1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোদী-হাসিনা বৈঠকে উঠতে পারে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রসঙ্গ

২ সেপ্টেম্বর ২০২২

৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে দিল্লি আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কী কী বিষয়ে আলোচনা হতে পারে? ডিডাব্লিউয়ের এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট।

https://p.dw.com/p/4GLOM
মোদী-মমতা
ছবি: ASSOCIATED PRESS/picture alliance

সাম্প্রতিককালে ভারত এবং বাংলাদেশে একাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আগামী সপ্তাহে ভারতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সফরে এবিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে পারেন তিনি। বাংলাদেশ মনে করে, এই ধরনের ঘটনা সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে। যা দুই দেশেরই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। সূত্র জানিয়েছে, হাসিনার ভারত সফরের জন্য বাংলাদেশ যে আলোচনার তালিকা তৈরি করেছে, এই বিষয়টি তার একেবারে প্রথমে আছে। ডয়চে ভেলে সেই তালিকা দেখেছে।

বস্তুত, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই উদ্বিগ্ন। গত বছর পুজোর সময় কুমিল্লার ঘটনা এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কিছু ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ এর আগেও চিন্তা প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি ভারতের এক জাতীয় রাজনীতিবিদ ব্যক্তিগত কারণে ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে বাংলাদেশের এক মন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা হয় বলে ডয়চে ভেলেকে ওই রাজনীতিবিদ জানিয়েছেন। কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তার একটি তালিকা বাংলাদেশের মন্ত্রী ভারতের ওই রাজনীতিবিদকে দিয়েছেন বলে তার দাবি। সেই তালিকাটিও ডয়চে ভেলে দেখেছে। ভারতের ওই রাজনীতিবিদের দাবি, সেই মন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনার সফরে এই বিষয়টিকে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রকের এক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িক সংহিসতার প্রসঙ্গেই ‘সীমান্ত হত্যা’র বিষয়টিও বৈঠকে উঠে আসতে পারে। এবিষয়েও বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে সরব।

ভারতীয় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে হাসিনা

প্রসঙ্গ তিস্তা চুক্তি

এবারের বৈঠকে তিস্তাচুক্তিও গুরুত্ব পাবে বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা। বস্তুত, হাসিনার সফরের দেড় সপ্তাহ আগে ভারত এবং বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জয়েন্ট রিভার কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকে আরো বেশ কিছু নদী নিয়ে আলোচনা হলেও তিস্তার জলবন্টন নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি ভারত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে বলে বৈঠক নিয়ে জারি হওয়া বিবৃতিতে লেখা হয়েছে।

তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ বরাবরই সরব। ভারতে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিষয়টি নিয়ে ভারত অনেকটা এগিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু বাদ সাধে পশ্চিমবঙ্গ। ২০১০ সালে মনমোহন সিং বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই করতে চেয়েছিলেন বলে কূটনীতিবিদদের একাংশের বক্তব্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের এক কর্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সে সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে মনমোহন সিং আলোচনা করেছিলেন। সে সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব বুদ্ধদেবকে একটি নোট দিয়েছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল, সিকিমে যেভাবে তিস্তার উপর একের পর এক বাঁধ তৈরি হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের সঙ্গে জলবন্টন হলে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা সমস্যায় পড়বে। ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে বুদ্ধদেব চুক্তির বিপক্ষে মত দেন।

এর এক বছরের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিবর্তন হয়। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনমোহন সিংহ ফের তিস্তা চুক্তির চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ সফরে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সফরসঙ্গি করার কথা বলেন। সে সময় বুদ্ধদেবকে দেওয়া তিস্তা সংক্রান্ত নোটটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখানো হয়। ওই নোট পড়ে মমতা চুক্তি নিয়ে বেঁকে বসেন। তারই জের এখনো চলছে।

বাস্তবে ভারত সরকার বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করলে পশ্চিমবঙ্গের কিছু করার থাকবে না। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে কোনো কেন্দ্রীয় সরকারই পশ্চিমবঙ্গের অভিমত ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি করতে স্বচ্ছন্দ নয়। বাংলাদেশও বিষয়টি বোঝে। বস্তুত, পদ্মা সেতু তৈরির পর মমতা হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তার প্রেক্ষিতে হাসিনা একটি চিঠি দিয়ে মমতাকে জানান, ভারত সফরকালে তিনি মমতার সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, হাসিনার সফরকালে মমতাকে কেন্দ্রীয় সরকার কোনো আমন্ত্রণপত্র পাঠায়নি।

অতীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতে এলে সীমান্ত অঞ্চলের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানানোর একটি ঐতিহ্য ছিল বলে কোনো কোনো কূটনীতিবিদ দাবি করেন। এবিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। অরিন্দম জানিয়েছেন, অতীতের কথা তিনি বলতে পারবেন না। তবে এবারে এমন কিছু হয়েছে বলে তিনি জানেন না। ফলে একটি বিষয় প্রায় স্পষ্ট, হাসিনা-মমতা বৈঠকের সম্ভাবনা বিশ বাঁও জলে। এখন দেখার, এই পরিস্থিতিতে মোদী-হাসিনা বৈঠকে তিস্তা প্রসঙ্গ কীভাবে ওঠে এবং মোদী বিষয়টিকে কীভাবে সামলান। বাংলাদেশের আলোচনার তালিকায় ১০ নম্বরে তিস্তা প্রসঙ্গের উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য, ১১ বছর পর এবার জেআরসি-র বৈঠক হয়েছে। ফলে তিস্তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কূটনীতিবিদেরা।

দীর্ঘদিন ধরে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন সাংবাদিক সুনীল চাওকে। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় পশ্চিমবঙ্গ রাজি না হলে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে তিস্তা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা কঠিন। তবে এবার বিকল্প কোনো পথ খোলার সম্ভাবনা আছে।’’

সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে সাংবাদিক আশিস গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘সীমান্ত অঞ্চলে দুই দেশের ঘটনা যে প্রভাব ফেলে, তা এখন প্রমাণিত। ফলে এবিষয়ে দুই দেশের আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আলোচনার ফলাফল কতটা বাস্তবে রূপায়িত হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।’’

শেখ হাসিনার এবারের সফর অনেক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। অন্যদিকে, ভূরাজনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশকে কাছে পেতে চাইছে ভারত। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক যত দৃঢ় হবে, ভারত তত অস্বস্তিতে পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে ভারত চাইছে, বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রাখতে। শেখ হাসিনার সফর সে কারণেই ভারতের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।