বিখ্যাত ব্যক্তি
২৪ ডিসেম্বর ২০১২মাইকেল জ্যাকসন নেমে আসছেন ঘরের দেয়াল থেকে৷ ম্যাডোনা নাচছেন গাছে৷ মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা আর নেলসন ম্যান্ডেলা আপনার বাগানের সৌন্দর্য্য হয়ে হাসছেন৷ স্বপ্ন নয়, এসব এখন বাস্তবেও সম্ভব৷ বিজ্ঞানীরা নতুন প্রজাতির প্রাণী বা গাছের যেমন নাম দিচ্ছেন তাতে একদিন মাকড়সার নাম মাইকেল, বানরের নাম ম্যাডোনা আর ফুলের নাম গান্ধী, তেরেসা বা ম্যান্ডেলা হতেই পারে৷
মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম মানুষ হয়েও আমরা ক'জনই বা জানি৷ না জানার বা জানার আগ্রহ কম থাকার একটা কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত৷ অনেক দিন ধরে তাঁরা লক্ষ্য করছেন খুব খটমটে নাম বলে জীবজগতের কোনো কিছুর বৈজ্ঞানিক নামই সাধারণ মানুষ তো বটেই, এমনকি বিজ্ঞানীদেরও টানে না৷ অথচ প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে শত শত প্রজাতির সন্ধান৷ এর অনেকগুলো আবার বিলুপ্ত হতে চলেছে৷ সবার দৃষ্টি আকর্ষণের কৌশল হিসেবেই খুব বিরল বা বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ বা প্রাণীর নাম রাখা হচ্ছে বড় বড় তারকার নামে৷ তাই এক জেলি ফিশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত গায়ক, পরিচালক ফ্রাঙ্ক জাপ্পার নাম নিয়ে সঙ্গীদের সঙ্গে মহানন্দে মেতেছে পানিতে৷ কমেডিয়ান হিসেবে দর্শকদের অনেক আনন্দ দিয়েছেন পর্দায় সদা চনমনে, চটপটে জন ক্লিজে৷ এক বিজ্ঞানী তাই বিরল প্রজাতির এক বানরের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন ক্লিজেকে৷ ৭৩ বছর বয়সি মার্কিন অভিনেতা কিন্তু তাঁকে বানরের সঙ্গে মেলানোয় একটুও অসন্তুষ্ট নন৷
পেটার ইয়েগার জানালেন, তাঁদের নামে কোন প্রাণীকে ডাকা হচ্ছে এ কথা ভেবে কোনো তারকা নাকি কখনো অসন্তোষ প্রকাশ করেননি৷ বরং উল্টোটা হয়েছে৷ একবার এক মাকড়সার নাম রাখবেন জার্মানির বিনোদন জগতের তারকার নামে৷ সে কথা তাঁকে জানানোয় তিনি তো ভীষণ খুশি৷ ইয়েগারকে ফোন করে বললেন, ‘‘বেশ তো আমার নাম দিতে চান, দিন, কিন্তু তার আগে প্রাণিটি আসলে কেমন সেটা একটু দেখতে চাই৷ আমাকে একটু লাওসে নিয়ে যাবেন?'' তাঁর কৌতুহল মেটাতে সেবার সত্যি সত্যিই লাওস যেতে হয়েছিল ইয়েগারকে৷
জীবজগতের শ্রেণী এবং নামকরণের একটা বিষয়ই আছে বিজ্ঞানে৷ ট্যাক্সোনমি৷ এমনিতে বৈজ্ঞানিক নাম লেখা হয় লাতিন ভাষায়৷ মানুষের নাম যে হোমো স্যাপিয়েন তা-ও কিন্তু লাতিন৷ কার্ল লিনিয়াস ট্যাক্সোনমির নিয়মকানুন লিখেছিলেন ২৭৭ বছর আগে৷ বৈজ্ঞানিক নামে যে এভাবে তারকা ব্যক্তিত্বরা ঢুকে পড়বেন তখন সুইডিশ ভদ্রলোকের সেটা কল্পনাতেও আসার কথা নয়৷ আসলে তো মানুষ নিয়ম গড়ে, মানুষই ভাঙ্গে৷ লোভ-লালসায়, অসংযমে, অসেচনতায় মানুষই বিপন্ন করছে জীবজগৎকে৷ আবার দেখুন, তা রুখতে কী অদ্ভুতভাবে মানুষ এখন মাকড়সা, পাখি, মাছি থেকে শুরু করে ছোট-বড় কত গাছকেও ডাকছে মানুষের নামে৷
বেয়ঁসে নোয়েলস এ পৃ্থিবীতে যখন থাকবেন না তখন কিছু মাছি থেকে যাবে তাঁর নাম নিয়ে৷ বিজ্ঞানীরা সে ব্যবস্থা করে রেখেছেন ‘হর্সফ্লাই' নামের এক ধরনের মাছির সঙ্গে তাঁকে জুড়ে দিয়ে৷ কিন্তু মাছি কেন পেলো বেয়ঁসের নাম? কারণ, ওই ঘোড়া মাছি আর বেয়ঁসের পেছনের দিক অর্থাৎ নিতম্বটা নাকি একইরকম! লেডি গাগা ১৯ রকমের ফার্ন গাছের সঙ্গে চিরস্থায়ী হয়েছেন কেন জানেন? তাঁর মতো ওই ফার্নগুলোও নারী না পুরুষ এ নিয়ে নাকি সংশয় ছিল এক সময়!
সব ক্ষেত্রে অবশ্য মিল-অমিল বড় কথা নয়৷ তাহলে কি রক্তচোষা কোনো পরজীবীর নাম বব মার্লির নামে হয়? ডেভিড বাওয়িসহ অন্তত ডজন খানেক প্রয়াত ও জীবিত তারকার নাম নিয়ে ধন্য হয় মাকড়সা সমাজ? রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল গরবাচভের নাম মহিমান্বিত হয় বলিভিয়ার দুষ্প্রাপ্য এক অর্কিডের সঙ্গে জুড়ে?
চাইলে আপনিও পারেন এভাবে নিজেকে মহিমান্বিত, চিরস্মরণীয় করতে৷ শুধু বায়োপ্যাট-এর কাছে ৩ হাজার চারশ ডলার পাঠিয়ে অনুরোধ করুন, দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই মাকড়সা মাইকেল জ্যাকসন, বানর ম্যাডোনা আর গাঁদা, গোলাপ আর টগর গান্ধী, তেরেসা আর ম্যান্ডেলার পাশে আপনিও আছেন জবা ফুল হয়ে!