যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন রশীদ
২৫ মে ২০১১একাত্তরের ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনী ধ্বংসলীলা চালায়৷ সেসময় পাক বাহিনীর এই হামলার খবর দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লেগেছিল৷ তখন দিনকয়েকের মধ্যেই ঢাকা ত্যাগী মানুষের জনস্রোত বুঝিয়ে দিয়েছিল পরিস্থিতি খুবই খারাপ৷ যশোরের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ একাত্তরের অভিজ্ঞতা বলছিলেন এভাবেই৷
যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
একাত্তরে রশীদ ছিলেন দশম শ্রেণীর ছাত্র৷ দেশে যুদ্ধের খবর রেডিওতে বিক্ষিপ্ত শুনেছেন তিনি৷ দেখেছেন গ্রামমুখী মানুষের ঢল৷ এরপর মে মাসের দিকে তিনি মনস্থির করেন দেশকে স্বাধীন করতে লড়াই করবেন৷ কয়েকজন সঙ্গীসহ আব্দুর রশীদ তাই পাড়ি জমান ভারতে, প্রশিক্ষণের জন্য৷ তিনি জানান, ‘‘ভারতের বিহারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি আমরা৷ অস্ত্র চালনা এবং বিস্ফোরক বিষয়ে দশ-বারোটি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় আমাদেরকে৷''
গেরিলা যোদ্ধা
প্রশিক্ষণ শেষে জুলাইয়ে দেশে ফেরেন রশীদ৷ গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পড়ে শার্ষা এবং ঝিকরগাছা এলাকায়৷ টগবগে তরুণ রশীদ সঙ্গীদের নিয়ে শুরু করেন যুদ্ধ৷ পাকিস্তানি সেনাদের তটস্থ করতে ছোট ছোট অপারেশনে অংশ নিতেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে আমরা পাকিস্তানি সেনাদের টেলিফোনের তার কেটে নিয়ে আসতাম৷ রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করতাম৷ রেল লাইনের পাটি দিতাম উপড়ে৷''
অভিযান, হত্যা
অক্টোবরের শেষের দিকে এক বড় অভিযানে যোগ দেন রশীদ৷ তাঁর জীবনের অন্যতম কঠিন লড়াই ছিল সেটি৷ সেই অভিযানে রশীদরা সতেরজন পাক সেনাকে হত্যা করতে সক্ষম হন৷ তিনি জানান, ‘‘ঝিকরগাছার একটি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের আস্তানা ছিল৷ আমরা ৩০-৩৫ জন রাত দু'টোর দিকে সেই আস্তানায় অভিযান চালাই এবং সতের জন পাক সেনাকে হত্যা করি৷''
এরকম লড়াই করতে গিয়ে একবার বেশ কঠিন অবস্থার মধ্যে পড়ে যান রশীদ৷ সামনে শত্রুসেনা, পেছনে নিজেরই সহযোদ্ধারা৷ নিজামপুরের সেই যুদ্ধের মাঝে পড়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা রশীদের৷ তবে, ভাগ্য ভালো৷ বেঁচে গিয়েছিলেন তখন৷
রশীদের আক্ষেপ
রশীদের বয়স এখন ষাট বছর৷ আক্ষেপের সুরে তিনি জানালেন, গণমানুষের হয়ে যুদ্ধ করলেও কোন খেতাব তিনি পাননি৷ শুধু তিনি নন, বেসামরিক মানুষ যারা একাত্তরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, খেতাবের তালিকায় তাঁদের নাকি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর৷ বরং মুক্তিযুদ্ধের খেতাবের তালিকার সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরই বেশি দেখা যায়৷
আব্দুর রশীদ একজন স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা৷ মাসে দু'হাজার টাকা সরকারি ভাতাও পান তিনি৷ তবে, তাঁর মতে, বর্তমান সময়ে এই অর্থ যথেষ্ট নয়৷ তাছাড়া অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও আলাদা কোন সুযোগ-সুবিধা নেই রশীদের জন্য৷ তিনি বলেন, ‘‘দুই হাজার টাকা ভাতা দিয়ে কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করা যায়না৷ পাঁচ হাজার টাকা ভাতা হলে খেয়ে পড়ে বাঁচা যেত৷''
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
আব্দুর রশীদ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে চান৷ তাঁর আশা, সরকার এই দাবি শীঘ্রই পূরণে সক্ষম হবেন৷ বাংলার মাটিতে সেই বিচার দেখার অপেক্ষায় তাই দিন গুনছেন রশীদরা৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক