ম্যার্কেলের নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী শুলৎস
২৬ জানুয়ারি ২০১৭কে কোন দায়িত্ব নিচ্ছেন?
সিগমার গাব্রিয়েলের এই পদত্যাগ তিন-দফা, কেননা তিনি এসপিডি দলের সভাপতিত্ব, সেপ্টেম্বরের সংসদীয় নির্বাচনে দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হবার সুযোগ ও ম্যার্কেল মন্ত্রীসভায় অর্থনীতি তথা জ্বালানি মন্ত্রীর পদ, তিনটিই একসঙ্গে ছেড়ে দিলেন৷ তাঁর জায়গায় এসপিডি দলের সভাপতি ও চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হতে চলেছেন ইউরোপীয় সংসদের সাবেক সভাপতি মার্টিন শুলৎস৷
সাবেক আইনমন্ত্রী ও এসপিডি দলের প্রবীণ সদস্যা ব্রিগিটে সুইপ্রিস চলতি সংসদীয় কর্মকালের জন্য অর্থনীতি মন্ত্রী হতে চলেছেন৷ সাত মাস পরে সংসদীয় নির্বাচন; তার পর সুইপ্রিস বুন্ডেস্টাগে তাঁর আসন ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন৷
অপরদিকে গাব্রিয়েল হবেন জার্মানির নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কেননা বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার আগামী ১২ই ফেব্রুয়ারি তারিখে জার্মানির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন – যদি না কোনো অভাবনীয় অঘটন ঘটে, কেননা তিনি এসপিডি, সিডিইউ ও সিএসইউ দলের যৌথ প্রার্থী৷ বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইওয়াখিম গাউক একটি কর্মকালের পর আর দ্বিতীয়বার প্রার্থী হতে চাননি৷
গাব্রিয়েল পদত্যাগ করলেন কেন?
সকলেই প্রত্যাশা করছিলেন যে, গাব্রিয়েল চ্যান্সেলর পদের জন্য ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় নামবেন৷ কিন্তু গাব্রিয়েল বলেছেন যে, তাঁর ম্যার্কেলকে হারানোর কোনো সম্ভাবনা নেই দেখেই তিনি পদত্যাগ করেছেন৷
অন্যভাবে দেখতে গেলে, তিনি চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হবেন না, এ কথা ঘোষণা করার পর গাব্রিয়েলের পক্ষে আর দলের সভাপতি থাকা সম্ভব ছিল না; কাজেই সে পদটিও তিনি শুলৎসের হাতেই তুলে দিতে চান৷
সেপ্টেম্বরে নির্বাচন; সে অবধি গাব্রিয়েল রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে পারেন না, যদি তাঁর ভবিষ্যতের জন্য কোনো ধরনের রাজনৈতিক উচ্চাশা থাকে৷ এক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটি যে খালি হচ্ছে, সেটা তাঁর পক্ষে একটি সুবর্ণ সুযোগ৷ আগামী সাত মাস তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকবেন; সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর যদি ‘বড় জোট', অর্থাৎ সিডিইউ/সিএসইউ-এসিপিডি দলের জোট সরকারই বজায় থাকে – ও সেই সঙ্গে ম্যার্কেল আবার চ্যান্সেলর হন – তাহলে গাব্রিয়েল পররাষ্ট্রমন্ত্রীই থেকে যাচ্ছেন৷
শুলৎস আসার ফলে কি এসপিডির সম্ভাবনা বাড়বে?
প্রায় সব জরিপেই শুলৎস গাব্রিয়েলের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন৷ এমনকি ‘‘বিল্ড'' ট্যাবলয়েডের একটি সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী চ্যান্সেলর হিসেবে ৩৮ শতাংশ জার্মান শুলৎসকে দেখতে চান, যেখানে ম্যার্কেলকে চান ৩৯ শতাংশ – অর্থাৎ শুধু এক শতাংশ বেশি৷ ম্যার্কেল আর গাব্রিয়েলের মধ্যে তুলনায় ম্যার্কেল পাচ্ছিলেন ৪৬ শতাংশ, গাব্রিয়েল ২৭ শতাংশ সমর্থন৷
বামদল বা সবুজদের মতো সম্ভাব্য জোট সহযোগীদের কাছে শুলৎস গাব্রিয়েলের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য – এসপিডি দলের সদস্য ও বিশ্বস্ত এসপিডি ভোটারদের ক্ষেত্রেও যা প্রযোজ্য৷ অপরদিকে শুলৎস এতদিন ব্রাসেলসে থাকার পরে জার্মান ভোটারদের কাছে অতটা পরিচিত না হলেও, চলতি জোট সরকারের কোনো দোষত্রুটি তাঁর ঘাড়ে চাপানো চলে না৷ ম্যার্কেল মন্ত্রীসভার সদস্য না থাকার ফলে শুলৎস গাব্রিয়েলের চেয়ে অনেক বেশি খোলাখুলিভাবে ম্যার্কেলের সমালোচনা করতে পারবেন৷
শুলৎস আসার ফলে এসপিডির নীতি কী দাঁড়াবে?
শুলৎসকে আনার অর্থ, এসপিডি একটি শক্তিশালী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সপক্ষে মতপ্রকাশ করছে৷ কাজেই এএফডি প্রমুখ দক্ষিণপন্থি দলগুলির মতো এসপিডি দলের ইইউ বা অভিবাসনের বিরোধী হবার সম্ভাবনা আরো দূরাহত হলো৷
শুলৎসের আগমন এসপিডিকে আরো এক বা দুই শতাংশ ভোট এনে দেবে, বলে পর্যবেক্ষকরা ধরে নিচ্ছেন৷ অপরদিকে এএফডি যদি ১০ থেকে ২০ শতাংশ ভোট সংগ্রহ করে, তাহলে চলতি ‘বড় জোট' ছাড়া আর কোনো পন্থা বাকি থাকবে না৷ এবং আঙ্গেলা ম্যার্কেল যে সেই ‘নতুন' জোট সরকারেরও চ্যান্সেলর হবেন, তা ধরে নেওয়া যেতে পারে৷
জেফারসন চেজ/এসি