যুক্তরাষ্ট্র সফরে মনমোহন সিং
২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের কৌশলগত সহযোগিতায় নতুন করে অক্সিজেন জোগাতে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ২৭শে সেপ্টেম্বর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসবেন প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে৷ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর জটিলতায় ভারত-মার্কিন সম্পর্কে যে মন্থরতা এসেছিল, সেটা কাটানোর চেষ্টা করা হবে, যার প্রথমেই আছে বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা চুক্তি৷ চুক্তির দায়বদ্ধতা শর্ত শিথিল করার জন্য নতুন দিল্লির ওপর চাপ দিতে পারেন ওবামা৷ সেটা বুঝেই ড. সিং স্পষ্ট করে দেবেন, যে দায়বদ্ধতা শর্ত হবে আন্তর্জাতিক নিয়মবিধি মেনেই৷ তার বাইরে কিছু নয়৷
উল্লেখ্য, চুক্তি অনুসারে একাধিক মার্কিন কোম্পানি ভারতে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছিল৷ যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেনারেল ইলেকট্রিক, ওয়েস্টিংহাউস৷ কিন্তু পরমাণু দুর্ঘটনার কথা চিন্তা করে ঐ চুক্তিতে পরমাণু দায়বদ্ধতার যে শর্ত যুক্ত করে ভারত, তাতে পরমাণু চুল্লিতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে৷ এতে পিছিয়ে আসে ঐসব কোম্পানি৷ মনমোহন সিং-ওবামা বৈঠকে পরমাণু বিদ্যুতের পথ সুগম হলে প্রায় ১৫ হাজার কোটি ডলারের বাজার খুলে যাবে৷
অ্যাজেন্ডার দ্বিতীয় বিষয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা৷ ভারত যৌথ সমরাস্ত্র উদ্ভাবন এবং উৎপাদনে রাজি আছে, যদি প্রযুক্তি হস্তান্তর করা হয়৷ এছাড়া আছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ৷ এই প্রসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ চুক্তি সম্পাদনে ভারতের আগ্রহী৷ অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আছে জাতিসংঘের সংস্কার এবং তার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী আসনে মার্কিন সহযোগিতা, সন্ত্রাস এবং আফগানিস্তান পরিস্থিতি৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক হবে ২৯শে সেপ্টেম্বর৷ বাংলাদেশে ভোট এসে গেল৷ সম্ভবত এটাই বর্তমান প্রধানমন্ত্রিত্বকালে মনমোহন সিং-হাসিনার শেষ বৈঠক৷ স্বভাবতই উঠে আসবে তিস্তা চুক্তি এবং স্থলসীমা চুক্তি প্রসঙ্গ৷ স্থলসীমা চুক্তি বিলটি কার্যকর করার জন্য দরকার সংসদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন৷ সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে বিলটি পাশ করাবার সর্বতোভাবে চেষ্টা করার কথা জানাবে ভারত৷ অন্যান্য ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বেড়েছে৷ যেমন, বিদ্যুৎ, দিল্লির দেয়া উদার শর্তে ৫,৪০০ কোটি টাকার ঋণে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি৷ ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশের পণ্যের জন্য ভারতের বাজার আরো সম্প্রসারিত করার এবং শুল্ক সুবিধা দেবার কথা তুলতে পারে বাংলাদেশ৷
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে টালবাহানা কেটে গেছে৷ উভয় নেতা মিলিত হচ্ছেন৷ ভারত তার পুরানো দাবি তুলবে৷ পাকিস্তানের মাটি থেকে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাস রোধ করা এবং সীমান্তে গুলি বিনিময়ের মত ঘটনা বন্ধ করার প্রসঙ্গ৷ তবে রুটিনমাফিক আশ্বাস প্রতি-আশ্বাসই সার হবে৷ কাজের কাজ কতটুকু হবে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে যথেষ্ট সংশয়ের অবকাশ আছে৷ অন্তত অতীত অভিজ্ঞতা তাই বলে৷ পাকিস্তানের দিক থেকে হয়ত ভারতকে সবথেকে সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের স্থান দেবার কথা জানাতে পারেন নওয়াজ শরিফ৷ মনমোহন সিং-শরিফ আলোচনায় আভাস পাওয়া যাবে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী শেষ কথা বলার অবস্থায় আছে কিনা৷