নূর হোসেন এখন কোথায়?
৯ মে ২০১৪তবে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের বিশ্বাস নূর হোসেন পালাতে পারেনি, দেশের ভেতরেই আছে৷ তদন্তকারীরা বলছেন, নূর হোসেনকে আটক করা গেলে সব কিছু পরিষ্কার হবে৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে, প্রভাবশালীদের বাঁচাতেই কি নূর হোসেনকে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে?
এদিকে নারায়ণগঞ্জ এলাকার র্যাব-১১'র খোল নলচে পাল্টে ফেলা হচ্ছে৷ নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রধানকে আগেই সরিয়ে দেয়া হয়৷ এখন উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে পুলিশের প্রায় সবাইকে বদলির প্রক্রিয়া চলছে৷ সাতজনকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্ত কমিটিও কাজ শুরু করেছে৷ কিন্তু আসল কাজের কিছুই হচ্ছে না৷ এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কাউকেই এখনো গ্রেফতার করা হয়নি বা গ্রেফতার করা যায়নি৷
এই মামলার প্রধান এজাহারভুক্ত আসামি আওয়ামী লীগ নেতা এবং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেন কোথায় তা নিয়ে র্যাব আর পুলিশের মধ্যে রয়েছে ভিন্ন মত৷ নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন মনে করেন নূর হোসেন এখনো দেশের মধ্যেই আছেন৷ তবে তার অবস্থান এখনো চিহ্নিত করা যায়নি৷
এদিকে তদন্তকারী সংস্থা সিআইডির ধারণা নূর হোসেন এখন আর দেশে নেই৷ একই ধারণা র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের৷ তিনি ধারণা করছেন নূর হোসেন সীমান্ত পথে দেশের বাইরে চলে গেছে৷
গত ২৭ এপ্রিল কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে র্যাব পরিচয়ে অপহরণ করা হয়৷ ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে অপহৃতদের লাশ ভেসে ওঠে৷ এরপর নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৬ কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাব-১১'র অধিনায়কসহ ৩ র্যাব কর্মকর্তা সাতজনকে অপহরণ ও হত্যা করেছে৷ আর এই টাকা দিয়েছে নজরুলের প্রতিপক্ষ নূর হোসেনসহ কয়েকজন৷ এরপর র্যাব-১১র অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম এম রানাকে র্যাব থেকে প্রত্যাহার করে চাকরি থেকে অবসরে পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতারের কোনো আইনি প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি৷ পুলিশ এপর্যন্ত এজাহারভুক্ত বা অভিযুক্ত কাউকেই গ্রেফতার করেনি বা করতে পারেনি৷ আসামিদের সঙ্গে সম্পর্কিত দু'একজন এবং তাদের স্ত্রীদের আটক করার মধ্যেই সাফল্য সীমাবদ্ধ৷
জানা গেছে ২৭ এপ্রিল অপহরণের দিন এবং ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জেই ছিলেন নূর হোসেন৷ এরপর তাকে আর দেখা যায়নি৷ তার বাড়িতে অভিযানের পর তার আত্মীয় স্বজনও গা ঢাকা দিয়েছেন৷ পুলিশ জানায়, ৩০ এপ্রিল সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর আসামিরা যাতে দেশের বাইরে পালাতে না পারে সেজন্য অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে আসামিদের নাম ঠিকানা এবং ছবি পাঠানো হয়৷ আর এই দেরির কারণে আসামিদের কেউ কেউ এর আগেই দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারে৷ জানা গেছে প্রধান আসামি নূর হোসেনের সহযোগী ইয়াসিন, রাজু ও হাসুও দেশের বাইরে পালিয়েছে৷
নিহত নজরুলের শ্বশুর শহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে জানান, অপহরণের দিন ২৭ এপ্রিলই তিনি মামলা করেছেন৷ তখনই যদি পুলিশ তৎপর হত তাহলে ৭ জনকে হত্যা করতে পারত না অপরাধীরা৷ আর তারপরও হত্যার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ পালাবার সুযোগ করে দিয়েছে৷ পুলিশ নূর হোসেনকে ২৭ ও ২৮ এপ্রিল হাতের কাছে পেয়েও আটক করেনি৷ আর ৩ মে তার বাড়িতে অভিযান চালানো হয়৷ তিনি প্রশ্ন করেন, আসামিদের কেন পলানোর সুযোগ করে দেয়া হল? শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘‘র্যাবের ৩ কর্মকর্তাকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতার করা হয়নি৷ তারাইতো টাকা নিয়ে অপহরণ ও হত্যা করেছে৷ র্যাবের অন্যান্য সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তা জানা যাবে৷ কিন্তু সেসব কিছুই করা হচ্ছে না৷'' তিনি মনে করেন বাইরে যতই ঢাকঢোল পেটানো হোক না কেন র্যাবের ৩ কর্মকর্তাসহ মূল আসামিদের বাঁচানোর তৎপরতা এখনো অব্যাহত আছে৷