ম্যালেরিয়া দমনে নতুন টিকা
২২ জুন ২০১৪‘‘তুমি যদি তাকে বাইরে রাখতে না পার, তাহলে তাকে ভেতরে আটকে রাখ৷'' এমনটি মনে করেন অ্যামেরিকার রোড আইল্যান্ড হাসপাতালের গবেষকরা৷ তাঁরা এমন একটি অ্যান্টিবডি আবিষ্কার করেছেন, যা ম্যালেরিয়া উদ্দীপক পিএফএসইএ-১ নামের প্রোটিনকে প্রতিরোধ করতে পারে৷
লোহিত কণিকায় বিস্তৃত হয়ে বের হয়ে আসতে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর প্রয়োজন হয় এই প্রোটিন৷ জীবাণুগুলি রক্তে ছড়িয়ে যাওয়ার ফলে রোগীর জ্বর দেখা দেয়৷
গবেষকরা পিএফএসইএ-১ নিয়ে গবেষণা করার সময় আশ্চর্যজনক আবিষ্কার করেন: এই প্রোটিনকে একটি বিশেষ অ্যান্টিবডি দিয়ে আটকে দিলে জীবাণুগুলির জীবনীশক্তিও হ্রাস পায়, এগুলি আর বৃদ্ধি পেতে পারে না৷
যেন এক জ্বলন্ত বাড়ি
‘‘বলা যায় আমরা তাদের এক জ্বলন্ত বাড়িতে আটকে দেই৷ এরা কোথাও পালাতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না৷'' বলেন সমীক্ষার পরিচালক জোনাথান কুর্টস৷
সাধারণত একটি মশার কামড়েই রক্তে জীবাণু ঢুকে যায়৷ সেখান থেকে চলে যায় লিভারে৷ এরপর লোহিত কণিকায় ঢুকে বিস্তার লাভ করে৷ একটি জীবাণু থেকে আট কিংবা ২৪টি পর্যন্ত হয়ে যায়৷
লোহিত কণিকা ফেটে যাওয়ার আগের অবস্থাকে ‘শিজোন্ট' বলা হয়৷ এই সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক ম্যাগাজিন সাইন্স-এ বর্ণনা করেছেন গবেষকরা৷ ‘শিজোন্ট' আবার তৈরি করেপিএফএসইএ-১ প্রোটিন৷
জীবাণুরোধে অ্যান্টিবডি
গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিশেষ ধরনের অ্যান্টিবডি, পিএফএসইএ-১ প্রোটিনের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বিস্তৃতি রোধ করে৷ এছাড়া এই অ্যান্টিবডির টিকা মারাত্মক ধরনের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত গবেষণাগারের ইঁদুরগুলির আয়ু বাড়িয়ে দেয়৷ সাধারণত এই ধরনের ম্যালেরিয়া বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মারণঘাতী হয়ে থাকে৷
জোনাথান কুর্টসের কথায়, ‘‘গতানুগতিকের চেয়ে কিছুটা ভিন্নরকম এই পদ্ধতিতে সরাসরি আমরা মানুষের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছি৷ আংশিক পরীক্ষা ইঁদুরের ওপরও চালানো হলেও আসল উপাদানটা মানবদেহের নমুনা নিয়েই বের করা হয়েছে৷ তাই এই টিকা মানবদেহে কার্যকর হবে বলে আমরা আশা করি৷''
গবেষকরা তাঞ্জানিয়ায় ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ৭৮৫ বাচ্চার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান৷ দেখা গিয়েছে কয়েকজন বাচ্চা দুই বছর বয়সে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী শক্তি অর্জন করেছে৷ ম্যালেরিয়ার জীবাণু তাদের শরীরে থাকলেও অসুস্থ হয়নি এই শিশুরা৷ অর্থাৎ কিছু মানুষ সহজাতভাবেই এই জীবাণু প্রতিরোধী উপাদান শরীরে বহন করে৷
‘‘আমরা অতি উন্নত মলিকিউল বায়োলজির সাহায্যে জীবাণুর জিন ও প্রোটিন শনাক্ত করতে সক্ষম হই৷ এগুলি ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী বাচ্চাদের অ্যান্টিবডিতে শনাক্ত করা গেলেও অসুস্থ বাচ্চাদের অ্যান্টিবডিতে দেখা যায়নি৷'' বলেন গবেষক কুর্টস৷
একই ধরনের ফলাফল
এরপর আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাতেও একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গিয়েছে৷ আর একটি পরীক্ষা চালানো হয় কেনিয়ার তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ওপর৷ এতেও দেখা যায়, যাদের শরীরে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি রয়েছে, তাদের রক্তে ম্যালেরিয়ার জীবাণুর অস্তিত্বও অনেক কম৷
‘‘আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য বানরের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো৷ এরপর মানুষের ওপর আরো পরীক্ষা চালানো হবে৷'' জানান কুর্টস৷ এই অভিজ্ঞতা কার্যকর টিকা তৈরির ব্যাপারে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে৷
হামবুর্গ শহরের ব্যার্নহার্ড-নখ ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিকাল মিডিসিন-এর ম্যালেরিয়া গবেষক টোমাস ইয়াকবস গবেষণার এই ফলাফলকে অত্যন্ত ‘উত্তেজনপূর্ণ' ও ‘বিশ্বাসযোগ্য' বলে উল্লেখ করেন৷ তবে বাস্তবক্ষেত্রে এই টিকা কতটা কার্যকর হবে,সেটা এখন দেখার বিষয়৷