1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যে কারণে ওরা জঙ্গি হয়

আশীষ চক্রবর্ত্তী২৫ জুলাই ২০১৬

কেন কিছু তরুণ জঙ্গি হচ্ছে, সৃষ্টির আনন্দে শামিল না হয়ে ধ্বংসে মাতছে? কীভাবে সন্তানদের রক্ষা করা যায়? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ সব বিষয়েই কথা বলেছেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ড. তাজুল ইসলাম৷

https://p.dw.com/p/1JUmm
গুলশান হামলায় নিহত এক জঙ্গি
গুলশান হামলায় নিহত এক জঙ্গির ছবিছবি: Reuters/Courtesy SITE Intel Group

কিশোর বা তরুণদের একটা অংশের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণ হিসেবে প্রথমে তাদের বয়সগত বৈশিষ্ট্যের দিকটিই তুলে ধরেছেন ড. তাজুল ইসলাম৷ তাঁর মতে, ‘‘যে বয়সে ওরা জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে, এ বয়সে জানার খুব আগ্রহ থাকে৷ তাই এ বয়সে অনেকে মাদকের মতো খারাপ জিনিসের প্রতিও না বুঝে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে৷ এই বয়সে কোনো কোনো আদর্শের প্রতিও কেউ কেউ খুব দ্রুত অনুরক্ত হয়ে পড়ে৷ এই বয়সে বিভিন্ন ফ্যাশন, বিভিন্ন মতধারার সঙ্গেও নিজেকে জড়িত করে ফেলে অনেকে৷ পৃথিবীতে সব বড় পরিবর্তনে এই বয়সের মানুষরাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে৷ আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও তরুণ প্রজন্মই বেশি অংশ নিয়েছিল৷ কিন্তু এখন কথা হচ্ছে, জঙ্গিবাদে যারা জড়াচ্ছে, তারা আসলে কোন মতাদর্শের দিকে এগোচ্ছে? এটার সঙ্গে একটু মিল আছে ড্রাগ অ্যাডিকশন, অর্থাৎ মাদকের নেশার৷ সবাই কিন্তু জেনে-বুঝে ড্রাগ নেয়া শুরু করে না৷ অনেকে কৌতূহল থেকে বা অন্যের প্রলোভনেও ওই পথে পা বাড়ায়৷''

তাজুল ইসলামের সাক্ষাৎকার

যাদের পারিবারিক জীবনে সমস্যা আছে বা ধর্মের প্রতি যারা একটু বেশি অনুভূতিপ্রবণ, জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো তাদেরই নানা ছল-চাতুরীর মাধ্যমে দলে ভেড়ায় – এমন একটি ব্যাখ্যাও উঠে এসেছে ড. তাজুল ইসলামের কথায়৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘তারা (জঙ্গিরা) প্রথমে মসজিদে নিয়ে যায়, অথবা কোনো বৈঠকে নিয়ে যায়৷ সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রথমে তারা ধর্মের স্বাভাবিক কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলে, যাতে মনটা নরম হয়৷ তারপর তারা শুরু করে পৃথিবীর কোথায় মুসলমানদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে এসব বলে এবং এই সংক্রান্ত ভিডিও দেখিয়ে বিক্ষুব্ধ করার চেষ্টা করে৷ একই সঙ্গে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অপ্রাসঙ্গিক এবং জাল হাদিসও শোনানো হয়৷ যারা জঙ্গি হচ্ছে তারা কিন্তু পরিপূর্ণ কোরআন জানে না, ইসলামও জানে না৷ অনেকে তো নামাজ-রোজাও ঠিকমতো করে না৷ তাদের ভেতরে শুধু ইসলাম এবং মুসলিমদের প্রতি এক ধরনের মমত্ব আছে৷ জঙ্গিবাদীরা এটাকেই কাজে লাগায়৷ খেপিয়ে তোলার পর এক সময় জরা তরুণদের এটাও বলে যে, দেশ চলবে আল্লাহর আইনে, মানুষের তৈরি আইনে নয়৷''

অভিজ্ঞ এই মানসিক এবং মাদক নেশাজনিত সমস্যার বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা ড. তাজুল ইসলামের মতে, তরুণদের জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হলে পরিবার থেকেই কাজ শুরু করতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি গার্জিয়ানদের এ কথাই বলি যে, আপনার ছেলের মধ্যে ভালনারেবিলিটি আছে, তারুণ্যের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে এবং আশেপাশে এমন কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী আছে যারা প্রলোভন দেখাবে এবং আপনার সন্তানকে নিয়ে যাবে৷ কিন্তু গুড প্যারেন্টিং থাকলে স্বার্থান্বেষী মহলও ক্ষতি করতে পারবেনা৷ সন্তানের সঙ্গে যদি বাবা-মায়ের অনেক বেশি দূরত্ব থাকে, সন্তানের মনোজগতের পরিবর্তন যদি তারা খেয়াল করতে না পারেন, তাহলে গর্ত দিয়ে তো সাপ ঢুকেই যাবে৷''

‘গর্তের সাপ' থেকে সন্তানদের দূরে রাখতে হলে স্নেহপরায়ণ এবং বন্ধুবৎসল বাবা-মাকে সতর্ক তো হতে হবেই, পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও সক্রিয় থেকে সহায়কের ভূমিকা পালন করতে হবে৷

দেশে বেশির ভাগ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই খেলার মাঠ নেই, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার বিশেষ কোনো আয়োজন নেই, ‘খেলাঘর', ‘কচিকাচার মেলা'-র মতো সংগঠনগুলোও যে প্রায় বিলুপ্তির পথে এসবও তরুণ প্রজন্মের একাংশের জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকতে সহায়তা করছে বলে মনে করেন ড. তাজুল ইসলাম৷ এ বিষয়গুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘‘তথ্য-প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেটের ব্যবহার এত বেশি বেড়েছে যে খেলাধুলা, গান-বাজনা থেকে শুরু করে সোস্যালাইজেশনের অনেক বিষয় থেকেই একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছি আমাদের সন্তানদের৷ আমরা আসলে আমাদের সন্তানদের জীবনটাকে ছোট করে ফেলছি৷ এই ছোট জীবন থেকে বড় কিছু হওয়ার সুযোগ নেই৷''

সাক্ষাৎকারে নতুন প্রজন্মকে জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখার উপায় হিসেবে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম৷ তবে তাঁর মতে, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উঠতি বয়সিদের প্রতি পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সমাজের প্রতিটি স্তরে বিশেষ মনোযোগ এবং যত্ন৷ ড. তাজুল ইসলামের ভাষায়, ‘‘স্কুল, কলেজ, পরিবার এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে আবার উজ্জীবিত করতে হবে৷ সবকিছু ঠিকভাবে কাজ করলেই কেবল শিশু, কিশোর, তরুণদের সার্বজনীন মানবিক বিকাশটা সম্ভব৷''

বন্ধু, আপনি কি ড. তাজুল ইসলামের সঙ্গে একমত? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য