‘যে বিতর্ক কোনো বিতর্কই ছিল না
৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭নাম দেওয়া হয়েছিল ‘টিভি ডুয়েল', কিন্তু পিস্তল হাতে দ্বন্দ্বযুদ্ধ তো দূরের কথা, কোনোরকম লড়াকু মনোবৃত্তিই দেখা যায়নি৷ পাঁচটি মুখ্য জার্মান ব্রডকাস্টার মিলে ২০০২ সালে ফরম্যাটটি সৃষ্টি করা যাবৎ এটি ছিল সবচেয়ে দুর্বল বিতর্ক৷ এ থেকে জার্মান রাজনীতি সম্পর্কে যতটা জানা গেছে, জার্মান টেলিভিশনের ধরণ-ধারণও ঠিক ততটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে৷
প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, যেন সমব্যথী
যে জোট সরকার গত চার বছর ধরে দেশশাসন করছেন, তার দুই ভাগীদার রাজনৈতিক দলের দুই প্রতিনিধি মঞ্চে পরস্পরের পাশে জায়গা নিলেন, চারজন বাছাই সাংবাদিকের বিভিন্ন বাছাই প্রশ্নের জবাব দেবার জন্য৷ স্টুডিও-য় উপস্থিত দর্শকদের নীরব থাকতে বলা হয়েছিল৷
জার্মান অর্থনীতির ছছল-বছল সত্ত্বেও জার্মান সমাজ এখন বিভিন্ন চাপে মুখে৷ রবিবারের ৯৭ মিনিটের বিতর্কে সে বিষয়টি প্রায় উল্লেখ করা হয়নি বললেই চলে৷ সাধারণ পরিবাররা আজ যে টানাপোড়নে, ডিজিটাল প্রযুক্তির ফলে যে পরিবর্তন আসতে চলেছে, বিশ্বায়ন যেভাবে কর্মবাজারকে বদলে দিচ্ছে বা শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যা – এ সবের কোনো কিছুই দৃশ্যত বিশদ আলোচনার যোগ্য ছিল না৷ পরিবর্তে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল ২০১৫ সালের উদ্বাস্তুর স্রোত ও অভিবাসীদের সমাজে অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ দু'টি৷
উদ্বাস্তু ও অভিবাসনের প্রসঙ্গ নিয়ে গত দু'বছর ধরে জার্মানির শহরে ও গ্রামে-গঞ্জে যে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে, তার মুখোমুখি হওয়াটা রাজনীতিকদের কর্তব্য৷ কিন্তু এবারেও পপুলিজম পোড় খাওয়া রাজনীতিকদের বিক্ষিপ্ত করতে সমর্থ হয়েছে৷
তবে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মন্তব্য শোনা গেছে৷ তুরস্কের ক্ষেত্রে দুই প্রার্থীই একটি নতুন ও সাহসী দিক পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন: উভয়েই শুল্ক ইউনিয়নের সম্প্রসারণ অথবা তুরস্কের ইইউ-তে যোগদান সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা বন্ধ রাখার পক্ষে৷ আংকারার স্বৈরশাসক যখন খেয়ালখুশি মতো জার্মানদের পণবন্দি করছেন, তখন তুরস্কের প্রতি জার্মানির নীতিও লক্ষণীয়ভাবে বদলাচ্ছে৷
উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে ম্যার্কেল আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতার ভূমিকায় ফিরে গিয়ে আগামীতে মস্কো, বেইজিং, টোকিও, সৌল ও ওয়াশিংটনের সঙ্গে তিনি যে সব টেলিফোনালাপ করবেন, তার ফিরিস্তি দেন৷
তৃতীয়ত, ম্যার্কেল ও শুলৎস উভয়েই দৃশ্যত কাতার ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ায় বিশেষ সুখী নন – তবে দু'জন প্রথম সারির জার্মান রাজনীতিক যে এত স্পষ্টভাবে সে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন, সেটা নতুন বৈকি৷
‘বৃহৎ জোট' আর নয়!
দীর্ঘ ৯৭ মিনিটের বিতর্ক থেকে যদি কোনো কিছু স্পষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে, তবে তা হল এই যে, জার্মানির আর তথাকথিত বৃহৎ জোট, অর্থাৎ সিডিইউ-সিএসইউ ও এসপিডি দলের জোট সরকারের প্রয়োজন নেই৷ এই দু'টি দল মিলে বড় বেশিদিন ধরে জার্মান সংসদে তাদের আধিপত্য চালাচ্ছে৷ এছাড়া রবিবারের বিতর্ক থেকে আরো বোঝা গেছে যে, তারা পরস্পরের হাঁড়িহদ্দ চেনে আর কেউই অপরকে সহ্য করতে পারে না৷
রবিবারের বিতর্কের একটি দুর্বলতা ছিল বাস্তবিক কোনো বিরোধীর অনুপস্থিতি – শক্তিশালী সরকারের মতোই গণতন্ত্রের যা প্রয়োজন৷
২০০৫ সাল যাবৎ এ ধরনের বিতর্ক জার্মান ফেডারাল নির্বাচন প্রথার অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে – কিন্তু শুধু একবারই এবং সেটাই হয়ত ভালো৷ জার্মানিতে সংসদীয় গণতন্ত্রের চল, প্রেসিডেন্সিয়াল গণতন্ত্রের নয়৷ এদেশে ভোটের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে নির্বাচন করা হয়ে থাকে, সরকারপ্রধানকে নয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রয়োজন জোরালো সরকারি নীতি ও একটি জোরালো বিরোধীপক্ষ৷ রবিবারের বিতর্কে সেটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷
স্রিস্টফ স্ট্রাক/এসি