মেডিকেলে অনশন চলছেই
২০ জুলাই ২০১৮মেডিকেল কলেজে গত দু'বছর ধরে হস্টেলের জন্য কাউন্সেলিং বন্ধ ছিল৷ এই দু' বছরে ভর্তি হওয়া অনেক ছাত্র এবং তাঁদেরও সিনিয়র বহু ছাত্র হস্টেলে জায়গা পাননি৷ কিন্তু অবশেষে যখন ১১ তলা একটি নতুন হস্টেল তৈরি হলো, মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ সেখানে একমাত্র প্রথম বছরের, অর্থাৎ সদ্য ভর্তি হওয়া ডাক্তারি পড়ুয়াদেরই জায়গা দিলো৷ এতেই আপত্তি জানান সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীরা৷ তাঁরা প্রথমত দাবি করেন, ওই নতুন হস্টেলে তাঁদেরও থাকার জায়গা দিতে হবে৷ এবং বলেন, ছাত্রদের সিনিয়রিটি, এবং কে কত দূর থেকে কলকাতায় পড়তে এসেছেন, তার ভিত্তিতে হস্টেলে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ কিন্তু সিনিয়র ছাত্রদের এই দাবি মানেনি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ৷ কারণ, হিসেবে তারা র্যাগিং প্রতিরোধে সর্বভারতীয় বিধির কথা বলছে, যেখানে প্রথম বছরের নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজের সিনিয়রদের থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা আবশ্যিক করা হয়েছে৷ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্রকে নাকি এমন কথাও বলতে শোনা গিয়েছে যে, তিনি যে কোনো মূল্যে সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রীদের সংস্পর্শ থেকে নতুনদের দূরে রাখবেন৷
কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ যেভাবে জটিল হচ্ছে, এই অনড় অবস্থান নেওয়ার জন্য একটু বেশিই মূল্য দিতে হতে পারে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে৷ ১০ জুলাই ৬ জন ছাত্র অনশন শুরু করেছিলেন৷ পঞ্চম দিনে তাঁদের মধ্যে দু'জনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়৷ কিন্তু আরো দু'জন সঙ্গে সঙ্গে এসে তাঁদের জায়গা নিয়ে নেন৷ আর ১৮ জুলাই রাত থেকে আরো ১৫ জন এসে যোগ দিয়েছেন অনশনে৷ এর মধ্যে একদিন সিনিয়র ডাক্তাররা এসে ১২ ঘণ্টার এক প্রতীকী অনশনে বসে তাঁদের সমর্থন জানিয়ে গেছেন৷ মেডিকেল কলেজের ইনটার্ন ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তাঁরা এই আন্দোলনের সঙ্গে আছেন৷ তেমন পরিস্থিতিতে তাঁরাও কাজ বন্ধ করে অনশনে বসবেন৷ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রথম ৬ জন অনশনকারীর বাড়ি পুলিশের হাত দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল, যাতে তাঁরা নিজেদের সন্তানদের হঠকারী আন্দোলন সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন৷ কিন্তু সমস্যা হলো, ওই ৬ জন তো বটেই, বাকি আন্দোলনকারীদের আত্মীয়-বন্ধুরাও একদিন এসে ওঁদের পাশে বসে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন যে, তাঁরাও সঙ্গে আছেন৷ অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াচ্ছে এই শান্তিপূর্ণ অনশন আন্দোলনের খবর এবং অসংখ্য মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানাচ্ছেন৷
ফলে রীতিমতো চাপে পড়ে গিয়ে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, যদিও তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে উদ্বেগজনক কিছু ধরা পড়েনি৷ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, তিনি চাপ এড়াতে না পেরে অসুখের ভান করলেন৷ একদিকে কলেজে, তাঁর ঘরের বাইরে অনশনরত ছাত্রদের চাপ, অন্যদিকে অজানা কোনো চাপ৷ সেই চাপ সম্ভবত রাজনৈতিক৷ শাসকদলের মদতপুষ্ট বাহুবলীরা ঘনঘন মেডিকেল কলেজ চত্বরে সদল ঘুরে যাচ্ছেন বলেও শোনা যাচ্ছে৷ আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা কিন্তু এ ব্যাপারে বরং তাঁদের অধ্যক্ষের প্রতিই সহানুভূতিশীল৷ তাঁরা প্রকাশ্যেই জানাচ্ছেন, হয় অনশনরত ছাত্রদের ওপর পালটা চাপ দিতে, অথবা ছাত্রদের হয়ে সরকারের ওপর চাপ দিতেই এই শরীর খারাপের নাটক করছেন অধ্যক্ষ৷ এবং বিষয়টা যেখানে শেষ পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাত্রদের স্পষ্ট ঘোষণা যে, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটের মুখাপেক্ষী নন৷ কার মাথায় কে বসে আছে, সে নিয়ে ভাবিত নন তাঁরা৷ বরং তাঁদের হস্টেল সমস্যার সমাধানে তাঁরা এখনও তাঁদের প্রিন্সিপালের দিকেই তাকিয়ে৷
আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদেরই একজন, গৈরিক দে'র সঙ্গে এই আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় ডয়চে ভেলের৷ গৈরিক তাঁর সহপাঠী সহযোদ্ধাদের কথারই প্রতিধ্বনি করেন যে, নিজেদের ন্যায়সঙ্গত পাওনার জন্য লড়ছেন তাঁরা৷ তীব্র অভিমানও কাজ করছে ওঁদের মধ্যে৷ গৈরিক বললেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ যেহেতু অনশনরত ছাত্রদের শরীর-স্বাস্থ্য নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন, ওঁরাও কলেজ কর্তৃপক্ষের বানানো মেডিকেল কাউন্সিলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন৷ নিজেদের স্বাস্থ্যের খেয়াল ওঁরা নিজেরাই রাখতে পারবেন৷’’