রাখাইনে ‘অভিযান’, আবার রোহিঙ্গা ঢলের আশঙ্কা
২০ সেপ্টেম্বর ২০২০কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী৷ এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এর প্রতিবাদ এবং সীমান্ত থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে বলা হয়৷ বাংলাদেশের শক্ত অবস্থানের পর সীমান্ত থেকে মিয়ানমার সৈন্য সরিয়ে নিয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান, বিজিবির মুখপাত্র লে. কর্নেল সাইদুর রহমান৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সীমন্তে এখন আর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা নাই৷ তারা সীমান্ত এলাকা ছেড়ে চলে গেছে৷ তবে রাখাইনের ভেতরে তারা কী করছে সেটা আমরা জানি না৷ এটা গোয়েন্দারা ভালো বলতে পারবেন৷’’
এই বিজিবি কর্মকর্তা জানান, ‘‘সীমান্তের পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে৷ সীমান্ত বলতে আমাদের দিক থেকে আমরা যতটুকু দেখতে পাচ্ছি তা স্বাভাবিক৷’’
একাধিক সূত্র জানায়, সীমান্ত থেকে তারা সরে গেলেও এক কিলোমিটার দূরেই তারা অবস্থান করছে৷ রাখাইনে সৈন্য সমাবেশও অব্যাহত আছে৷ ২০১৭ সালে শুরু হওয়া ক্লিয়ারেন্স অপারেশন সেখানে এখনো চলছে৷ মিয়ানমারে ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে এই অপারেশন আরো জোরদার হচ্ছে৷
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে এখনো চার হাজারের মত রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন৷ তারা ২০১৭ সালের পর থেকেই সেখানে আছেন৷ নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, ‘‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী সীমান্তের এক-দেড় কিলোমিটারের মধ্যে এখন আর নাই৷ তারা এর বাইরে অবস্থান করছে৷ আমাদের কাছে যে খবর রয়েছে তাতে তারা অভিযান বন্ধ করেনি৷ সৈন্য আরো বাড়াচ্ছে৷’’
তিনি জানান, ‘‘আমরা সেখানে অবস্থানরত আমাদের স্বজনদের কাছ থেকে যে খবর পাচ্ছি তাতে রোহিঙ্গাদের মুভমেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ তাদের ঘরের বাইরে বের হতে দেয়া হচ্ছে না৷ সেখানে যুদ্ধের ট্যাংক নিয়ে আসা হচ্ছে৷ আমরা আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্যে আছি৷’’
এর আগে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, মিয়ানমার আবার রাখাইনে গণহত্যা শুরু করেছে৷ সেনা সমাবেশের মধ্যেই সেখানে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ মিয়ানমার অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ তবে নানা সূত্র থেকে যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে সেখানে গণহত্যার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে৷ বাংলাদেশে যেসব রোহিঙ্গা আছেন তাদের অনেকের স্বজনরা এখনো রাখাইনে আছেন৷ তারা তাদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন৷
এই অবস্থায় বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় টহল এবং নজরদারী জোরদার করা হয়েছে৷ সীমান্তের জনবল ও নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানা গেছে৷ তারা রাখাইনের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন৷
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক মনে করেন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাখাইনে সেনা সমাবেশ ঘটনো হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এর কারণ মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে নির্বাচন বন্ধ করতে চায়৷ সেনাবাহিনী সমর্থিত দল ইএসডিপির রাখাইনে কখনোই ভালো অবস্থান ছিল না৷ ফলে এখানে নির্বাচন না হলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সুবিধা৷ তাই আমার মনে হচ্ছে তারা আরো বড় ধরনের অভিযান চালাবে যাতে নির্বাচন বন্ধ করা যায়৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এবার অভিযান শুরু হলে শুধু রোহিঙ্গা নয়, সেনা সমর্থিত দলের বাইরে যে বৌদ্ধরা আছেন তারাও এর শিকার হতে পারেন৷ তাই শুধু রোহিঙ্গা নয়, এবার বৌদ্ধদের ঢলও আমরা সীমান্তে দেখতে পারি৷’’
এজন্য তিনি বাংলাদেশকে আরো সতর্ক অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘মিয়ানমার এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালোই চাপের মুখে আছে৷ আর আইসিজের পর এখন আইসিসিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা হতে যাচ্ছে৷ ফলে তারা আরো চাপে পড়বে৷’’
গত ডিসেম্বরের ছবিঘর দেখুন