রাশিয়া-ইউক্রেনে উত্তেজনা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ইউক্রেনের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট ওলেক্সান্দর তুরচিনভকে রুশ সেনাদের হুশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, তারা যদি ক্রাইমিয়া অঞ্চলে নৌ-ঘাঁটি ত্যাগ করে তবে তা সেনা-আগ্রাসন হিসেবে গণ্য হবে৷ রাশিয়ার একটা বিশাল নৌ-ঘাঁটি রয়েছে ক্রাইমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে৷ গত দুই দশকে ধরে দু'দেশের মধ্যে অঞ্চলটি ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
বুধবার রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং বেশিরভাগ ইউনিটকে রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ প্রস্তুত রয়েছে দেড় লাখ সেনা, ৮৮০টি ট্যাংক, ৯০টি বিমান এবং ৮০টি জাহাজ৷ রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিকটবর্তী কৃষ্ণ সাগরে নিজের নৌ-ঘাঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ তবে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর উদ্দেশ্যে তাদের এই প্রস্তুতি নয়, নিজেদের প্রতিরক্ষার খাতিরেই তারা এটা করছে৷ ইউক্রেনের নতুন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুটিন৷ ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের রুশ ভাষাভাষিরা হুমকির মুখে রয়েছে বলে দাবি করেছে রুশ কর্তৃপক্ষ৷
বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চলে স্থানীয় সরকারি ভবনগুলোর দখলে নেয় রুশপন্থিরা৷ পুলিশকে হঠিয়ে ভবনে রুশ পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে তারা৷ যে মানুষগুলো পার্লামেন্ট ভবন দখল করেছে তারা এখনো কোনো দাবি দাওয়া জানায়নি৷ তবে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে জবাবে তারা তাদের দিকে ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ছুড়ে দেয়৷ তাদের গায়ে কালো ও কমলা রঙের রিবন জড়ানো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার জয়ের প্রতীক ছিল এটি এবং তারা একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরে যেখানে লেখা ‘ক্রাইমিয়া ইজ রাশিয়া'৷
রাশিয়াপন্থি ম্যাক্সিম নামে এক ব্যক্তি সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছে, তিনি এবং তাঁর দলের অন্যান্যরা ক্রাইমিয়ার রাজধানীর সিমফেরোপল-এর পার্লামেন্ট ভবনে গিয়ে সেখানে শান্তভাবে অবস্থান নেন এবং ব্যারিকেড তৈরি করেন৷ কিন্তু ভোর ৫টার দিকে অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ৫০-৬০ জন ব্যক্তি পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ করে গোলাগুলি শুরু করে৷ তারা বলে, ‘‘আমরা তোমাদের সাথে আছি৷'' এরপর তারা গুলি ছুড়তে থাকে এবং সব দরজা ভেঙে ফেলে৷ তাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা সংগঠিত দলের সদস্য৷ পুলিশদের তাড়িয়ে তারা ভবনের দখল নেয়৷ তারা আসলেই কে কেউ জানে না৷
বৃহস্পতিবার এক ফেইসবুক বার্তায় ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর্সেন আভাকভ বলেছেন, অবরুদ্ধ পার্লামেন্ট ভবনের আশপাশের এলাকা পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে৷
ওদিকে ইউক্রেনকে নিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে লড়াই শুরু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, ইউক্রেন বিষয়ে কোনো পক্ষেরই হার-জিতের কিছু নেই৷ বরং সবাই ইউক্রেনকে সমর্থনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ৷ মঙ্গলবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগের সঙ্গে ইউক্রেন বিষয়ে বৈঠকের পর কেরি এ সব কথা বলেন৷
প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পদত্যাগসহ আরো কয়েকটি দাবিতে গত নভেম্বর থেকে ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভে বিক্ষোভ চলছে৷ তবে গত সপ্তাহে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়৷ তিন দিনের বিক্ষোভে অন্তত ১০০ মানুষ নিহত হয়েছে৷
এই সহিংসতার পর ক্ষমতাচ্যুত হন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ৷ তিনি গত রবিবার তিনি রাজধানী কিয়েভ ত্যাগ করে কোথায় গেছেন – সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি৷
এপিবি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)