোধ না করেন, তাহলে তাঁদের ফেরত পাঠানো যায় না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি জাতিসংঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, তাদের দু:খ কষ্ট নিয়ে আরো উচ্চকিত হতে বলব৷ তাঁরা মিয়ানমারে যে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, একই সঙ্গে বাংলাদেশে যে করুণ অবস্থায় আছে, দুটোই তুলে ধরতে হবে৷''
অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বড় ধরনের নিরাপত্তার সংকট তৈরি করতে পারে৷'' তারা বলছে, ‘‘জঙ্গি দলে ভেড়ানোর জন্য উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের টার্গেট করা হচ্ছে৷'' তারা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্যে আরসা'র রিক্রুটমেন্টের কথাও বলেছে৷ বাংলাদেশকে ব্যবহার করে আরসা আন্তঃসীমান্ত হামলার দিকেও যেতে পারে৷
আইসিজি মনে করে, রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতন মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে৷ মিয়ানমারে আল কায়েদা , আইএস, জিহাদী গ্রুপগুলোকে হামলার আহ্বান জানাচ্ছে তারা৷
বংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ কোনোভাবেই জোর করে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে না৷ আমার সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একদিন আগেও কথা হয়েছে৷ বাংলাদেশ কোফি আনান কমিশনের আলোকেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায়৷ আর তাই এখানে শর্ত তিনটি৷ এটি নিরাপদ হতে হবে, স্থায়ী হতে হবে এবং দ্রুত হতে হবে৷ রোহিঙ্গাদের পুড়িয়ে দেয়া বাড়িঘর নির্মান করে দিতে হবে, তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তাদের জন্য সেফ জোন তৈরি করতে হবে৷ বাংলাদেশ এই নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায়৷''
তিনি রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বড় ধরনের নিরাপত্তা সংকট প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যদি এরকম হয় তা শুধু বাংলাদেশ নয়, মিয়ানমার, চীন, ভারত সবার জন্যই হবে৷ তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে তাদের জীবন মান এবং বর্তমান অবস্থার উন্নয়নে সহায়তা করা৷ তারা যাতে নিরাপদে নিজ দেশে ফেরত গিয়ে অধিকার নিয়ে থাকতে পারে, তার ব্যবস্থা করা৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তবে এটা নিয়ে এক ধরনের প্রচারণা আছে৷ এখানে জঙ্গি তৎপরতা বাড়বে বলে যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা অনেকটা বাড়িয়ে বলা হচ্ছে৷ বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা এসেছেন তাঁরা নিরীহ এবং সাধারণ৷ অল্পকিছু বিদ্রোহী বা আরসা থাকলেও থাকতে পারে৷ তবে তারা এখানে সক্রিয় হতে পারবে বলে মনে হয় না৷ বাংলাদেশের নজরদারী অত্যন্ত জোরালো৷''
এদিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. এস এম ইকবাল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত কোনো নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়নি৷ আশা করি ভবিষ্যতেও হবে না৷ আর আমরা নানা ধরনের পদক্ষেপ ও নজরদারীর ব্যবস্থা নিয়েছি৷''
স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক মাসে টেকনাফ ও উখিয়া থানা পুলিশ রোহিঙ্গাদের সংঘটিত অন্তত ৩০টির মতো অপরাধের ঘটনা রেকর্ড করেছে৷ আর হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাথে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন থেকেপালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে৷ তাদের ফেরত নিতে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে৷
এ বিষয়ে আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷