ম্যার্কেলের পর আসতে পারেন ‘মিনি ম্যার্কেল’
১১ আগস্ট ২০২০দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে আর ক্ষমতায় ফিরতে প্রস্তুত নন৷ এমনকি করোনা সংকট ভালোভাবে সামলানোর জন্য জনপ্রিয়তা আবার বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও তিনি পঞ্চম কার্যকাল সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করছেন না৷ জার্মানি তথা ইউরোপের এত বড় মাপের নেতা হিসেবে স্বীকৃত মানুষটির প্রস্থানের পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা পূরণ করতে জার্মানির রাজনৈতিক জগত এখনো প্রস্তুত নয়, এমনটাই এতকাল ধারণা করা হচ্ছিল৷ ২০২১ সালের সাধারণ নির্বাচনের বেশ কিছুকাল আগেই চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী স্থির করলো মহাজোট সরকারের ছোট শরিক দল এসপিডি৷ সেই দল আগামী সরকারের নেতৃত্ব দেবার সুযোগ পেলে বর্তমান অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস হবেন জার্মান চ্যান্সেলর৷ সোমবারই আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা করা হয়৷
করোনা সংকটের মাঝে এমন রাজনৈতিক ঘোষণার মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ আগামী নির্বাচনে শলৎস যে এসপিডি দলের শীর্ষ প্রার্থী হতে পারেন, বেশ কিছুকাল ধরে সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা হচ্ছিল৷ অর্থমন্ত্রী হিসেবে করোনা সংকটের মাঝে জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে তিনিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন৷ জনপ্রিয়তা ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার বিচারে তাঁর দলে অন্য কেউ ধারেকাছে আসতে পারেন না৷ তবে দল হিসেবে সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডির জনপ্রিয়তার অভাব সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ জনমত সমীক্ষায় মাত্র ১৪-১৬ শতাংশ সমর্থনের ভিত্তিতে আগামী সরকারের নেতৃত্ব দেবার স্বপ্ন বড়ই অবাস্তব৷ তবে শলৎস-কে সামনে রেখে সেই সংকট কাটিয়ে তোলার আশা করছে এসপিডি৷
অন্যদিকে সরকারের প্রধান শরিক সিডিইউ ও বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবিরেও ম্যার্কেলের উত্তরসূরী বাছাইয়ের জন্য জোরালো তৎপরতা চলছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক নেতা সেই প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছেন৷ এর মধ্যে করোনা সংকটের মাঝে সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান এবং বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস স্যোডার৷ নর্থরাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরমিন লাশেটও নিজেকে শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হবার যোগ্য বলে মনে করছেন৷ আসরে নেমেছেন ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস ও নরবার্ট ব়্যোটগেন নামের আরও দুই নেতা৷
জোট সরকারে অভ্যস্ত জার্মানিতে আগামী সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অন্যান্য দলের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ আপাতত জনপ্রিয়তার শিখরে রয়েছে সবুজ দল৷ আগামী সরকারে এই দলের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে মনে করা হচ্ছে৷ যথেষ্ট ভোট পেলে উদারপন্থি এফডিপি ও বামপন্থি দলও জোট সমীকরণে শরিক হিসেবে গুরুত্ব পেতে পারে৷ শলৎস এবং ইউনিয়ন শিবিরের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর মধ্যে কে সম্ভাব্য শরিকদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবেন, সেই রসায়নের উপর আগামী জোট সরকারের গঠন নির্ভর করতে পারে৷
ম্যার্কেলের প্রস্থানের পরেও যারা ম্যার্কেলকে চ্যান্সেলর হিসেবে পেতে চান, তাদের কাছে ওলাফ শলৎস ‘মিনি ম্যার্কেল’ হিসেবে বেশ গ্রহণযোগ্য হতে পারেন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এমনটাই মনে করছেন৷ ম্যার্কেলের মতোই ধীর-স্থির, বিচক্ষণ, বাস্তববাদী, অন্তর্মূখী অথচ দক্ষ প্রশাসক হিসেবে ওলাফ শলৎস সুনাম কুড়িয়েছেন৷ এমনকি ইউনিয়ন শিবিরের কিছু ভোটার তাঁর প্রতি ঝুঁকতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, রয়টার্স)
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...