1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজ্যপাল পথে, কমিশন দায় ঠেলছে রাজ্যের ঘাড়ে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ জুলাই ২০২৩

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনও পথে রাজ্যপাল৷ কিন্তু সহিংসতায় লাগাম টানা গেল কই?

https://p.dw.com/p/4TcR4
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনও শান্তির জন্য রাস্তায় নামেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। ফাইল ছবি।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনও শান্তির জন্য রাস্তায় নামেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। ফাইল ছবি। ছবি: Subrata Goswami/DW

শনিবার পঞ্চায়েত ভোটের দিনে রাজ্যপাল রাস্তায় নামলেন৷ সহিংসতা নিয়ে নির্বাচন কমিশন বল ঠেলল রাজ্যের কোর্টে। ভোটগ্রহণের ১০ ঘণ্টায় প্রতিক্রিয়া দেননি মুখ্যমন্ত্রী৷

ভোটের দিন পথে রাজ্যপাল

নির্বাচনের দিন সকালেই রাজভবন থেকে বেরিয়ে পড়েন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস৷ উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের কদম্বগাছিতে যান তিনি৷ সেখানে নির্দল প্রার্থী আবদুল্লা আলির মৃত্যুর খবর রটে যায় সকালে৷ আবদুল্লার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল৷

পরে জানা যায়, নির্দল প্রার্থী জীবিত আছেন৷ সংঘর্ষে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন৷ তাকে দেখতে বারাসতের হাসপাতালে যান রাজ্যপাল৷ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন৷ আহত প্রার্থীকে কলকাতার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেন বোস৷

এ দিনের সফরে একাধিকবার রাজ্যপালের কনভয় আটকে অভিযোগ জানায় বিরোধীরা৷ নদিয়ার পথে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের উপর বাসুদেবপুরে বিজেপি ও সিপিএম কর্মীরা রাজ্যপালের কাছে অভিযোগ করেন, ভোট লুট করা হচ্ছে৷ কামারহাটিতেও তার পথ আটকানো হয়৷ 

রাজ্যপাল বলেন, ‘‘আমি সকাল থেকে বেরিয়েছি৷ আমাকে অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাদের চারপাশে খুনোখুনি হচ্ছে৷ দুষ্কৃতীরা ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে। এটা আমাদের সকলের কাছে উদ্বেগের৷ আজ গণতন্ত্রের সবচেয়ে পবিত্র দিন৷ ভোট বুলেট নয়, ব্যালটের লড়াই৷’’

রাজ্যপাল পঞ্চায়েত নির্বাচনে নজিরবিহীন তৎপরতা দেখিয়েছেন৷ গতকাল, শুক্রবার তিনি মুর্শিদাবাদ সফরে যান৷ তার আগে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আক্রান্ত শাসক এবং বিরোধী শিবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন৷ কিন্তু সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ৷ তবে সম্ভবত এই প্রথমবার রাজ্যপাল ভোটের দিন শান্তির জন্য রাস্তায় নামলেন৷

রাজ্যপালের ডাকে সাড়া দেয়নি কোনো পক্ষ: দেবাশিস দাশগুপ্ত

প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সক্রিয়তা প্রশংসনীয়। কিন্তু তার পথে নামায় ছবি বদলায়নি৷ শাসক ও বিরোধী কেউই তার ডাকে সাড়া দেয়নি৷’’

দেরিতে দপ্তরে কমিশনার

শনিবার সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ৷ এর পর থেকেই সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছিল রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে৷ কিন্তু তখনো দপ্তরে আসেননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা৷ প্রশ্ন ওঠে, ভোটের দিনও সকালে কেন দপ্তরে আসেননি কমিশনার?

সকাল ১০টা নাগাদ দপ্তরে আসেন রাজীব৷ তার আগে থেকেই কন্ট্রোল রুম ঘনঘন ফোন আসছিল৷ বিকেল গড়িয়ে যেতে শুধু শনিবার নিহতের সংখ্যা পৌঁছে যায় ১২-তে৷ যদিও প্রশাসনের রিপোর্ট উদ্ধৃত করে রাজীব জানান, মারা গিয়েছেন তিন জন৷

দুপুরে কমিশনার বলেন, ‘‘দেড় হাজারের মতো অভিযোগ জমা পড়েছে। অর্ধেকের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। অধিকাংশ অভিযোগ তিন-চারটি জেলা থেকে এসেছে৷ ভোট কেমন হয়েছে সেটা এখনই বলা যাবে না। সব রিপোর্ট জমা পড়বে। আগামীকাল স্ক্রুটিনির পর বলা যাবে।’’

কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্ট দিলেও এদিন অনেক জায়গায় জওয়ানদের দেখা মেলেনি৷ কমিশনারের বক্তব্য, ‘‘বাহিনী ঠিক সময়ে এসে গেলে অশান্তি নিয়ন্ত্রণ করা যেত। মৃত্যুর দায় কমিশনের নয়। আমরা সব ব্যবস্থা করে বাহিনী পাঠিয়েছি। তাদের ব্যবহার করা প্রশাসনের কাজ। কে কাকে গুলি করছে সেটা কমিশনের দেখা সম্ভব নয়।’’

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করেন৷ বলেন, ‘‘কমিশনারকে ফোন করেছিলাম। বলেছি, আর কত রক্ত আপনার দরকার? সন্ধে ছটার সময় কমিশনের দপ্তরে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেব৷’’

দেবাশিস বলেন, ‘‘এমন মেরুদণ্ডহীন নির্বাচন কমিশনার কখনো দেখিনি৷ তিনি পুরোপুরি রাজ্যের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছেন৷’’

মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি

নির্বাচনের দিন সকাল থেকে প্রতি ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সংঘর্ষ, ছাপ্পা ভোট, ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলা, আতঙ্কিত ভোটকর্মী, ক্ষুব্ধ জনতা থেকে ব্যালট পেপার পোড়ানো, সহিংসতার নানা ছবি উঠে আসতে থাকে৷ বিরোধীরা দাবি করে, সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। 

এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের দিনে সহিংসতা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি৷ শাসক দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি৷

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিরোধীরা হার নিশ্চিত বুঝে অভিযোগ তুলছে। অথচ তৃণমূল কর্মীরাই বেশি মারা গিয়েছেন৷’’ বিরোধীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যারা দায়িত্বে আছেন, তারা নীরব থাকছেন, এটা খুবই দুঃখের৷ যে কোনো ভাবে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তার জন্য লড়াই৷ তাতে মানুষ মারা পড়লেও সরকার নীরব৷’’