মুম্বইয়ে ফ্লেমিঙ্গোর ঢল নেমেছিল
১১ আগস্ট ২০২০প্রজননের জন্য হাজার হাজার ফ্লেমিঙ্গো আসায় ভারতের মুম্বইয়ের খাঁড়িগুলোতে এবার বিশ্বের অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল৷
১৯৮০-র দশকে প্রথম মুম্বইতে ফ্লেমিঙ্গোরা আসা শুরু করে৷ এ বছরের শুরুতে তাদের সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি ছিল৷
করোনার কারণে ভারতে লকডাউন চলায় অনেকটা সময় ফ্লেমিঙ্গোর প্রজননস্থলে মানুষের আনাগোনা ছিল না৷
সে কারণে থানের জলাভূমিতে ইচ্ছেমতো আনন্দ করতে পেরেছে ফ্লেমিঙ্গোরা৷ খাবার হিসেবে ‘ক্রাস্টেইশন’ নামের কাঁকড়াজাতীয় প্রাণী, জলজ উদ্ভিদ আর নীল-সবুজ অ্যালজির টানে প্রতিবছর দক্ষিণ ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফ্লেমিঙ্গোরা মুম্বইতে আসে৷
রাহুল খোট বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটিতে কাজ করেন৷ তিনি একটি দশ বছর মেয়াদি প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গত দুই বছর ধরে প্রতি মাসে থানের খাঁড়িগুলোতে গিয়ে আমরা ফ্লেমিঙ্গোদের সংখ্যা গুনছি৷ পূর্ব, পশ্চিম দুই তীরেই আমরা যাই৷ ২০১৯ সালের মার্চ মাসে আমরা প্রায় এক লাখ ৩৪ হাজার ফ্লেমিঙ্গো গুনেছিলাম৷ মুম্বইতে ওটাই ছিল ফ্লেমিঙ্গোদের সর্বোচ্চ সংখ্যা৷’’
মুম্বইয়ের শহুরে জীবন দেখলে হয়ত প্রকৃতি-বিরোধী মনে হতে পারে, কিন্তু গুজরাটের লবণাক্ত ভূমির পর ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ফ্লেমিঙ্গোর দেখা পাওয়া যায় সেখানে৷
ফ্লেমিঙ্গোরা সেই সব প্রজাতির একটি, যাদের সংখ্যা আসলে বেড়েছে৷
পক্ষিবিজ্ঞানীরা এই অবস্থাকে ‘এজ নেচার’ বলে থাকেন, যেখানে মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে কখনও কখনও বন্যপ্রাণীদের আসলে লাভ হয়ে থাকে৷
থানের খাঁড়িগুলোতে মানুষের হস্তক্ষেপ সাধারণত অনেক বেশি হয়ে থাকে৷ কারণ শহরের একটি বড় অংশের গৃহস্থালী ও শিল্পের বর্জ্য সেখানে ফেলা হয়৷ এই বর্জ্যের কারণে যে অ্যালজি গজিয়ে ওঠে তা ফ্লেমিঙ্গোদের খুব প্রিয়৷
পক্ষিবিজ্ঞানী সঞ্জয় মঙ্গা শুরু থেকেই ফ্লেমিঙ্গোদের আসা-যাওয়া খেয়াল করছেন৷ তিনি বলছেন, যদিও বর্তমানে ফ্লেমিঙ্গোদের জন্য ভালো পরিবেশ বিরাজ করছে, ভবিষ্যতে তেমনটা না-ও থাকতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘মাহুল এলাকার তেল শোধনাগারগুলো থেকে গরম পানি বের হয়৷ মুম্বইয়ে ফ্লেমিঙ্গোদের সংখ্যা বাড়ার এটি একটি কারণ৷ আমি সাধারণত বলে থাকি যে, থানের খাঁড়িগুলো আসলে ফ্লেমিঙ্গোদের জন্য ‘ঠিকভাবে দূষিত'৷ সেখানকার পানি এমন উষ্ণ থাকে, যা ফ্লেমিঙ্গোরা খুব পছন্দ করে৷ একই কারণে অন্য পাখিরাও সেখানে ভিড় করে৷’’
লকডাউনের কারণে মানুষের আনাগোনা না থাকায় পাখিরা তাদের আবাসে নিজের মতো করে থাকতে পেরেছে৷ কিন্তু যে হারে দূষণ বাড়ছে, তাতে হয়ত একটা সময় আসবে যখন এই দূষণই ফ্লেমিঙ্গোদের আবাস ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠবে৷
পাখিদের এই বিশাল সংখ্যা সেই সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন প্রকৃতি আসলে প্রকৃতির মতো ছিল৷ বন্যপ্রাণীদের মন বুঝে যদি তাদের আবাস রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতেও এমন সংখ্যায় ফ্লেমিঙ্গোরা আসতে থাকবে৷
ইশা পল/জেডএইচ