রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগ আনলো ব্রিটিশ সংসদ
২২ জুলাই ২০২০২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনে রাশিয়ার অনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগের পুরোপুরি নিষ্পত্তি হয় নি৷ এবার ব্রিটেনের রাজনীতিতেও এমন কারচুপির অভিযোগ উঠে এলো ব্রিটিশ সংসদের এক রিপোর্টে৷ শুধু তাই নয়, বিষয়টির তদন্ত করতে ব্রিটিশ সরকারের ব্যর্থতা সম্পর্কেও রিপোর্টে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে৷ সরাসরি ক্ষমতাসীন টোরি দলের উপর রাশিয়ার অনৈতিক প্রভাবের কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ‘অপ্রিয়’ সত্য এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ধনী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দলের ঘনিষ্ঠতার প্রেক্ষাপটে এই প্রশ্ন উঠছে৷ এ বিষয়ে সরকারের ‘কৌতূহলের অভাব’ সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কমিটির সদস্যরা৷ রিপোর্ট প্রকাশে প্রায় ১৫ মাস বিলম্বের কারণেও তাঁরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন
২০১৬ সালে ব্রেক্সিটের প্রশ্নে গণভোটের উপর রাশিয়া অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, এমন সন্দেহের যথেষ্ট কারণ দেখেছেন ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কমিটির সদস্যরা৷ মঙ্গলবার প্রকাশিত রিপোর্টে তাঁরা বিষয়টির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও তদন্তের ফলাফল জনসমক্ষে পেশ করার ডাক দিয়েছেন৷ ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের উপরও রাশিয়া অন্যায়ভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিল বলে কমিটির সদস্যরা সন্দেহ করছেন৷ এমন সংশয়ের প্রমাণের খোঁজে সংসদীয় কমিটিকে সহায়তা করতে পারে নি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ৷ এই প্রশ্ন পাঠিয়ে মাত্র ছয় লাইনের উত্তর পেয়েছেন সংসদ সদস্যরা৷
এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, যে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাতে রাশিয়ার প্রভাবের অভিযোগ সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই নাকি সরকারই গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে এ বিষয়ে জলঘোলা না করার নির্দেশ দিয়েছে? না কি এমন তথ্য ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখা হয়েছে? মঙ্গলবার রিপোর্ট প্রকাশের পর বরিস জনসনের সরকারের এক মুখপাত্র বলেন, ব্রেক্সিট সংক্রান্ত গণভোটের ফলাফল ন্যায্য ছিল৷ তাই নতুন করে তদন্তের কোনো প্রয়োজন নেই৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, সরকার রাশিয়ার হস্তক্ষেপের হুমকি সম্পর্কে দীর্ঘকাল ধরে যথেষ্ট সচেতন৷ ফলে এক মুহূর্তের জন্যও ঢিলেমির কোনো প্রশ্নই উঠছে না৷
ব্রিটিশ সংসদের রিপোর্ট অনুযায়ী শুধু নির্বাচনে হস্তক্ষেপ নয়, বৈরি শক্তি হিসেবে রাশিয়া পশ্চিমা বিশ্বে গুপ্তচরবৃত্তি থেকে শুরু করে সাইবার অপরাধ, অর্থ পাচারের মতো নানা ক্ষতিকর কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে৷
বলা বাহুল্য, রাশিয়া ব্রিটিশ সংসদের এমন অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে৷ ব্রিটিস সংসদের রিপোর্ট প্রকাশের আগেই ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ বলেন, রাশিয়া বিশ্বের কোনো দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কখনো হস্তক্ষেপ করেনি৷ উল্লেখ্য, রাশিয়ার বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী অ্যামেরিকা ও ব্রিটেনে রাশিয়া-বিরোধিতা তুঙ্গে উঠেছে বলেই এমন সব ‘ভিত্তিহীন’ অভিযোগ আনা হচ্ছে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)