রবার্ট কখ: সম্মানিত গবেষক, নাকি ঔপনিবেশিক চিকিৎসক
২৮ মার্চ ২০২২১৯১০ সালে মারা যাওয়ার আগে রবার্ট কখ আফ্রিকায় জার্মানির উপনিবেশগুলোতে কিছু গবেষণা করেছিলেন৷ যক্ষ্মা ও স্লিপিং সিকনেস থেকে রোগীদের মুক্তি দেয়ার উপায় খুঁজতে তাকে আফ্রিকায় পাঠানো হয়েছিল৷ ১৯০০ সালের দিকে টেটসি মাছির মাধ্যমে আফ্রিকায় স্লিপিং সিকনেস রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল৷
এই রোগ নিরাময়ের উপায় খুঁজতে রবার্ট কখ বর্তমানের তাঞ্জানিয়া, টোগো ও ক্যামেরুনে কয়েকটি পরীক্ষা করেছিলেন৷ কখের রোগীদের ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে' রাখা হত৷ এমন নাম কখ নিজেই দিয়েছিলেন৷ তবে মডেলটা ধার করেছিলেন সাউথ আফ্রিকার ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছ থেকে৷ রোগীদের তিনি অ্যাটক্সিল দিয়ে চিকিৎসা করেছিলেন৷ অ্যাটক্সিলের মধ্যে আর্সেনিক আছে এবং এটা বেশি পরিমাণে দিলে যে বিষাক্ত হয়ে ওঠে সেটা জানা ছিল৷
১৮৯১ সালে রয়েল প্রুশিয়ান ইনস্টিটিউট ফর ইনফেকশাস ডিজিজেস প্রতিষ্ঠার পর ১৯০৪ সাল পর্যন্ত এর প্রধান ছিলেন রবার্ট কখ৷ এই প্রতিষ্ঠানেরই বর্তমান নাম রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট বা আরকেআই, যেটি নিয়মিত জার্মানির করোনা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করে আসছে৷
আরকেআই-এর ওয়েবসাইট বলছে, ১৯০৬ থেকে ১৯০৭ সালে রবার্ট কখ পূর্ব আফ্রিকায় গবেষণা কাজে গিয়েছিলেন৷ সেটা তার ক্যারিয়ারের ‘সবচেয়ে কালো অধ্যায়' ছিল বলেও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এতে বলা হয় অ্যাটক্সিল ব্যবহার করে কখ ‘স্লিপিং সিকনেস চিকিৎসায় প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছিলেন'৷ কিন্তু এভাবে অল্প সময়ের জন্য রোগীর রক্তে জীবাণুকে দমিয়ে রাখা যেত৷ তাই ‘‘কখ ডোজ দ্বিগুণ করে দিয়েছিলেন - যদিও তিনি এই ওষুধের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন৷'' আরকেআই এর ওয়েবসাইট লিখেছে, ‘‘অনেক রোগী ব্যথা ও কলিকে ভুগতে শুরু করে, অনেকে অন্ধও হয়ে যান৷ তারপরও কখ অ্যাটক্সিলের উপকারিতা সম্পর্কে নীতিগতভাবে আশ্বস্ত ছিলেন৷''
রবার্ট কখের অ্যাটক্সিল ব্যবহার ও আফ্রিকায় তার গবেষণা নিয়ে বর্তমানে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন৷ তাদের কেউ কেউ আরকেআই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তনেরও আহ্বান জানিয়েছেন৷
রবার্ট কখের একজন সমালোচক বিজ্ঞানের ইতিহাস নিয়ে কাজ করা হাইতিয়ান-মার্কিন এডনা বোনম৷ তিনি বলেন, কখ হাজার হাজার রোগীর ব্যথা ও তীব্র যন্ত্রণা এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুও মেনে নিয়েছেন৷ তবে তার (কখ) উদ্দেশ্য নিয়ে হয়ত শেষ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছা যাবে না, বলে স্বীকার করেন বোনম৷ গবেষণার জন্য কখ যে শিবিরগুলো স্থাপন করেছিলেন সেখানে রোগীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি৷
অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল হিস্টোরিয়ান ক্রিস্টফ গ্রাডমান বলেন, সাফল্য পেতে চাপে ছিলেন রবার্ট কখ৷ তাই তিনি অনেকদিন পর্যন্ত অ্যাটক্সিলের উপর নির্ভর করেছিলেন৷ তিনি বলেন, আফ্রিকায় রবার্ট কখের কাজ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত৷ তবে ২০২২ সালে এসে তার সমালোচনা করা একটি তুচ্ছ ব্যাপার বলে মনে করেন গ্রাডমান৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, আফ্রিকায় এখনও রবার্ট কখকে সম্মানের চোখে দেখা হয়৷ ‘‘আফ্রিকানরা তাকে যক্ষ্মা রোগের জন্য দায়ী প্যাথোজেনের আবিষ্কারক হিসেবে চেনে এবং সে কারণে তাকে রোল মডেল হিসেবে দেখা হয়,'' বলে জানান তিনি৷
গ্রাডমানের তথ্য নিশ্চিত করেছেন তাঞ্জানিয়ায় জার্মানির কনরাড আডেনাউয়ার ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি রিচার্ড শাবা৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘ম্যালেরিয়া ও যক্ষ্মা নিয়ে কখের গবেষণা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক পরিচিত, তবে সাধারণ নাগরিকদের কাছে এটা কোনো বিষয় নয়৷''
মার্টিনা শোয়িকোভস্কি/জেডএইচ