ম্যান ট্রেলার কুকুর
২৪ জুন ২০১৬হামবুর্গ বন্দরের পথে শত মানুষের ভিড়ে, জল-ঝড়-হাওয়ার মধ্যে ছ'ঘণ্টা আগে সেই পথ দিয়ে চলে যাওয়া একটা মানুষের খোঁজ করতে পারে শুধু এক ধরনের সার্চ ডগ বা ট্র্যাকার ডগ, যাদের বলা হয় ম্যান ট্রেলার৷
লক্ষ লক্ষ মানুষের মহানগর যে শুধু অফিস ছুটি হওয়ার সময়েই একটা জঙ্গল হয়ে ওঠে, এমন নয়৷ কেউ নিখোঁজ হলে, এই জঙ্গলে তাকে খুঁজে পাওয়ার আশা প্রায় নেই বললেই চলে৷ অনুসন্ধানকারীদের একমাত্র আশা হল,যদি তাদের সাথে কোনো ‘‘ম্যান ট্রেলার'' থাকে৷ কুকুরের প্রশিক্ষক ক্রিস্টিনে শ্যুলার জানালেন, ‘‘পুলিশ যখন আমাদের ডাকে, তখন তার অর্থ: কোনো মানুষের জীবন বিপন্ন, কোনো মানুষ নিখোঁজ হয়েছে৷ আমরা হলাম সেই নিখোঁজ মানুষটিকে খুঁজে পাবার, পলাতক অপরাধীকে খুঁজে বার করার শেষ পন্থা৷''
ফিনলে হলো একটি সার্চ ডগ বা ট্র্যাকার ডগ৷ ম্যান ট্রেলার হিসেবে সে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ মানুষকে খুঁজে বার করার ক্ষমতা রাখে৷ তবে ম্যান ট্রেলার হিসেবে সরকারি সার্টিফিকেট পাবার আগে ফিনলেকে একটি শেষ পরীক্ষা দিতে হবে৷ বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই ‘নিখোঁজ' ব্যক্তিটি তার ট্রেল বা হদিশ রেখে গেছে৷ সঙ্গে সঙ্গে অন্য মানুষের চলাফেরায় সেই ট্রেল বা গন্ধ ঢাকা পড়ে গেছে৷ বন্দর এলাকায় অন্যান্য সমস্যাও আছে: বাতাসে কিংবা জলের ঝাপটায় সেই গন্ধ মুছে যেতে পারে৷ সব মিলিয়ে ম্যান ট্রেলারের পক্ষে একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ ক্রিস্টিনে বললেন, ‘‘কুকুরটাকে গন্ধ শুঁকে শুঁকে চলতে হবে৷ ডগ হ্যান্ডলার-কে দেখতে হবে, কুকুরের যেন অন্য দিকে মন না যায়, পায়রা বা অন্য কোনো কুকুর কিংবা মানুষ দেখে বিক্ষিপ্ত না হয়ে পড়ে৷ আমাকে খেয়াল রাখতে হবে, পথে যেন কোনো বিপদ না ঘটে৷''
মানুষের নাক এর কাছে কিছুই নয়
প্রথমে ফিনলেকে নিখোঁজ মানুষটির শার্ট শুঁকতে দেওয়া হল৷ কুকুরটা ভালো করে তার গন্ধ শুঁকল৷ গন্ধটা চিনে নিয়ে স্মৃতিতে ধরে রাখতে ও পরে সন্দেহবিহীনভাবে শনাক্ত করতে কুকুরটার কয়েক সেকেন্ডের বেশি সময় লাগে না৷ মানুষের পক্ষে অকল্পনীয় – কিন্তু কুকুরের নাক মানুষের নাকের চেয়ে দশ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী৷ ক্রিস্টিনে জানালেন, ‘‘আমরা প্রতি মিনিটে ত্বকের প্রায় ৪০ হাজার কোষ হারাই৷ প্রত্যেকটি কোষের উপরেই শরীরের বিশেষ গন্ধ মাখা থাকে৷'' শুধুমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখা যায়, এত ছোট কোষগুলোর হদিশ পাওয়া খুব সহজ নয় – এ তো আর পায়ের ছাপ নয়৷ অতি ক্ষুদ্র কণাগুলি বাতাসে উড়ে গিয়ে ঘাসে কিংবা ঝোপঝাড়ে আটকে থাকতে পারে – কিন্তু সে ধরনের খোপ-খাপ, আনাচ-কানাচ বলে যদি একেবারেই কিছু না থাকে?
কাজেই অত্যন্ত নাছোড়বান্দা কুকুররাই শুধু ম্যান ট্রেলার হতে পারে৷ ক্রিস্টিনের ভাষ্যে, ‘‘কুকরকে ট্রেনিং দিতে বহু সময় লাগে৷ তাকে নিয়ে হাঁটতে যেতে হয়, পরিবেশ চেনাতে হয়; দেখতে হয়, সে মানুষজনের সঙ্গে ঠিকমতো ব্যবহার করছে কিনা, স্বভাব-চরিত্র ঠিক আছে কিনা৷ তারপর আছে ট্রেনিং৷''
ফিনলে-র বয়স আজ তিন বছর৷ জন্মের পর থেকেই তার ট্রেনিং চলেছে৷ ফিনলে যার খোঁজ করছে, সেই মানুষটি পাক্কা ছ'ঘণ্টা আগে এখান দিয়ে গেছেন৷ ট্রেনারের এখানে কুকুরকে ফলো করা ছাড়া আর কিছু করার নেই৷ কুকুরের উপরেই যা কিছু আশা৷ সত্যিই! ম্যানট্রেলার ফিনলে তার মানুষকে খুঁজে পেয়েছে৷ ফিনলে তার শেষ পরীক্ষাতেও পাশ!