মৃত্যু নিশ্চিত করবেন চিকিৎসক?
১৬ নভেম্বর ২০১৪কেউ যদি আত্মহত্যা করতে চায় এবং তা করতে সমর্থ হয়, তাহলে তাকে কারো পক্ষে ঠেকানো আসলে সম্ভব নয়৷ তবে চিকিৎসকদের কোনোভাবেই এতে সহায়তা করা উচিত হবে না৷ চিকিৎসকের কাজ হচ্ছে জীবন রক্ষা এবং বাঁচিয়ে রাখা৷
চিকিৎসকদের সহায়তায় স্বেচ্ছামৃত্যুর সমর্থকরা বলেন, ‘টার্মিনালি ইল' বা গুরুতর অসুস্থ বা সুস্থ হওয়ার আর আশা নেই এমন রোগীরা, যেমন ক্যানসারের রোগীরা, যদি স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণের সুযোগ পায় তাহলে তারা অনেক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে৷
তাদের দাবি হচ্ছে, তারা রোগীদের ‘মর্যাদাপূর্ণ' মৃত্যুর অধিকার আদায়ে লড়াই করছেন৷
স্বেচ্ছামৃত্যুর স্বপক্ষের ব্যক্তিরা বোঝানোর চেষ্টা করেন, গুরুতর অসুস্থ রোগীরা অপরিচিত এবং আবেগবিহীন মেডিসিন শিল্পের মুখোমুখি হন এবং এক জীবনমৃত অবস্থায় সময় পার করেন৷ এভাবে অনেক দেরিতে এক সময় তাদের অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু হয়৷
দৃশ্যত ‘মর্যাদাপূর্ণ'
সুস্থ হওয়ার আর আশা নেই এমন রোগীরা অনেক চাপ অনুভব করতে পারেন৷ এমনকি যারা মনের দিক থেকে পরিষ্কার আছেন তারাও – যদিও এটা সবসময় প্রকাশ্যে আলোচনা করা হয় না৷
কিছু রোগী নিজেদের প্রশ্ন করতে পারেন, আমার প্রিয়জনরা কি আমার প্রয়োজনের মাস বা বছরগুলোতে আমরা সেবা করবে? আমার কি উচিত আমার বেদনা এবং কষ্টের ভার তাদের উপর চাপানো? অথবা অপরিচিত কারো সেবা নিতে আমার কেমন লাগবে?
এসব চিন্তাভাবনার পর কারো কারো কাছে চিকিৎসকের সহায়তায় স্বেচ্ছামৃত্যু সহজ এবং দ্রুত সমাধান মনে হতে পারে৷ মনে হতে পারে ‘মর্যাদাপূর্ণ' মৃত্যু৷
কিন্তু আসলে এরকম আত্মহত্যা কোনোভাবেই ‘মর্যাদাপূর্ণ' হতে পারে না – রোগীর জন্যও নয়, আর যে সমাজ এটা অনুমোদন দিচ্ছে সে সমাজের জন্যও নয়৷ সহায়তা নিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যু আইনগতভাবে বৈধ হলে প্রত্যেক গুরুতর অসুস্থ রোগীকে উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হবে৷ আর তখন কেউ যদি বেঁচে থাকার ইচ্ছাকে অহংকারী মনে করবে অন্যরা – এমন ভাবনা থেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তবে সেটা কোনোভাবেই ‘মর্যাদাপূর্ণ' নয়৷
চিকিৎসকদের পক্ষে কঠিন
স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তাকে বৈধ করলে চিকিৎসকরাও অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে পড়বেন৷ তখন তাদের রোগীদের পরামর্শ দিতে হবে যে তার বেঁচে থাকা আর অর্থবহ কিনা৷
জার্মানির চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো সঙ্গত কারণেই স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ করার বিরোধী৷ তাদের মতে, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে কারো মৃত্যু ঘটাতে সহায়তার কোনো ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়৷ আর একারণেই সুইস সংগঠন ‘ডিগনিস' এর মতো কিছু সংগঠন, যারা স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছে, জার্মানিতে নিষিদ্ধ৷
মৃত্যুপথযাত্রীদের সহায়তা
মৃত্যুপথযাত্রী রোগীদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করা যেতে পারে ‘হসপিক কেয়ার' এবং ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে৷ রোগীর শেষ দিনগুলো কাটতে পারে মানুষের সহায়তায় সুরক্ষিত পরিবেশে৷ আধুনিক এবং কার্যকর বেদনানাশকের ব্যবহার এই পন্থার অংশ হতে পারে৷
সুতরাং যা প্রয়োজন তা হচ্ছে স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তা নিয়ে কম আলোচনা করা আর দুর্বল এবং অসুস্থদের আরো সমর্থন দেয়া৷