1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মূর্খ, দায়িত্বজ্ঞানহীন মানুষ, এরাই সরকার গড়ে

১৬ জুলাই ২০২১

ভারতে কোভিড রুখতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। তবে নাগরিকের দোষও কিছু কম নয়।

https://p.dw.com/p/3wavm
Weltspiegel 14.05.2021 | Corona | Indien Bengaluru, Trauer
ছবি: Samuel Rajkumar/REUTERS

ছবিটা মনে পড়লে এখনো শরীর শিউরে ওঠে। দিল্লির রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। ঘরে ঘরে কান্নার রোল। শহরের অদূরে শয়ে শয়ে চিতা জ্বলছে খোলা আকাশের নীচে। অক্সিজেনের অভাবে, বেডের অভাবে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় পাগলের মতো অক্সিজেন বেড খুঁজছেন রোগীর আত্মীয়। যখন পাচ্ছেন, ততক্ষণে প্রয়োজন ফুরিয়েছে। শ্মশান, কবরস্থানের বাইরে দীর্ঘ লাইন। মরা পোড়াতে লেগে যাচ্ছে দুই-তিন দিন। আর তারই মধ্যে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। দৈনিক মৃত্যু পাল্লা দিচ্ছে তার সঙ্গে।

ভয় পেয়ে গিয়েছিল ভারতীয় রাজধানী। কিছুদিনের জন্য যেন মনে হয়েছিল, সভ্যতা থেমে যাবে এখানেই। দিল্লিতে আর প্রাণের স্পন্দন থাকবে না। একমাস আগের সেই ছবি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে। বাকি দেশের তুলনায় দিল্লিতে এখন করোনার সংক্রমণ অনেকটাই কম। কিন্তু আতঙ্ক এবং আশঙ্কা কোনোটাই কি কেটেছে?

আশঙ্কা যে কাটেনি, তা স্পষ্ট। তৃতীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আতঙ্ক কমতে কমতে শূন্যে পৌঁছে গেছে। কথায় বলে মানুষের স্মৃতি ক্ষণস্থায়ী। অতীত ভুলতে সময় লাগে না। কিন্তু তাই বলে এত দ্রুত? কয়েক সপ্তাহ আগে যে মানুষ নিজের জন্য, পরিবারের জন্য সামান্য অক্সিজেনের প্রয়োজনে ভিটে-মাটি বিক্রি করে দিচ্ছিল, সেই এখন মাস্কহীন, সামাজিক দূরত্বহীন জীবন কাটাচ্ছে পরম আহ্লাদে।

সম্প্রতি হিমাচলের পাহাড়ে গিয়ে সে কথাই মনে হলো। টেলিভিশনের স্ক্রিনও বিশ্বাস হচ্ছিল না। কোনো কোনো চ্যানেলে দেখানো হচ্ছিল কীভাবে সমস্ত নিয়ম উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ দিল্লির অদূরে একাধিক হিলস্টেশনে গিয়ে ফূর্তি করছেন। দেখে মনে হচ্ছিল, টেলিভিশনের বাড়াবাড়ি। এমন ভাবে ফ্রেম ধরা হচ্ছে, যে মনে হচ্ছে মানুষ গাদাগাদি করে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বাস্তব নিশ্চয় এমন নয়। প্রাণের মায়া নেই নাকি কারোর?

সম্বিত কাটল পাহাড় পৌঁছে। দিল্লি থেকে এক রাতের বাসে ধর্মশালা। দিল্লি এবং পাঞ্জাববাসীর অন্যতম প্রিয় পাহাড়। এমনিতে গরমকালে ধর্মশালা, মানালি, সিমলা-সহ একাধিক জায়গায় ভালোই ভিড় হয়। দিল্লির গরম থেকে বাঁচতে মানুষ পাহাড়ে সময় কাটান। কিন্তু এবার তো প্রতিবারের মতো নয়! লকডাউন উঠলেও কোভিড নিয়ম এখনো বহাল।

স্যমন্তক ঘোষ. ডয়চে ভেলে
স্যমন্তক ঘোষ. ডয়চে ভেলেছবি: privat

কী এসে যায় তাতে! হাজার হাজার মানুষ গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গেছেন পাহাড়ে। গাড়ির জ্যাম এতই, যে কার্যত গোটা পাহাড় অবরুদ্ধ। কারও মুখে মাস্ক নেই। গলা জড়াজড়ি করে এমন ভাবে ঘুরছেন, যেন মনে হচ্ছে মেলায় এসেছেন। প্রশ্ন করলে উত্তর আসছে, ''যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর কিছু হবে না।'' তৃতীয় ঢেউকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করছেন তারা। আর অন্যদিকে, ভয় পাচ্ছেন পাহাড়ের মানুষ। শহরের মানুষ পাহাড়ে ফূর্তি করে ফিরে যাবেন। কোভিড হলে প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে সময় লাগবে না। কিন্তু পাহাড়ে করোনা একবার ছড়িয়ে গেলে দাবানলের চেহারা নেবে। তখন কে দেখবে তাদের?

দেখার যে কেউ নেই, এতদিনে এ দেশে তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। করোনাকালে এ দেশে হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। করোনার ভয়াবহতা দেখেও পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন চালিয়ে গেছে নির্বাচন কমিশন। সময় সময় ২০-৩০ হাজার টাকা খরচ করে অক্সিজেনের সিলিন্ডার কিনেছে মধ্যবিত্ত। মৃত মানুষকে শ্মশানে অথবা কবরস্থানে নিয়ে যাওয়ার গাড়ি পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কার্যত মুখে কুলুপ এঁটে বসে থেকেছে সরকার। দেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে, স্বাস্থ্যব্যবস্থা কোন অথৈ জলে।

তৃতীয় ঢেউ এলে পরিস্থিতি যে আরো খারাপ হবে, তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাজ্য বা কেন্দ্র কোনো সরকারই আচমকা দেবদূতে পরিণত হবে না। তা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের এত সাহস হচ্ছে কী করে?

উত্তর জানা নেই। জানা নেই, কার ভরসায় আজ হঠাৎ তারা এই ভরসাফূর্তি উৎসবে নেমে পড়েছেন। শুধু একটি কথাই বলতে ইচ্ছে হয়। যে দেশের মানুষ মূর্খ, সে দেশের সরকারের থেকে অতিরিক্ত কিছু আশা করা গণ্ডমূর্খতা।

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য