মোদীর প্রতিহিংসার রাজনীতি?
৩০ ডিসেম্বর ২০১৬বিরোধীদের বরাবরের অভিযোগ, প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহার করেন৷ রাজনৈতিক লড়াই পাশ কাটিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কার্যত লেলিয়ে দেন৷ কিছুদিন আগেই সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তের সূত্রে তৃণমূল সাংসদ সুদীপ ব্যানার্জিকে সমন পাঠায় সিবিআই৷ ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি মন্তব্য করেন, সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে নোট বাতিলবিরোধী আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না৷ কিন্তু সেই প্রচ্ছন্ন হুমকির তোয়াক্কা না করেই পশ্চিমবঙ্গের আরেক চিট ফান্ড সংস্থা ‘রোজ ভ্যালি’র আর্থিক অনিয়মের তদন্তের সূত্রে আরেক তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল'কে সমন পাঠিয়েছে সিবিআই৷
শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, দিল্লিতে আরেক মোদীবিরোধী রাজনীতিক, আম আদমি পার্টি (আপ)-এর নেতা, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সমান তৎপর৷ দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের দপ্তরে একজন স্পেশাল অফিসার নিয়োগ এবং সত্যেন্দ্র জৈনের মেয়ের একটি জনস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই৷ জৈনের বিরুদ্ধে ৭টি এফআইআর এবং দিল্লির উপ মুখ্যমন্ত্রী মনীশ শিশোদিয়ার বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর দায়ের হয়েছে৷ ক্ষুব্ধ কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘‘তদন্তে ভয় পাই না৷ দিল্লি প্রশাসনের সমস্ত নিয়োগের তদন্ত করতে পারেন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শিল্পসংস্থার থেকে টাকা নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তারও তদন্ত হবে তো?’’
নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এই ঘুষ নেওয়া নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছেন কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী৷ বারবার জবাব চেয়েছেন৷ কিন্তু এক্ষেত্রে অন্য কৌশল নিয়েছেন মোদী৷ রসিকতার ছলে পুরো বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন৷ যেন অভিযোগগুলি আদতে অসার এবং গুরুত্ব দেওয়ার কোনো দরকারই নেই৷ অথচ সিবিআই তৎপর আরেক বিরোধী নেত্রী মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি ব্যাঙ্কে কত কোটি টাকা জমা করছে, তার নিখুঁত হিসেব জোগাড় করতে৷ একই অভিযোগ কিন্তু উঠেছে মোদীর নিজের দল বিজেপি'র বিরুদ্ধেও৷ বড় অঙ্কের নোট বাতিলের ঘোষণার দিনই ব্যাঙ্কে কোটি টাকার ওপর জমা দেওয়ায়, বা জমি কিনতে বহু কোটি খরচ করায়৷ কিন্তু সেই ব্যাপারে সরকারের কোনো হেলদোল নেই৷
হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত তার নিজস্ব নিয়মেই এগোচ্ছে এবং প্রয়োজনমতো ডাক পড়ছে অভিযুক্তদের৷ কিন্তু যেভাবে সমস্ত বিরোধী দলের বিরুদ্ধেই সিবিআই’কে প্রয়োগ করছে মোদীর সরকার, তাতে অন্যরকম সন্দেহ হওয়াও নেহাত অযৌক্তিক নয়৷ সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনও দেশের প্রধান আদৌ এভাবে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন কিনা৷
প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷