রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ: পাসপোর্ট ছাড়াই দেশে দেশে ঘুরে বেড়ানো পর্যটক
২১শে এপ্রিল ৯৬ বছরে পা রাখলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজসিংহাসনে রানি৷ সেই সুবাদে ইতিহাসের পাতার অন্যতম পর্যটকও তিনি৷ বলতে গেলে সারা বিশ্বই ভ্রমণ করেছেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷
সাউথ আফ্রিকায় প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর
১৯৪৭ সালে প্রথমবার বাবা-মায়ের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফরে সাউথ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন এলিজাবেথ৷ তখনও তিনি রাজকুমারী৷ ব্লুমফন্টেনে এই ছবিটি তোলা হয়েছিল৷ ছবিতে তার পাশে বাবা রাজা জর্জ (ষষ্ঠ), এরপরে রানি এলিজাবেথ (বর্তমান রানির মা), তার বোন রাজকুমারী মার্গারেট৷
অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি
১৯৫২ সালের শুরুতে এলিজাবেথ এবং প্রিন্স ফিলিপ কেনিয়া সফরে গিয়েছিলেন৷ সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার কথা ছিল তাদের৷ কিন্তু রাজা ষষ্ঠ জর্জ, অর্থাৎ তার বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে সেই সফরে কাটছাঁট করেছিলেন এলিজাবেথ৷ পরে দ্বিতীয় এলিজাবেথ হলেন রানি ৷ ১৯৫৩ সালে ৬ মাস টানা তিনি বিশ্বভ্রমণ করেছিলেন৷ সেই সময় তিনি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন৷
সর্বত্র স্বাগত
রানি যেখানেই গিয়েছেন, সবাই তাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করেছেন৷ ১৯৫৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তিনি পাপুয়া, নিউ গিনির নৌ সৈনাদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন৷এই বিশ্ব ভ্রমণে ১২টি দেশে গিয়েছিলেন তিনি৷ অস্ট্রেলিয়া ছাড়াও নিউজিল্যান্ড, ফিজি দ্বীপপুঞ্জ এবং টোঙ্গা সফর করেছিলেন৷ তিনি বাড়ির কাছাকাছি অনেক দেশেও ভ্রমণ করেছেন৷
জার্মানিতে গাছ লাগানো
১৯৬৫ সালের ১৮ থেকে ২৮ মে জার্মানিতে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ ভ্রমণের সময়, তিনি বার্লিনের টিয়ারগার্টেনের ইংলিশ গার্ডেনে একটি গাছ রোপণ করেছিলেন৷ তার সঙ্গে ছিলেন বার্লিনের তৎকালীন মেয়র ভিলি ব্রান্ড্ট (রানির ডানদিকে) এবং প্রিন্স ফিলিপ ( খুঁটির বাম দিকে) তারপর থেকে তিনি জার্মানিতে আরো চারবার রাষ্ট্রীয় সফর করেছেন৷ ২০১৫ সালে শেষবার তিনি জার্মানিতে এসেছিলেন৷
ব্যাংককে এক রাত
থাইল্যান্ডের রানি সিরকিটের সঙ্গে (ছবিতে হলুদ পোশাকে) ১৯৭২ সালে সাক্ষাৎ হয়েছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের৷ সিরকিটের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তার মেয়ে রাজকুমারী অ্যানি এবং তার স্বামীও সঙ্গে ছিলেন৷ এই জাতীয় দূর-দূরান্তের ভ্রমণেও রানির কোনো পাসপোর্ট লাগেনি৷ আসলে তার পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই৷
চায়ের আমেজ
রাজপরিবারের এক মুখপাত্র ব্যাখ্যা করেছিলেন যে রানির পাসপোর্ট থাকা অপ্রয়োজনীয়৷ কারণ, যুক্তরাজ্যের সমস্ত পাসপোর্ট রানির নামে ইস্যু করা হয়৷ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের এই ছবিটি ১৯৭৫ সালে জাপানের কিয়োটোতে কাতসুরা ইম্পেরিয়াল ভিলার বাগানে একটি চা চক্রে যোগদানের সময় তোলা৷ বেড়ানোর সময় নিজের চায়ের কেটলি সঙ্গে রাখেন রানি৷
নিজের রক্ত বহন!
চায়ের কেটলিই শুধু নয়, চিকিৎসা সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নিজের রক্তের সরবরাহও রানির সঙ্গে থাকে৷ রানি এবং তার সঙ্গে ভ্রমণ করা মানুষজনের খাবারের কোনো অভাব হয় না৷ ওপরের ছবিটি ১৯৮৩ সালে ভারত ভ্রমণের সময়ের৷ রানির সঙ্গে সবসময় তিনজন চিকিৎসক থাকেন, যারা স্থানীয় ক্লিনিকগুলি আগে থেকেই পরিদর্শন করেন৷
ব্যাংককে দ্বিতীয় রাত
১৯৯৬ সালে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ব্যাংককে গিয়েছিলেন রানি এলিজাবেথ৷ ক্রাউন প্রিন্সেস সিরিন্ডহর্নের সঙ্গে চুলালংকন বিশ্ববিদ্যালয় সফর করেছিলেন রানি৷ সেই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছিলেন রাজকুমারী৷ সেটি ছিল রাজা ভূমিবলের সিংহাসনে আসীন হওয়ার ৫০তম বছর৷ রানি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন৷
ক্যানাডার অনুরাগী
১৯৯৭ সালের জুনে উত্তর-পূর্ব ক্যানাডার ল্যাব্রাডর অঞ্চলে এলিজাবেথ সফর করেন৷ তাঁবুতে এলিজাবেথ আসার পরও ইনুইট মহিলারা বসে ছিলেন, যা রানির জন্য বেশ অস্বাভাবিক ছিল৷ তিনি ইনুইট প্রধান পল রিচের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন৷ সাধারণত ক্যানাডায় থাকতে বেশ পছন্দ করেন রানি৷ তিনি ২৭ বার ক্যানাডা সফর করেছেন–অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে এই সংখ্যাটা অনেক বেশি৷
সিনেমার সেটে রানি
১৯৯৭ সালে চেন্নাই শহরে ভারতের প্রখ্যাত অভিনেতা কমল হাসানের সঙ্গে সিনেমার সেটে গিয়েছিলেন রানি৷ সেই সময়ে তিনি রাজকীয় ইয়ট ব্রিটানিয়ায় সফরে যেতে পারতেন৷ তার সেই সফরের দুই মাস পর, ১৯৫৪ সাল থেকে ব্যবহৃত ১৩০ মিটার জাহাজটি বাতিল করা হয়৷ এখন এটি একটি জাদুঘর৷
মনোমুগ্ধকর পোশাক
বেড়ানোর সময় রঙিন পোশাক পরতে ভালোবাসেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ বিশেষ করে হ্যাট তার খুব পছন্দের৷ বছরে প্রায় ৭০টি হ্যাট পরেন তিনি৷ ১৯৯৯ সালে পূর্ব আফ্রিকার মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুতো সফরে গিয়ে এই সাদা হ্যাট পরেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ৷ একটি ঐতিহ্যবাহী নাচের দল রানিকে স্বাগত জানিয়েছিল৷ আফ্রিকা সফরের সময় মোজাম্বিকই ছিল পর্যটনের সমাপ্তি কেন্দ্র৷
অন্য উপহার
২০০৮ সালে তার একমাত্র স্লোভাকিয়া সফরে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ইংল্যান্ড এবং স্লোভাকিয়ার আইস-হকি গেমের ‘পুক ড্রপ’ করেছিলেন৷ তিনি বেশ কিছু অদ্ভুত উপহার পেয়েছেন৷ ক্যামেরুন তাকে উপহার দিয়েছিল একটি হাতির শাবক৷ ব্রাজিল থেকে দুটি শ্লথ উপহার পেয়েছিলেন তিনি৷ প্রাণীগুলির স্থান হয় লন্ডন চিড়িয়াখানায়৷
বাড়ির মতো জায়গা নেই
যেখানে হৃদয়, সেখানেই রয়েছে ঘর৷ রানি এলিজাবেথের দায়িত্বগুলির মধ্যে রয়েছে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার প্রাসাদে হাউস অফ লর্ডসে বক্তৃতা দেওয়া৷ গ্রেট ব্রিটেনের সংসদীয় রাজতন্ত্রের বার্ষিক ‘হাইলাইট’ হলো সার্বভৌম সিংহাসন থেকে রানির বক্তৃতা৷ ২০২১ সালের ১১ মে-র ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছেন আলোকচিত্রী৷