রাজনৈতিক দলগুলো কি নিষেধাজ্ঞা মানবে?
১২ জানুয়ারি ২০২২বিএনপি দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা উন্মুক্ত স্থানে সভা সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা মানবে না৷ তবে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানবে৷ তাদের বক্তব্য, করোনা বদ্ধ পরিবেশ বা ঘরোয়া পরিবেশে বেশি ছাড়ায়। তাদের অভিযোগ, রাজনীতির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্যই এই নিষেধাজ্ঞা। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারি নির্দেশনা মানার কথা বললেও তারা মনে করে যেখানেই সমাবেশ করা হোক না কেন স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়েছে। তারা মনে করে প্রজ্ঞাপনে উন্মুক্ত স্থানে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্পষ্ট নয়।
বিএনপি বুধবারও জেলা পার্যায়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সভা সমাবেশ করেছে। তাদের ঘোষিত কর্মসূচি আছে চলতি মাসের ২৪ তারিখ পর্যন্ত। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,"আমরা এখানো বাইরে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সভা-সমাবেশ করছি। এটা আমরা অব্যাহত রাখব। আমরা মনে করি বাইরে সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটবাজার, মেলা, বাণিজ্যমেলা, যাত্রা, সার্কাস সব কিছুই যদি চলতে পারে তাহলে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ কেন বাইরে চলতে পারবে না। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্যমূলক।”
তার কথা, "খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আমরা ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছি। আর এতে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সেটা বন্ধ করতেই এই নিষেধাজ্ঞা। আমরা আজও (বুধবার) স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি পালন করেছি। এটা আমরা অব্যাহত রাখব।”
তিনি আরো বলেন,"আমরা জানি উন্মুক্ত স্থানের চেয়ে ঘরোয়া পরিবেশ বা বদ্ধ জায়গায় বরং করোনা বেশি ছাড়ায়।”
আওয়ামী লীগেরও নানা কর্মসূচি আছে। তার মধ্যে তৃণমূলে সফরসহ নানা সাংগঠনিক কর্মসূচি রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন বলেন,"আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে চলব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সভা-সমাবেশ করতে বলেছে সেটা আমরা করব। সেটা দলীয়ভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।” ঘরের বাইরে বা উন্মুক্ত স্থানে সভা সমাবেশ করবেন কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন,"ঘরে-বাইরে তো বিষয় নয়। বিষয় হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। উন্মুক্ত স্থানেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে করা যাবে।” উন্মুক্ত স্থানে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানালে তিনি বলেন,"বিষয়টি ওরকম নয়।”
তবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথা,"সরকার উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা ঠিকই করেছে। কারণ করোনা অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু সরকার তো জেলখানা ভরে ফেলেছে। ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেদ্র মোদী জেলখানা খালি করছেন। আমাদের সরকারেরও উচিত হবে খুনের আসামি ছাড়া আর সবাইকে জামিনে মুক্তি দিয়ে জেলখানা খালি করা।”
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন,"নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে আবার তার মধ্যেই নির্বাচন হচ্ছে। মেলা হচ্ছে। বাণিজ্য মেলা হচ্ছে। নির্বাচনি প্রচারে সামাজিক দূরত্ব মানা কীভাবে সম্ভব! মেলায় সব কিছুই হচ্ছে। তাহলে স্বাস্থ্যবিধি কোথায় থাকছে? তাহলে কেন এই নির্দেশনা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আপত্তি তুলেছে। কিন্তু তাদের নেতা নেত্রীরাও তো করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। তারা কি তা দেখছেন না? আবার এক দলের জন্য এত নিয়ম, আরেক দলের জন্য ভিন্ন তা তো হতো পারে না। এটাকে আমি বলি ‘তালগাছবাদ'। বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার। যার যেভাবে সুবিধা সে সেইভাবে দেখছে।”
তার কথা," করোনা তো রাজনীতি নয়, এটা বিজ্ঞান। এটা তো সত্য যে সারা বিশ্বেই সংক্রমণ বাড়ছে। তাই এটা বিজ্ঞান দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। রাজনীতিবিদেরা রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনা করেন। তাদের সবাই অনুসরণ করেন। তারা যদি অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে না পারেন তাহলে তা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ভয়াবহ।”
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এরইমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের সব জেলায় তাদের ১১ দফা নির্দেশনা কার্যকর করার আদেশ পাঠিয়ে দিয়েছে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনদের সমন্বয় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে মাস্ক-এর ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যেতে বলা হয়েছে। বাইরে মাস্ক না পরলে জরিমানা করা হবে। ঢাকাসহ সারাদশে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে পরবর্তী নির্দেশেনা না দেয়া পর্যন্ত। বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক উন্মুক্ত স্থানে সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে জানান,"রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে প্রশাসনের অনুমতি লাগে। আগের কোনো অনুমতি দেয়া থাকলেও তা এখন বাতিল বলে গণ্য হবে। নতুন করে আমরা অনুমতি দেব না। তারপরও কোনো দল করার চেষ্টা করলে আমরা তাদের বুঝিয়ে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করব, অন্যথায় আইন প্রয়োগ করব। মহামারি আইন আছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত আছে। পেনাল কোডেও সুযোগ আছে।”
তিনি বলেন," আমরা জেলার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা জানিয়ে দিয়েছি। আর স্বাস্থ্যবিধির জন্য আমাদের ভ্রাম্যমান আদালত এখনো চালু আছে। আমরা এখন সেটা আরো জোরদার করব।”