রিকশাচালক থেকে তিন চাকার তারকা
৭ অক্টোবর ২০০৮এভাবেই ঢাকা শহরের আরো দশ লাখ রিকশাচালকের মতোই দিন কাটছিলো তার৷
কিন্তু অতি সাধারণ এই ওমর আলীই এখন রীতিমতো তারকা বনে গেছেন৷ রিকশা যাত্রীদের দুয়েকজনও এখন তাকে একটু আধটু চিনতে শুরু করেছে৷ না আলাদীনের কোন চেরাগের কল্যানে নয়, নিজেরই সুপ্ত প্রতিভার জানান দিয়ে পল্লীগীতির প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডে উঠে গেছেন তিনি৷
বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় প্রচারিত রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের জন্য ট্যালেন্ট হান্ট শো ম্যাজিক তিন চাকার তারকা-র তিন ফাইনালিস্টের একজন ৪৫ বছর বয়সী ওমর আলী৷ তরুণ বয়সে দেশের উত্তরাঞ্চলে কোন এক গ্রামে মোষের গাড়ি চালাতেন তিনি৷ রেডিওতে গান শুনে তা শেখার আগ্রহ বরাবরই৷ ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ঢাকায় এসে তিন চাকার রিকশার প্যাডেলে পা রাখেন ওমর৷ সেই থেকে ২৫ বছর ধরে রিকশাই তার ভরসা৷ পা দুটো যেন এখন ইস্পাতের টুকরো৷ দিনে ১২ ঘন্টা রিকশা চালিয়ে আয় হয় দেড় থেকে দুশ টাকা৷ তাই দিয়ে চলে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ৪ জনের সংসার৷ এরমধ্যেই গলা ছেড়ে গান গেয়ে একটু আনন্দ পাওয়া৷
ওমর আলীর কথায়, আগে গ্রামে থাকতে মোষের গাড়ি চালাতে চালাতে গান গাইতেন৷ আর এখন ঢাকা শহরের অসহনীয় যানজটে পড়ে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টায় তার গলায় সুর বেজে উঠে৷ তাই শুনে যাত্রীরাও বেশ খুশি হয়৷ মুগ্ধ হয়ে কখনোবা ভাড়ার সঙ্গে বাড়তি দুয়েক টাকাও দিয়ে দেয় যাত্রীরা৷
ওমর আলীর মতো এরকম অসংখ্য রিকশা কিংবা অটোরিকশা চালকদের রয়েছে গানের প্রতিভা৷ তাদের খুঁজে বের করতেই এটিএন বাংলার তিন চাকার তারকার আয়োজন৷ আর এ বিষয়ের উদ্যোক্তা সনামধন্য রিপোর্টার মুন্নী সাহা৷ ঢাকার বাইরে একটি স্কুলের মাঠে রিকশা চালকদের নিয়ে গানের অনুষ্ঠান দেখেই তাঁর মাথায় আসে এই চিন্তা৷ তিনি জানালেন, নিম্ন আয়ের এসব মানুষের জন্য তেমন কিছুই তো করা যাচ্ছে না৷ কিন্তু রিকশা চালকদের অনেকেরই চমত্কার কন্ঠ রয়েছে৷ এই শিল্পীদের মেধা বিকাশে তো সাহায্য করা উচিত্৷
এ ব্যাপারে টেলিভিশন চ্যানেলের সমর্থন পেয়ে রিকশার পেছনে পোস্টার লাগিয়ে ট্যালেন্ট হান্টের বিজ্ঞাপন দিলেন৷ সাড়াও পড়ে প্রচুর৷ অডিশন রাউন্ডে নাম লেখায় ৩০০০ রিকশা চালক৷ ঢাকার ৪টি ভেন্যুতে চলে প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া৷ বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে উঠে আসে ২০ জন৷ এখন চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ৩ গাইয়ে৷
সেপ্টেম্বরের প্রতি সপ্তাহে টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পর্ব৷ এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনুষ্ঠানটি৷ বাংলাদেশ ছাড়াও ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রবাসী দর্শকদেরও মন কেড়েছে এই প্রতিযোগিতা৷ ৩১শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে চূড়ান্ত পর্ব৷ জনপ্রিয় গায়িকা মমতাজসহ ৩ বিচারকের চূল চেড়া রায়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে এসএমএসে জনগণের রায়৷ এ দুয়ের ভিত্তিতেই উঠে আসবেন তিন চাকার তারকা৷ এই ট্যালেন্ট হান্ট শো জনপ্রিয় হওয়ায় প্রতি বছর এরকম প্রতিযোগিতা করার আশা করছেন আয়োজকরা৷
তিন চাকার তারকার চ্যাম্পিয়ন পাবেন নগদ ১ লাখ টাকা পুরস্কার৷ সেইসঙ্গে তার একক অ্যালবামও বের করা হবে৷ আর শীর্ষ দশ শিল্পীকে নিয়ে বের করা হবে গানের সিডি৷
প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত রাউন্ডে পৌঁছে ওমর আলীর চোখে এখন খেলছে রঙিন স্বপ্ন৷ বয়স হয়েছে তার৷ এতো পরিশ্রম আর শরীরে কুলোচ্ছে না৷ তাই বিজয়ী হলে এই হাড়ভাঙ্গা খাটুনি ছেড়ে দেবেন৷ নিজের ছোট্ট একটা ব্যবসা শুরু করার স্বপ্ন সফল করতে চূড়ান্ত পর্বের জন্য নিজেকে আরো প্রস্তুত করছেন ওমর আলী৷