1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাশিয়ার তেল: ঢাকাকে কতটা সাহায্য করতে পারে ভারত?

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১ জুন ২০২২

রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার জন্য ভারতের কাছ থেকে বুদ্ধি চেয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। ভারত এই অবস্থায় বাংলাদেশকে কী বুদ্ধি দিতে পারে?

https://p.dw.com/p/4C7VR
রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার জন্য ভারতের পরামর্শ চেয়েছেন এ কে আব্দুল মোমেন।
রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনার জন্য ভারতের পরামর্শ চেয়েছেন এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: DW/Harun Ur Rashid Swapan

অ্যামেরিকা, ইইউ-র আপত্তি অগ্রাহ্য করেই ভারত রাশিয়াথেকে সস্তা দরে তেল কিনছে। এখনো পর্যন্ত চাপের কাছে তারা নতিস্বীকার করেনি। বরং পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিবশঙ্কর জানিয়ে দিয়েছেন, ভারত এক্ষেত্রে নিজের স্বার্থ দেখবে এবং সেইমতো চলবে। ফলে রাশিয়া থেকে তেল কেনার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটবে না ভারত।

রাশিয়া ভারতকে তেল দিচ্ছে অনেকটাই কম দামে। আর ভারত যেহেতু বিশ্বের তৃতীয় বড় তেল আমদানিকারী দেশ, তাই রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনে বিদেশি মুদ্রার বিপুল সাশ্রয় করছে দিল্লি। রিফিনিটিভ আইকনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানাচ্ছে, ভারত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৪ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে রাশিয়া থেকে। তার মধ্যে ২৪ মিলিয়ন ব্যারেল এসেছে গত একমাসে। ফলে ভারত তেল কেনা বাড়াচ্ছে, কমাচ্ছে না।

কিন্তু ভারতের পক্ষে যা সম্ভব, সেটা কী বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব? বাংলাদেশকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়ে কী পরামর্শ দিতে পারে ভারত? যশবন্ত সিনহা এর আগে পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। যশবন্তের কাছে ডয়চে ভেলের প্রশ্ন ছিল, সাবেক পররাষ্ট্র ও অর্থমন্ত্রী হিসাবে আপনি বাংলাদেশকে কী পরামর্শ দেবেন? যশবন্তের জবাব, ''আমি বাংলাদেশকে পরামর্শ দেব, রাশিয়া থেকে তেলই না কিনতে।'' 

যশবন্তের যুক্তি, ''ইউক্রেনের ক্ষেত্রে রাশিয়া আগ্রাসনকারীর ভূমিকায় আছে। যদিও বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এখন নৈতিকতার স্থান খুব একটা নেই, কিন্তু তা কখনোই পুরোপুরি নীতিহীন হতে পারে না। হলে বিপর্যয় হবে।'' তাহলে ভারত কী করে রাশিয়ার থেকে তেল কিনছে? যশবন্তের জবাব, ''রাশিয়া ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধু। কিন্তু বন্ধুকে যদি এ কথা বলা না যায়, তুমি ভুল করছো, তাহলে বন্ধুত্ব কীসের? ভারত একবারও রাশিয়ার নিন্দা করা দূরস্থান, তারা যে ভুল করছে, সেই কথাটাই বলতে পারল না। এখানে ভারতের নীতি ঠিক নয়।''

প্রশ্ন হলো, বললেই কি রাশিয়া শুনতো? যশবন্তের জবাব, ''না শুনলে ভারত তখন নিজের মতো করে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চলতো। কিন্তু তারা বলবে না কেন?''

পরিস্থিতি আলাদা

আউটলুক পত্রিকার কূটনৈতিক সম্পাদক প্রণয় শর্মা মনে করেন, ভারত ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি আলাদা। ভারত যে চাপ উপেক্ষা করে রাশিয়ার কাছ থেকে সস্তায় তেল কিনতে পারে, সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নেই। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''ভারত ও অ্যামেরিকা একে অপরের উপর নির্ভরশীল। অর্থনীতি, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তি সবদিক থেকে দেখতে গেলে অ্যামেরিকা এখনো এক নম্বর দেশ। তাই সকলেই অ্যামেরিকার সঙ্গে সুস্পর্ক রাখতে চায়। অ্যামেরিকা নিজের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চায়।''

প্রণয় মনে করেন, অ্যামেরিকা ভারতকে বেশি গুরুত্ব দেয় দুইটি কারণে। অ্যামেরিকার কাছে চীন হলো প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। অ্যামেরিকা মনে করে, ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারত বড় ভূমিকা নিতে পারে। দ্বিতীয়ত, ভারতের বাজার। ভারতীয়রাও এখন অ্যামেরিকায় বিনিয়োগ করছে। প্রণয় জানিয়েছেন, ''ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। এখনো ৫০ শতাংশ সামরিক অস্ত্র ও সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে আসে। ভারতের পক্ষে রাশিয়াকে ছেড়ে দেয়া, নিষেধাজ্ঞায় সায় দেয়া সম্ভব নয়। অ্যামেরিকাও প্রকাশ্যে না বললেও বুঝতে পেরেছে, ভারতের নীতির পিছনে যুক্তি আছে।''

কিন্তু বাংলাদেশের কাছে এই সুবিধা আছে কি? প্রণয়ের মতে, ''বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন ভালো। আগে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে হিলারি ক্লিন্টনের সম্পর্ক ভালো ছিল না। তখন দুই দেশের তিক্ততা বাড়ে। কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই।'' তার দাবি, ''বাংলাদেশ গত ১০ বছরে যেভাবে স্থায়িত্ব বজায় রাখতে পেরেছে, যেভাবে তাদের আর্থিক উন্নতি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। এখন অ্যামেরিকাও চাইবে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকুক। চীনের প্রভাব কম হোক। কিন্তু তারা ভারত সম্পর্কে যে নীতি নেবে, তা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নেবে না।''

বাংলাদেশের সমস্যা

যোজনা কমিশনের সাবেক উচ্চপদস্থ আমলা অমিতাভ রায় মনে করেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটা সমস্যা আছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''ঢাকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ভালো, আবার তারা অ্যামেরিকাকে চটাতে চায় না। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকেও তারা খুশি রাখতে চায়। সেজন্যই তারা ভারতের কাছ থেকে পরামর্শ চায়।'' অমিতাভের মনে হচ্ছে, ''বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে ভালো সমাধান এবং যেটা তারা চাইতেও পারে, সেটা হলো, ভারতই রাশিয়া থেকে একটু বেশি তেল কিনে বাংলাদেশকে দিক। তাহলে সবদিক রক্ষা করতে পারে বাংলাদেশ। ভারত বড় দেশ ও সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বলে, তারা চাপ উপেক্ষা করতে পারে। বাংলাদেশের পক্ষে তা সম্ভব হবে না।''

প্রণয় মনে করেন, ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ এই বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারে, আইডিয়া নিতে পারে, অ্যামেরিকাকে বোঝাতে পারে, রাশিয়ার তেল তাদেরও প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তব হলো, অ্যামেরিকার যতটা ভারতকে প্রয়োজন, ততটা বাংলাদেশকে প্রয়োজন নয়। তার বক্তব্য, ''এখন বাংলাদেশের দরকার কূটনৈতিক দক্ষতা। তারা অ্যামেরিকাকে কতটা বোঝাতে পারে, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।''

ঘটনা হলো, দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রায় কোনো দেশই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অ্যামেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন জানায়নি। অ্যামেরিকা তাই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি আরো বেশি করে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হোক সেটা চাইবে না বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানাচ্ছে, এক্ষেত্রে অ্যামেরিকা ও রাশিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারে ভারত। বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর যে বিপুল চাপ পড়ছে, সে কথাটা জানাতে পারে। তারা সাহায্যকারীর ভূমিকা নিতে পারে। বাকি কাজ বাংলাদেশকেই করতে হবে বলে তারা মনে করছেন।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷