রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে কোহলি হলেন বিরাট
২৪ অক্টোবর ২০২২ক্রিকেটের থ্রিলার এরকমই হয়। শেষ বল পর্যন্ত যেখানে কে জিতবে বলা যায় না। যেখানে কোনো এক ক্রিকেটার মাঠে মহাকাব্য রচনা করেন। যেখানে বিরাটকে উপযুক্ত সাহায্য করেন আত্মবিশ্বাসী, হার্দিক পান্ডিয়া। কিন্তু তার ৩৭ বলে ৪০ রানের অতি-মূল্যবান ইনিংসও ম্লান হয়ে যায় বিরাটের সত্যিকারের বিরাট ইনিংসের কাছে।
ঘটনা হলো, পাকিস্তান খুবই ভালো খেলেছে। একসময় বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান অল্প রানে আউট হওয়ার পরেও শান মাসুদ ও ইফতিকার আহমেদ অর্ধশতরান পাকিস্তানের স্কোর নিয়ে যায় ১৫৯-এ। মেলবোর্নের উইকেটে বল তখন সুইং করছে। পাকিস্তানের কাছে শাহিন আফ্রিদি, হ্যারিস রাউফ, নাসিম খানের মতো বোলাররা আছে, যারা এই পরিস্থিতিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন এবং হলেনও। ভারতের ৩১ রানে চার উইকেট পড়ে গেল ছয় দশমিক এক ওভারে।
তখন মনে হচ্ছে, আবার লজ্জার হারের মুখে পড়তে চলেছে ভারত। কিন্তু সব হিসাব উল্টে দিলেন বিরাট। তাকে যোগ্য সহযোগিতা করলেন পান্ডিয়া।
বিরাটের ইনিংস
তার ফর্ম হারানো নিয়ে চিন্তিত ছিল ভারতের ক্রিকেট অনুরাগীরা। চিন্তিত ছিলেন তিনি নিজেও। কিন্তু কিছুদিন হলো তার ব্যাটে আবার রান আসছিল। আগের মতো না হলেও রান পেতে শুরু করেছিলেন বিরাট কোহলি। আর ঠিক সময়ে ভারত-পাক মহারণে জ্বলে উঠলেন তিনি।
শুরুটা অবশ্য ধীরে করেছিলেন কোহলি। ২১ বলে ১২ রান করেছিলেন। পাকিস্তানের বোলাররা তখন উইকেটে ঝড় তুলছেন। সেই জায়গা থেকে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন।
কোহলি ম্যাচের পর জানিয়েছেন, চরম উত্তেজনা তো ছিলই, সেই সঙ্গে অঙ্ক কষে খেলেছেন তিনি। অঙ্কটা হলো, নওয়াজকে দিয়ে শেষে এক ওভার বল করাতে হবে বাবর আজমকে। সেই ওভারে যত পারো রান তুলে নাও। তার আগে হ্যারিসকে পেটাও।
১৮ তম ওভারে শাহিন আফ্রিদিকে তিনটি চার মারেন বিরাট। তখন বাকি দুই ওভার। দরকার ৩১ রান। ১৯ তম ওভারে বল করছেন রউফ। তাকে ফাইন লেগের উপর দিয়ে ছয় মারলেন বিরাট, যা দেখে শিহরিত হলেন মেলবোর্নের ৯০ হাজারের বেশি দর্শক।
শেষ ওভারে বাকি ১৬ রান। বল করছেন নওয়াজ। প্রথম বলে ছয় মারতে গিয়ে আউট পান্ডিয়া। দীনেশ কার্তিক এক রান নিয়ে কোহলিকে স্ট্রাইক দিলেন। কোমরের উপরে বলটিতে ছয় মারলেন কোহলি। নো বল। ফ্রি হিট। ওয়াইড করলেন নওয়াজ। আবার ফ্রি হিট। পরের বল উইকেটে লেগে বাউন্ডারির দিকে। তিনটি বাই রান নিলেন কোহলিরা। কিন্তু তার পরের বলে দীনেশ কার্তিক আউট।
এলেন অশ্বিন। মাথা ঠান্ডা রাখলেন। শেষ বলে দুই রান করতে হবে। এই সময় প্লেয়াররা লেগের দিকে সরে গিয়ে মারতে যান। অশ্বিন তা করেননি। বলটি লেগস্টাম্পের বাইরে ছিল। ফলে ওয়াইড। শেষ বলে এক রান দরকার। সব ফিল্ডার সামনে। অশ্বিন শেষ বলটা তাদের মাথার উপর দিয়ে পাঠালেন। ভারত জয় পেল।
অপর প্রান্তে উত্তেজিত বিরাট মাঠে দুইবার ঘুষি মেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন। তারপর চাইলেন আকাশের দিকে। পরে বলছিলেন, তার বলার মতো ভাষা নেই।
জিতেই কলকাতায় ফোন
জয়ের পরেই কলকাতায় স্ত্রী অনুষ্কাকে ফোন বিরাটের। অনুষ্কা কলকাতায় শুটিং করছেন। জয়ের পরেই মেয়েকে নিয়ে পাগলের মতো নেচেছেন।
কলকাতা তো দাদা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের শহর। সাবেক বিসিসিআই সভাপতি জয়ের পর অভিনন্দন জানালেও বিরাটের নাম মুখেও আনলেন না।
বিতর্ক
ফ্রি হিটের বলে বল উইকেটে লেগে বাউন্ডারির দিকে যায়। বিরাট ও দীনেশ কার্তিক তিন রান নেন। আম্পায়ার বাই দেন। পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছিলেন। তাদের দাবি ছিল, উইকেটে বল লাগার পর তা ডেড হয়ে যায়। তখন আর রান নেয়া যায় না।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ব্র্যাড হগও টুইট করে একই কথা বলেছেন।
কিন্তু আইসিসি-র নিয়ম হলো, বল উইকেট কিপার বা বোলারের হাতে এলে তা ডেড বল হয়। নচেৎ নয়। আম্পায়ারও সেই আইন অনুসরণ করেছেন।
দুর্বলতা ও প্রাপ্তি
দুই দলেরই ওপেনিং জুটি ব্যর্থ। দুই অধিনায়ক ব্যর্থ। ভারত তো দ্রুত চার উইকেট হারায়। যে দীনেশ কার্তিককে ফিনিশার হিসাবে দলে নেয়া হয়েছে, তিনিও ব্যর্থ।
প্রথম দশ ওভারে ভারতীয় বোলাররা খুবই ভালো বল করেছেন। কিন্তু পরের দশ ওভারে প্রচুর রান দিয়েছেন। অক্ষর প্যাটেল এক ওভারে ২১ রান দেয়ার পর তাকে দিয়ে আর বল করাননি রোহিত।
তবে দিনটা ছিল বিরাটের। বাকিদের ব্যর্থতা তিনি ঢেকে দিয়েছেন। প্রায় প্রতিটি ক্রিকেটারের এমন স্বপ্নের দিন আসে। যেদিন তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন। যেমন বিরাট হয়ে উঠেছিলেন রোববার।
জিএইচ/এসজি (স্টার স্পোর্টস)