জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা
১ মে ২০১৩পড়াশোনার পাশাপাশি জন্মস্থান রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে জার্মানভাষী কোম্পানিতে কাজ করতেন এই কম্পিউটার বিজ্ঞানী৷ তবে তাঁর লক্ষ্য ছিল জার্মানিতে যাওয়া৷ জার্মানির পড়াশোনার পরিবেশ সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা ছিল তাঁর মনে৷ গ্রন্থাগারগুলি ভালভাবে সজ্জিত, কম ভাড়ার ছাত্রাবাস, অল্প টিউশন ফি, পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করার সুবিধা – এসব বিষয় রাশিয়ার চেয়ে একেবারে ভিন্নরকম৷ আর তাই জার্মানিতে ডক্টরেটের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে আবেদন করেন আলেক্সান্ডার৷ জার্মান প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে ফ্রাঙ্কফুর্টের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পেয়েও যান একটি গবেষণার কাজ৷
প্রফেসর মার্টিন কাপেস আলেক্সান্ডারের যোগ্যতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘‘রাশিয়ার ছাত্ররা জার্মানিতে আসতে আগ্রহী হচ্ছে, কেননা এখানে কর্মক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা অনেক বেশি৷ পড়াশোনা চলাকালীন জার্মানিতে এলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে তাদের যোগাযোগটা বাড়ে৷ পরে জার্মানিতে থাকতে চাইলে এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠানে তারা চাকরি পেতে পারে৷''
ছোটবেলার স্বপ্ন
১৮ বছরের আলিনা ২০১২ সাল থেকে জার্মানিতে বসবাস করছে৷ রাশিয়া থেকে এসেছে সে৷ জার্মানিতে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার ইচ্ছা আছে তার৷ আলিনার ভাষায় ‘‘১১ বছর বয়স থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল জার্মানিতে গিয়ে পড়াশোনা করার৷ যতটা সম্ভব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার৷ অর্থ উপার্জন করার৷ কেননা জার্মানি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত উন্নত এক দেশ৷''
এখন আলিনা শ্টুডিয়েনকোলেগ-এর কোর্স করছে৷ অনেকটা কলেজের সমমানের কোর্স এটা৷ বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে হলে এই কোর্স করতে হয়৷ বিশেষ করে যারা স্নাতক পাশ করে আসেনি৷ পরে ফ্রাংকফুর্টের গ্যোটে ইউনিভার্সিটিতে পড়ার ইচ্ছা আছে আলিনার৷ তাঁর শিক্ষিকা ক্রিস্টিনে হার্টভিশ ট্যুরমার রুশ ছাত্রছাত্রীদের অধ্যবসায়ের প্রশংসা করে বলেন, রুশ ভাষাভাষী দেশ থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা শৃঙ্খলার সাথে কাজ করে৷ দৈনন্দিন কাজকর্ম ঠিকঠাক রেখেও পড়াশোনায় মনোযোগী তারা৷ জার্মান ছাত্রছাত্রীদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে এই সব ছেলেমেয়ে৷''
পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি
আরেক রুশ ছাত্রী ২৩ বছরের ভালেরিয়া৷ পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে তিন দিন এক হোটেলের রিসেপশনে কাজ করেন তিনি৷ অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করলেও পড়াশোনায় কোনো অবহেলা করেন না৷ স্বদেশ রাশিয়ায় থাকতেও এতটা অধ্যবসায়ী ছিলেন না, জানান ভালেরিয়া৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘এখানে পড়াশোনাটা নিজ দায়িত্বে করতে হয়৷ তাই আমি পরিশ্রমী হয়ে উঠেছি৷ আমার এই বয়সে পড়াশোনায় আনন্দও পাওয়া যায়৷''
রুশ ছাত্রছাত্রীরা জার্মানিতে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ এক ভিন্নরকমের পরিবেশ পায়৷ মত প্রকাশের ব্যাপারে তারা খুব একটা সোচ্চার নয়৷ শিক্ষকদের প্রতি আনুগত্য অপরিসীম৷ কেননা রাশিয়ায় শিক্ষকদের কথামত চলতে হয় ছাত্রছাত্রীদের৷ সেখানে শিক্ষকদের ক্ষমতা অনেক৷
ক্রিস্টিনে হার্টভিশ ট্যুরমার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শিক্ষকদের মতবাদ বা তাদের অবস্থানের বিপরীতে কিছু যে বলা যায়, তা রাশিয়া থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা ভাবতে পারে না৷ জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা কোনো সমস্যাই নয়৷ এইভাবে দুই সংস্কৃতিই পরস্পর পরস্পরের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারে৷''