মুসলিমাদের ফ্যাশন নিয়ে বিতর্ক
৮ মে ২০১৬ইটালির ডিজাইনার ডলচে অ্যান্ড গাবানা বিতর্কে অভ্যস্থ৷ মিলানের রানওয়েতে তারা যে কলেকশানই দেখান না কেন, তা নিয়ে বিতর্ক বাধবেই৷ যেমন গতবছর নানা ধরনের জামাকাপড় পরে, সাথে বাচ্চাদের নিয়ে মডেলরা ক্যাটওয়াকে নামেন৷ তারও আগে ডলচে আর গাবানা তাদের মডেলদের যে ধরনের প্রায়-নেই এমন সব গাউন পরিয়ে শো-তে মানিয়েছিলেন, তা নিয়েও কম উত্তাপের সৃষ্টি হয়নি৷
গত জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবে প্রদর্শিত একটি প্রদর্শিত একটি কলেকশান নিয়ে ফ্রন্সে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা আজ অবধি চলেছে৷ সেটা ছিল হিজাব আর আবাইয়ার প্রথম কলেকশান, রক্ষণশীল সৌদি মহিলারা যে ধরনের মাথা ঢাকার কাপড় আর পা ঢাকা ড্রেস পরেন৷ ডলচে অ্যান্ড গাবানা-র মতো অপরাপর পশ্চিমি ব্র্যান্ড, যেমন এইচঅ্যান্ডএম অথবা ইউনিক্লো মুসলিম মহিলাদের জন্য ফ্যাশন সৃষ্টি করছে ও বাজারে আনছে – বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম মহিলাদের জন্য৷
ব্যবসাটা লাভজনক বৈকি, কিন্তু ফ্রান্সের নারী অধিকার মন্ত্রী লরঁস রসিনিও তাকে ‘‘দায়িত্বহীন'' বলে অভিহিত করেছেন৷ এখন দেশ জুড়ে আলোচনা চলেছে, জনমত গঠনে ফ্যাশনের কি ভূমিকা থাকতে পারে বা থাকা উচিত৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ফ্যাশন সংক্রান্ত লেখিকা ভ্যানেসা ফ্রিডম্যান লিখেছেন, প্রশ্ন হলো: ফ্যাশনের দায়িত্বটা কী? বিভিন্ন সত্তাকে মেনে নিতে পারার ক্ষমতা বাড়ানো, নাকি স্বাধীনতার একটি নান্দনিক সংজ্ঞা দেওয়া?
নারীর দাসত্ব, নাকি বিক্রি বাড়ানোর সুযোগ?
নারী অধিকার মন্ত্রী বিএফএম টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘‘নারীর শরীরের ওপর সমাজের নিয়ন্ত্রণ'' নিয়েই বিরোধ৷ ফ্যাশন ব্র্যান্ডরা যখন ইসলামি বস্ত্রের বাজারে বিনিয়োগ করে, তখন তারা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে ও নারীর শরীরকে বন্দি করে রাখায় মদত দিচ্ছে৷ মন্ত্রীর মন্তব্যের পর ফ্রান্সের এক মহিলা দার্শনিক এমনকি সংশ্লিষ্ট ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলিকে বয়কট করার ডাক দিয়েছেন৷
ইতিপূর্বে ফ্রান্সে রক্ষণশীল মুসলিম মহিলাদের পরিধেয় বস্ত্র নিয়ে একাধিক আইন পাশ করা হয়েছে৷ ২০১১ সালে নিকাব ও বোরখার ব্যবহার সীমিত করা হয়৷ ২০১৪ সালে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত সরকারি স্কুলে হিজাব পরার উপর নিষেধ বজায় রাখে৷ ঠিক সেই সময়েই কিন্তু টমি হিলফিংগার বা অস্কার দ্য লা রেন্টে-র মতো বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম মহিলাদের জন্য রমজানের কলেকশান পেশ করতে শুরু করেন৷ অন্যরা তাদের ড্রেসগুলোর দৈর্ঘ কিংবা হাতা বাড়িয়ে সেগুলোকে রক্ষণশীল মুসলিম মহিলাদের পক্ষে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করে তোলার চেষ্টা করেছে৷
মজার কথা, স্বয়ং ভিভিয়েন ওয়েস্টউড-এর ‘পাঙ্ক' ফ্যাশনেরও নাকি খদ্দের আছে মধ্যপ্রাচ্যে৷ তারা নাকি ডিজাইনার লেবেল পরতে ভালোবাসেন, তাই ঢিলেঢালা আবাইয়ার নীচেই ভিভিয়েন ওয়েস্টউড পরেন৷ ওদিকে ব্রিটেনের মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার তাদের ‘বুর্কিনি' বেচছেন অনলাইনে; এইচঅ্যান্ডএম-এর বিজ্ঞাপনে এক মডেলকে হিজাব পরা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে৷
মুসলিম নারীদের জন্য বিশেষ ফ্যাশন নিয়ে এ লেখাটি আপনার কেমন লাগলো৷ জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷