যুদ্ধ সম্পর্কে অনীহার কারণ ড্রেসডেন
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় শেষ লগ্নে মিত্রশক্তির হামলায় জার্মানির ড্রেসডেন শহর কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো৷ যুদ্ধের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা জার্মানির মানুষের উপর এমন রেখাপাত করেছিলো, যে আজও বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিলে জার্মানি তার সীমিত ক্ষমতাবলেও সেই সংকট এড়ানোর চেষ্টা করে৷ ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর সক্রিয় ভূমিকা সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটায়৷ সাবেক পূর্ব জার্মানির যুদ্ধ-বিরোধী পরিবেশে দীর্ঘদিন কাটানোর ফলে ব্যক্তি হিসেবেও তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জার্মান সেনাবাহিনীও সংঘাত এড়িয়ে চলেছে৷ আফগানিস্তানের মতো আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযানে অংশ নিয়ে লড়াইয়ের বদলে পুনর্গঠনের কাজেই মন দিয়েছে ‘বুন্ডেসভেয়ার'৷
হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি শাসনযন্ত্র শুধু এক বিকৃত আদর্শের ভিত্তিতে ঠান্ডা মাথায় সুপরিকল্পিতভাবে প্রায় ৬০ লক্ষ নিরপরাধ মানুষের নিধন যজ্ঞ চালায় নি, যুদ্ধ চালিয়ে ইউরোপের একটা বড় অংশ নিজেদের দখলেও এনেছিলো৷ আন্তর্জাতিক মিত্রশক্তি নাৎসি জার্মানিকে পরাস্ত করতে তাদের সামরিক শক্তি উজাড় করে যুদ্ধে নামে৷ জার্মানিকে শায়েস্তা করতে বেশ কয়েকটি বড় শহরের উপর মারাত্মক বিমান হামলা চালানো হয়৷ অনেক রণকৌশল বিশেষজ্ঞ মনে করেন, যুদ্ধের কৌশলগত স্বার্থে এভাবে এক একটা গোটা শহরের উপর বোমাবর্ষণের কোনো প্রয়োজন ছিল না৷ তাছাড়া ১৯৪৪ সালেই হারজিতের ফয়সালা প্রায় হয়ে গিয়েছিলো৷ শহর হিসেবেও ড্রেসডেন-এর কৌশলগত বা অর্থনৈতিক গুরুত্ব তেমন ছিলো না৷ শিল্পকলার কেন্দ্র হিসেবে শহরটিকে ‘এলবে নদীর তীরে ফ্লোরেন্স' হিসেবে পরিচিত ছিলো৷
অনেকের মতে, জার্মান জাতিকে শিক্ষা দিতেই এটা করা হয়েছিলো৷ ১৯৪৫ সালে ড্রেসডেন শহরের উপর হামলাও সে রকমই এক দৃষ্টান্ত৷ ১৩ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ড থেকে মোট ২৪৫টি ‘ল্যাংকেস্টার' বোমারু বিমান রওয়ানা হয়ে মাত্র ২৩ মিনিট ধরে বোমাবর্ষণ করে গোটা শহরটিকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছিলো৷ এই ধ্বংসলীলার সময় সোভিয়েত ‘রেড আর্মি' শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলো৷ তাদের নেতা মার্শাল শুকভ বলেছিলেন, সোভিয়েত বাহিনীর পক্ষে এমন বর্বরতা কখনো সম্ভব হতো না৷
ড্রেসডেন শহরের উপর হামলা ইংল্যান্ডেও বিতর্কিত বিষয়৷ সে দেশেও অনেকের কাছে এই অভিযান অপ্রয়োজনীয় ছিলো৷ জার্মানির প্রতি ‘রয়েল এলার ফোর্স' বিমান বাহিনীর প্রধান আর্থার হ্যারিস-এর ব্যক্তিগত ক্রোধকেই এমন অনেক হামলার জন্য দায়ী করা হয়৷ ১৯৯২ সালে লন্ডনে যখন তাঁর একটি ব্রোঞ্জ মূর্তি উদ্বোধন করা হয়েছিলো, তখন অনেক বিক্ষোভকারী তাঁকে ‘গণহত্যাকারী' হিসেবে বর্ণনা করে স্লোগান দিচ্ছিলো৷
এসবি / এআই (এপি, ডিডাব্লিউ)